|
|
|
|
মনোরঞ্জনের উচ্চশিক্ষায় বাধা দারিদ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
ছোট্ট এক-চিলতে ঘর। আগে খড়ের ছাউনি ছিল। এখন অ্যাসবেসটসের। তা-ও বৃষ্টি হলে জল পড়ে। চার দিকেই দারিদ্রের ছাপ। বাবার ছোটখাটো পানগুমটিই সংসারে আয়ের একমাত্র উৎস। এত দারিদ্রের মধ্যেও ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল খড়্গপুরের ভাটাপুকুর এলাকার মনোরঞ্জন বেরা। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকেও ভাল রেজাল্ট হয়েছিল। মেদিনীপুর কলেজ থেকে এ বারই কেমিস্ট্রি অনার্সে পার্ট-থ্রি পরীক্ষা দিয়েছেন। ভাল ফলেরই আশা করছেন। তার আগেই অবশ্য সর্বভারতীয় জয়েন্ট অ্যাডমিশন টেস্টে (জ্যাম) ৫০ র্যাঙ্ক করেছেন। যা জেলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীমহলেও তরঙ্গ তুলেছে। আইআইটি থেকে এমএসসি করার ইচ্ছে ছিল। তাই ‘জ্যাম’ পরীক্ষায় বসেছিলেন মনোরঞ্জন। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা হয়। গত ১০ এপ্রিল ফল বেরিয়েছে। মনোরঞ্জনের কথায়, “পরীক্ষা ভাল হয়েছিল। তাই ভাল ফল হবে জানতাম। কিন্তু এত ভাল র্যাঙ্ক হবে ভাবতে পারিনি।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
ছেলের এই কৃতিত্বে উচ্ছ্বসিত মনোরঞ্জনের বাবা-মা রত্নাকরবাবু, কবিতাদেবীও। কিন্তু তাঁদের উচ্ছ্বাস দেখানোর সুযোগই বা কতটুকু! আনন্দের মধ্যেও যে দেখা দিয়েছে সংশয়। ছেলের পড়াশোনার খরচ আসবে কোথা থেকে? এই ভাবনাই এখন কুরেকুরে খাচ্ছে মনোরঞ্জনের বাবা-মাকে। রত্নাকরবাবু বলেন, “ইন্দা বয়েজ স্কুলে উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যন্ত কোনও রকমে টেনেটুনে চালিয়েছি। কিন্তু ছেলেকে কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না। অবস্থার কথা জেনে উজ্জ্বল সেনগুপ্ত নামে এক সহৃদয় ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। কলেজের পড়াশোনার খরচ উনিই দেন।” মা কবিতাদেবীর কথায়, “একমাত্র ছেলে। তাই কষ্ট করেও ওকে পড়াশোনা করিয়েছি। এক সময়ে ঘরে গরু রেখে দুধ বিক্রি করেও সংসার চালিয়েছি। কলেজের খরচ তো এক ভদ্রলোক দিয়েছেন। জানি না, এ বার কী হবে।”
সংশয়ে রয়েছেন মনোরঞ্জনও। তাঁর কথায়, “জানি না কী হবে। তবে এত দিন শিক্ষকরাও আমাকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। ওঁদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আসতেই পারতাম না।” তাঁর কথায়, “মা-বাবাও সব সময়ে উৎসাহ দিয়েছেন। নিজেরা কষ্টে থেকেও আমাকে সেই কষ্ট বুঝতে না দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।” বড় হয়ে কী হতে চান? প্রশ্ন শুনে খড়্গপুরের এই মেধাবী ছাত্র বলেন, “আপাতত আইআইটি থেকে এমএসসি-টা করতে চাই। কী হব, কী করব, সে ভাবে কিছু ভাবিনি। তবে শিক্ষকতার ইচ্ছে রয়েছে।” |
|
|
|
|
|