|
|
|
|
প্রীতির ডেরায় বদলা নিয়ে গেল নাইটরা |
সব্যসাচী সরকার • মোহালি |
ক্রিকেটে টিম চালাতে গেলে বিভ্রান্তি বড় বিপজ্জনক বস্তু। অনেকটা কাঁঠালের আঠার মতো। এক বার ধরলে আর ছাড়ে না। আর তার প্রভাব অবধারিত এসে পড়ে খেলায়।
প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে বিভ্রান্তি যে পর্যায়েই যাক, দলের ভেতরে চাপা ক্ষোভ বা ফিসফিসানি যেখানেই থাকুক না কেন, মোহালির স্টেডিয়ামে অন্তত তার প্রতিফলনটুকু নাইটদের পারফরম্যান্সে অদৃশ্য। টিম মালিককে তিন দিন আগে হোম ম্যাচে মুখ চুন করে ইডেন থেকে বেরোতে হয়েছিল। আর আজ প্রীতি জিন্টার মহল্লায় ‘দিল সে’-ই মাঠ ছাড়লেন শাহরুখ। নায়িকার গালে চুমু, জার্সি বদলে কিংসদের জার্সি পরে নেওয়া, একসঙ্গে মাঠ প্রদক্ষিণ, সবই তো রইল। অবশেষে বাদশার মুখে ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত’ মার্কা হাসি। হবেই তো। তাঁর টিম যে এখন পয়েন্ট তালিকায় থার্ড বয়।
জয়ের দৌড় |
‘কিংসদের কিস্তিমাত’ পালায় ঘাতক গম্ভীর। এই ম্যাচের আগে পাঁচ ম্যাচে ১১৩ রান। বেঙ্গালুরুতে আরসিবি ম্যাচে ৬৪ বাদ দিলে একার শাসনে ম্যাচ টেনে দেওয়ার গম্ভীরোচিত উদাহরণ এ বার আইপিএলে ছিল না। মোহালিতে প্লট অন্য রকম। নাইট অধিনায়কের (৪৪ বলে ৬৬ নট আউট) নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসনে ম্যাচ একেবারে একপেশে, হাসতে হাসতে ইডেনের হারের বদলা ও পকেটে দু’পয়েন্ট। টিমে ফেরা ম্যাকালাম যথারীতি ভাল শুরু করেও ‘এলাম, গেলাম’, বিসলা আজ ফেল। উল্টো দিকে গম্ভীর খেলে গেলেন ‘সাইলেন্ট কিলার’-এর মতো, ঠিক যে ভাবে খেলা উচিত। এর পর ম্যাচের সেরা বাছার জন্য আর কোনও বিশেষজ্ঞ প্যানেল থাকার দরকার পড়ে না। শেষ ওভারের নাটক নেই, তার বদলে মাঠে থাকল অন্য নাটক। নাইটদের ব্যাটিংয়ের শেষ দিকে কালো কোট পরা জনৈক দর্শক পিচে ঢুকে লিফলেট ছড়িয়ে গ্রেফতার! ম্যাচের কথায় এলে একটা ভোলবদল তো নাইটদের ছিলই, আর তা ধরা পড়ছিল প্রত্যয়ী ভঙ্গিতে। একটা সংঘবদ্ধ তাগিদে। যে যার নিজের সেরাটা দেওয়ার নিরুচ্চার সংকল্পে আর সবচেয়ে জরুরি ডাগআউটের প্রাণবন্ত মেজাজে। কোচ বনাম ক্যাপ্টেন বিতর্ক অন্তত এ বার তৈরি হয়নি, দলকে ছাপিয়ে ব্যক্তির কর্তৃত্ব নিয়ে টেনশন এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে সে ভাবে আসেনি। কথা বলা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে হতে ম্যানেজমেন্টের তৎপরতায় আপাতত ধামাচাপা।
ক্ষমতার হাতবদল তো গত চার বছরে টিম মালিক কম করেননি। সে সব ইতিহাস নিষ্প্রয়োজন। এই আইপিএলে শাহরুখের নাইটরা কত দূর এগোবে, কোয়ালিফায়ার্স পর্যন্ত পৌঁছবে কি না জানতে মে-র মাঝামাঝি হয়ে যাবে। তবে ট্রফি আসুক না আসুক, টিম মালিকের মুখে হাসি ফেরানোর একটা ঐকান্তিক চেষ্টা মোহালিতে ছিলই।
আর সেই চেষ্টায় থাকল ভাগ্যের সামান্য সাহায্য। না হলে কেন তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য ছাড়া শন মার্শকে বিতর্কিত আউট দেবেন দক্ষিণ আফ্রিকার আম্পায়ার জোহান ক্লুটি? বল পরিষ্কার মাটি ছুঁয়ে কিপারের হাতে যায়। |
|
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব: ১২৪-৭ (২০ ওভারে)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১২৭-২ (১৬.৩ ওভারে)
বিস্তারিত স্কোর |
|
|
তবু ক্লুটি তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্যই নিলেন না। যা নিয়ে গিলক্রিস্ট বলছেন, “শন কিপারকে জিগ্যেস করেছিল। ও বলেছিল ঠিকঠাক নিয়েছে। টিভি রিপ্লে দেখে আমি অন্তত ওই আউট নিয়ে নিশ্চিত নই।” ভাগ্য আজ প্রায়ই বিরোধিতা করল পঞ্জাবের। না হলে মোক্ষম সময়ে রান নিতে গিয়ে ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট লাগে গিলক্রিস্টের? এ বারের আইপিএলে কিছুই করেননি, পঞ্জাব অধিনায়ককে নিয়ে লেখা হয়ে গিয়েছে বুড়ো হাড়ে ভেল্কি আর চলছে না। টস জিতে ব্যাটিং, এ দিনই পুরনো গিলির ঝলক পাওয়া যাচ্ছিল। মারাকাটারি স্কোয়ার কাট, মিড উইকেটের উপর দিয়ে নিয়ন্ত্রিত পুল। গিলি যখন নাইট বোলিং নিয়ে সবে মাঠে ‘ইলি, বিলি’ কাটতে শুরু করেছেন, রান নিতে গিয়ে পেশিতে টান। ওই যে বেরোলেন, টিমটার সুরটাই কেটে গেল। হারিয়ে গেল ছন্দ। যখন ফিরলেন, নাইটদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ম্যাচের লাগাম পকেটে রেখে দিয়েছে। গোটা পঞ্চাশ বল খেলার সুযোগ পেলে স্রেফ একার শাসনে ম্যাচ এখনও বের করতে পারেন কি না, তারই পরীক্ষায় এ দিন বসেছিলেন গিলক্রিস্ট। এমন কপাল যে হ্যামস্ট্রিংয়ের জন্য পরীক্ষাটাই মাঝপথে ভেস্তে গেল। |
ম্যাচের পর মালিকদের জার্সি বদল। |
বোলিংয়ে শৃঙ্খলা থাকলে একটা টিম কী কী করতে পারে, তার হাতেগরম নমুনা মোহালিতে নাইটদের বোলিং। মাত্র ১২৪-এ সে জন্য বেঁধে ফেলা গেল কিংসদের। নাইটদের এ বারের দৌড়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বোধহয় সুলতান অব সুইংয়ের গুরুকুলে বোলারদের দীক্ষা। ম্যাচ হারলেও প্রতি ম্যাচে কিন্তু দেড়শো পেরোতে হিমসিম খাচ্ছে বিপক্ষ। এটাই তো বোলিং কোচের কাছ থেকে প্রত্যাশিত। একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি তো এ জন্যই লাখ লাখ ডলার খরচ করে চাকরি দেয়। ওয়াসিম আক্রম এ বারও আইপিএলে একশোয় একশো। গিলক্রিস্টের টিম তো নাইটদের বোলিং ফাঁসে নিজেদের মাঠেই বারবার আটকে গেল। ব্রেট লি-কে ফিরিয়ে আনার চালটা লেগে গেল, চোট ফেরত বালাজি যথারীতি অনবদ্য। প্রবল সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেও জাতীয় দলে নিয়মিত হওয়া হয়নি, আইপিএলে গত বারে এক ওভারের ফাঁড়া রয়েছে। তবু এ বারে বালাজি অনেক শাণিত, অনেক পরিণত। শেষ ওভারের পরীক্ষায় অবশ্য এখনও বসতে হয়নি।
ছয় ম্যাচে তিন জয়, তিন হার। নাইটদের ঘোড়া আবার মূল ট্র্যাকে, গতি বাড়ানোর সম্ভাবনা-সহ। গত চার বার যে শিরস্ত্রাণ থেকে ফুলকি উঠেও হারিয়ে গিয়েছে, এ বার সেখান থেকে আগুন বেরনোর স্বপ্ন। ‘করব, লড়ব, জিতব রে’ আবার বাজছে। শুধু ধরে রাখতে পারলে হয়! |
|
|
|
|
|