|
|
|
|
দূষণে নাভিশ্বাস, মাছ মরছে চালতিয়া বিলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
প্রায় ৩০০ বিঘা এলাকা জুড়ে চালতিয়া বিলের মাছ মরছে। বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু দিন ধরেই জানাচ্ছেন, বহরমপুর শহরের দূষিত জলই ওই বিলে এসে পড়ছে। তার ফলেই ক্রমাগত মাছ মরছে ওই জলায়। স্থানীয় ভাকুড়ি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকেও ওই অভিযোগ তোলা হয়েছে। বহরমপুর পুরসভা এলাকার দূষিত জল অশোধিত অবস্থায় চালতিয়া বিলের জলে এসে মিশে যাওয়ার কারণে ওই ঘটনা ঘটছে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।
সপ্তাহ দুয়েক ধরে ওই বিলে প্রতি দিন বহু মাছ ভেসে উঠছে। এই বিলের উপর নির্ভর করছে ভাকুড়ি মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যদের রুজি রোজগার। এ ছাড়াও বিল লাগোয়া আরও প্রায় ৫০টি পরিবারের জীবন জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে বিলের উপরে। ওই বিষয়ে প্রতিকার দাবি করে সমিতির পক্ষ থেকে মৎস্য প্রতিমন্ত্রী, বহরমপুর পুরসভার কাছে গত ২ এপ্রিল লিখিত আবেদন করা হয়েছে। |
|
— নিজস্ব চিত্র। |
মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “সমস্যাটি দীর্ঘ দিনের। ওই বিষয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আধিকারিককে বলা হবে।” মৎস্য দফতরের কর্তা তরুণ গিরি এবং বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য মৎস্যজীবীদের অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন। তাঁরা দু’ জনেই বলেন, “চালতিয়া বিলে ফেলার আগে বহরমপুর শহরের বর্জ্য পদার্থ শোধন করার ব্যবস্থা নেই। তবে শহরের পরিত্যক্ত জল শোধন করে বিলে ফেলার জন্য জাপান সরকারের সহযোগিতায় একটি প্রকল্প রূপায়ণের মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ চলছে। প্রস্তাবিত ওই প্রকল্প রূপায়িত হলে জল দূষণ কমবে। কেবল মাছই নয়, বহরমপুর ঘেঁষা ওই বিশাল জলাশয়ে পদ্মপাতা ও পদ্মফুলও ক্রমেই উধাও হয়ে যাচ্ছে চালতিয়া বিল থেকে। পদ্মা তুলে বেঁচে রয়েছেন অন্তত ৫০টি পরিবার। তাঁদের রোজগারও এখন বন্ধ।
ওই মৎস্যজীবী সমিতির সম্পাদক অমিয় হালদার বলেন, “একটা সময় ওই বিলের জলে শ্যাওলা জন্মাত। তার ফলে পাবদা, চিংড়ি, সিঙ্গি, মাগুর মত সাবেকি মাছের চাষও হত। এখন আর শ্যাওলা জন্মায় না। ফলে ওই সব সাবেকি মাছও বিলুপ্তির পথে।”
প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাৎসরিক খাজনার বিনিমেয়ে ওই জলাশয়ে মাছ চাষ করে মৎস্যজীবীদের ওই স্থানীয় সমবায় সমিতি। প্রায় দু’ কিলোমিটার দূরে ওই জলাশয়ের পশ্চিমে রয়েছে ভাগীরথী ও প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে রয়েছে ভাণ্ডারদহ বিল। সমিতির ম্যানেজার দিলীপ হালদার বলেন, “ইংরেজ আমলে ওই চালতিয়া বিলের সঙ্গে ভাগীরথী ও ভাণ্ডারদহ সংযুক্ত ছিল প্রায় ৩০-৪০ ফুট চওড়া নালার সাহায্যে। ওই নালা দিয়ে আমরাই কৈশোরে নৌকা চলাচল করতে দেখেছি। দুই দিকের সেই নালা বুজিয়ে গড়ে উঠেছে বসত বাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। ফলে আবদ্ধ চালতিয়া বিলে জমছে বহরমপুর শহরের বর্জ্য পদার্থে ভরা দূষিত জল।
বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, “জবরদখল মুক্ত করে দেওয়ার জন্য জেলাশাসকের কাছে লিখিত অনুরোধ করেছি। জবরদখল মুক্ত হলে একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে ফের নালা খনন করে ভাণ্ডারদহের সঙ্গে চালতিয়ার সংযোগ ঘটানো হবে।” |
|
|
|
|
|