|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু...
|
কী রাজ্য, কী কেন্দ্র, এদের কপালে কুম্ভীরাশ্রু |
আশৈশব ঘৃণার বীজ বপন করলে ফল ফলবেই’ (১৩-৩) অশোক মিত্রের লেখাটি পড়ে আমার কিছু ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা না-বলে পারলাম না।
আমি এমন একটি জায়গায় দীর্ঘ দিন কাজ করি, যেখানে প্রতিদিনই কিছু-না-কিছু সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা জানতে পারি। কার্য উপলক্ষে আমি একটি আদালতের টাইপিস্টের (সরকারি কর্মচারী নয়, গাছতলার টাইপিস্ট) কাজ করি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মানুষ সমস্যায় পড়ে তাঁদের অভাব-অভিযোগগুলি নিয়ে আমার কাছে টাইপ করতে আসেন। সেই সুবাদে অনেক অজানা কথা জানতে পারি। কখনও কখনও মনে হয়, সব কথাই ঠিক নয়, আবার কখনও কখনও মনে হয়, ঘটনার কিছু সত্যতা/বাস্তবতা আছে। মাননীয় লেখক সমাজের পিছিয়ে-পড়া মানুষদের কথা বলেছেন। বলেছেন, মাওবাদীদের কথা। মধ্যবিত্ত সমাজের কথা। শোষক-শোষিতের কথা। এই পড়লে মন ভারাক্রান্ত হয়। কিন্তু লেখক সমস্ত কিছু উল্লেখ করলেও এই সমস্ত বিষয়ের মূলে সরকারের (কী কেন্দ্র, কী রাজ্য) ও সমাজ ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক দলগুলির উদাসীনতার কথা সঠিক ভাবে উল্লেখ করেননি বলেই আমার মনে হয়। এবং এর বাইরেও অনেক কিছু আছে যা তিনি উল্লেখ করলেও স্পষ্ট ভাবে লেখেননি। |
|
১৯৯১ সালে আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় সাইকেল করে বাংলা, বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ ঘুরতে বেরোই। সেই সময় বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষের অঙ্গে শুধু লজ্জা নিবারণের অংশটুকু বাদ দিয়ে আর কিছুই দেখিনি। সেখান থেকেই বোধগম্য হয় তাদের অন্নসংস্থানের অবস্থাটা কী! সেই সমস্ত মানুষের কাছে সরকারের কোনও সহযোগিতার হাত পৌঁছেছিল কি? পৌঁছালে, হয়তো ওই অবস্থা আমাদের দেখতে হত না। এর বহু বছর পরে, ২০০৯-এ একটি পর্বতারোহণ সংস্থার উদ্যোগে ম্যাসাঞ্জোরে ‘পর্বতারোহণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য’-র উপর একটি শিক্ষামূলক শিবির অনুষ্ঠিত হয়। আমিও উক্ত শিবিরে উপস্থিত থাকি। শিবিরে বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি গ্রাম্য বিষয়ের উপরও একটি সমীক্ষা হয়। সেই সমীক্ষার জন্য আমরা ম্যাসাঞ্জোরের বাঁধ-লাগোয়া ঝাঁঝাপড়া গ্রামে যাই। ওই গ্রামে সেই সময় মাত্র বত্রিশটি হতদরিদ্র পরিবারের বাস। কিন্তু তাঁরা বি পি এল রেশন কার্ডের অধিকারী নন কেন, তা বোধগম্য হয়নি। গ্রামের মানুষগুলোর সারা বছরের উপার্জন বলতে বরবটি (স্থানীয় ভাষায় ‘বোরো’) ও অড়হড় কড়াইয়ের চাষ। সেই তাদের ভরসা। এর বাইরে পাহাড়-জঙ্গলের কিছু জ্বালানি কাঠ বিক্রি করে দিন চলে। শীতের ক’টা দিন মন্দের ভাল। কারণ, সেই সময়ে বহু মানুষ সেখানে পিকনিক করতে ও বেড়াতে যায়। ফলে, তাদের ফাইফরমাস খেটে কিছু উপার্জন হয়। তা ছাড়া, তাদের উচ্ছিষ্ট কিছু খাবারও মেলে। ওই শীতের সময়টা এদের সর্বসাকুল্যে দৈনিক গড় আয় ৬০/৭০ টাকা বা হয়তো একটু বেশি। বছরের অন্য সময়টা আরও করুণ। উক্ত গ্রামের বত্রিশটি হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে আবার ৪টি পরিবারের লোকজন ঘরোয়া/স্থানীয় ভাবে গুড় দিয়ে ও স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে মদ তৈরি করে এবং বিক্রি করে। যা ওই বত্রিশটি পরিবারের অনেকেই কমবেশি খায়, ফলে সংকট আরও বাড়ে। কাছেপিঠে কোনও সরকারি স্কুল নেই। কিছুটা দূরে যা-ও বা আছে, তা না থাকারই শামিল। লেখাপড়া হয় না বললেই চলে। এক দিকে অশিক্ষা (গ্রামে একজনও মাধ্যমিক-উত্তীর্ণ নেই) অপর দিকে প্রবল জনসংখ্যা বৃদ্ধি। বহিরাগত কয়েক জন কোয়াক ডাক্তারই এদের ভরসা। একটু বাড়াবাড়ি হলে ভগবান ছাড়া গতি নেই। কারণ, ৪/৫ কিমি দূরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও কোনও ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালও তথৈবচ। লোকে খাওয়ার পয়সাই জোগাড় করতে পারে না, আবার ওষুধ! দেশ স্বাধীন হওয়ার ছয় দশক পেরোনোর পরেও কুম্ভিরাশ্রু ছাড়া এদের কপালে আর কিছুই নেই।
এর পাশাপাশি দেখেছি, এক শ্রেণির মানুষের হাতে অগাধ সাদা ও কালো টাকা এবং তদুপরি বিপুল সম্পত্তি। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে সীমাহীন দুর্নীতি। দেখেছি, বিভিন্ন সরকারি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। দীর্ঘ দিন ধরে দেখেছি, নেতা-নেত্রীদের স্নেহভাজন হলেই অযোগ্য ব্যক্তিদের যোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের বঞ্চনা।
দেখেছি, বাম জমানায় বামপন্থী না-হওয়ার জন্য চাষির জমিতে চাষ বন্ধ হয়ে যেতে। দেখেছি, শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বামপন্থী না-হওয়ার কারণে প্রাপ্য চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে। দেখেছি, বিদ্যালয়ে পড়ানোর ক্ষেত্রে কোনও যোগ্যতা না-থাকা সত্ত্বেও প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুলে (এখন বিভিন্ন কাউন্সিল হয়েছে) যোগ্য প্রার্থীদের পরিবর্তে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি।
দেখেছি, শুধু মাত্র দলীয় কর্মী না-হওয়ার জন্য সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে। দেখেছি, কোনও চাষি বা জমির মালিককে স্থানীয় দলের আনুগত্য না-স্বীকার করার জন্য শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হতে বা সম্পত্তি বেহাত হতে। দেখেছি, এ ভাবে সর্বত্র ঘৃণার বীজ বপন হতে। তাই আজ বঞ্চিত, সমস্যা-জর্জরিত, মানুষেরা বে-পরোয়া হয়ে উঠেছে। এর ফলে, প্রতিনিয়ত খুন, জখম, অশান্তি ও আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
এ সব দেখে আমরা এবং সরকার একটু নড়েচড়ে বসছি। সুপরিকল্পিত ভাবে মাওবাদীদের দিকে আঙুল তুলছি। আঙুল তুলছি রাজনৈতিক নেতাদের দিকে, আঙুল তুলছি যারাই প্রতিবাদ করছে তাদের সমাজবিরোধী অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের দিকে। আঙুল তুলছি এক সময় যারা সব দিক থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অত্যাচার সহ্য করেছে এবং এখনও সহ্য করে যাচ্ছে, তাদের দিকে।
আমরা মুখ লুকোতে চাইছি আমাদের সমস্ত অপকর্ম ঢাকার জন্য ও চাপা দেওয়ার জন্য। মানুষ কিন্তু সমস্ত কিছু লক্ষ করছে। |
মলয় মণ্ডল। খলিসানি, চন্দননগর, হুগলি
|
‘সেরিব্রাল পলসি’ কিন্তু রোগ নয় |
আনন্দবাজারে ‘আংশিক পক্ষাঘাত, নামিয়ে দিল বিমান’ (২০-২) শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। জিজা ঘোষ যদি রোগিণী হন, তবে বেসরকারি বিমানের ওই পাইলটটিও রোগী। ১২ বছর বয়সের বুদ্ধিমতী, সুন্দরী, বিনয়ী নিখুঁত শরীরের সেরিব্রাল পলসি মেয়ের বাবা হিসাবে বলতে পারি, গত ১১ বছর ধরে সেরিব্রাল পলসি নিয়ে চর্চা করে এটুকু বুঝেছি যে, এটা কোনও রোগ নয়। দুর্ঘটনায় হাত, পা, চোখ, কান বা অন্য কোনও বহিরঙ্গের ক্ষতি হলে যেমন স্বাভাবিক জীবনে অসুবিধা হয়, তেমনই ‘হেড’ বা ‘ব্রেন’ ইনজুরি-জনিত কারণে সেরিব্রাল পলসিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের শারীরিক বা মানসিক ব্যবহারে কিছু খুঁত থেকে যায়। তবে এক-এক জনের ক্ষেত্রে এর পরিমাপ এক-এক রকম হয়। আমার পরিচিতা না-হলেও অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, জিজা ঘোষ ইচ্ছা বা চেষ্টা করলে বা সুযোগ পেলে পাইলটও হতে পারতেন। শারীরিক বা মানসিক অবস্থা তাঁর বাধা হতে পারত না।
ভেলোরে এক সুখ্যাত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে আমার মেয়ের ‘রিহ্যাবিলিটেশন’ করাতে যাওয়ার সূত্রে অনেক সেরিব্রাল পলসি ছেলেমেয়ের মা-বাবার সঙ্গে পরিচয় হয়। অনেকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। রাস্তাঘাটে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে এক শ্রেণির মানুষকে দেখি, আমাদের বাচ্চাদের প্রতি অতি উৎসুক হয়ে তাদেরই সামনে অবাঞ্ছিত প্রশ্ন করেন। জানতে চান, কী কী পারে না, কথা বলতে পারে কি না বা নিজে হাতে খেতে পারে কি না, ইত্যাদি। এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদেরও ক্লাস সেভেনে পড়া অনর্গল বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি বলতে পারা আমার মেয়েরই সামনে।
আমার মেয়ে সাহায্য ছাড়া একটুকুও দাঁড়াতে, চলতে, উঠে বসতে পারে না। জিজা ঘোষ হয়তো এমনই আংশিক কিছু কাজ ব্যবহারিক জীবনে পারেন না। কিন্তু এঁরা এবং পৃথিবীতে এমন সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত মানুষ আছেন যাঁরা এমনও কিছু করতে পারেন যা ওই পাইলট মহাশয়, আমি বা আপনাদের মতো ‘সুস্থ সবল’রা পারি না। কারিগরী শিক্ষায় সুশিক্ষিত ওই পাইলট মহাশয়ের ব্যবহার আসলে আমাদের ‘আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত’ সমাজের চেহারার প্রকাশ মাত্র।
সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আবেদন বাস, রেল, বিমান সেবা-সহ অন্যান্য পাবলিক প্লেসে কর্মরত কর্মীদের এ ব্যাপারে শিক্ষণ ও সচেতনতা প্রদান করুন। বিশিষ্ট মানুষদের প্রতি আবেদন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কিছু করুন। |
শ্রীমন্ত মুখোপাধ্যায়। দানেশ শেখ লেন, হাওড়া-৭১১১০৯
|
মা নিষাদ |
শোভন তরফদারের ‘মা নিষাদ’ (উৎসব, ২৫-২) রচনাটির প্রসঙ্গে এই পত্র। লেখাটি যে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর এবং পরম উপভোগ্য সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু রচনাটির মধ্যে একটি তথ্যগত ভ্রান্তির প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ‘মা নিষাদ’ শব্দ দুটি মহর্ষি বাল্মীকি রচিত শ্লোকটির খণ্ডাংশ মাত্র। সম্পূর্ণ লেখাটি হল
মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধাঃ কামনোহিতম ¶
একদিন অরুণোদয়কালে মহর্ষি বাল্মীকি তমসা নদীর তীরে ভ্রমণ করছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন এক ব্যাধ বৃক্ষশাখায় উপবিষ্ট কামমোহিত ক্রৌঞ্চমিথুনের মধ্যে ক্রৌঞ্চকে শরবিদ্ধ করে ভূপতিত করল। সেই দৃশ্য দেখেই শোকাহত বাল্মীকির মুখ থেকে উপরোক্ত শ্লোকটি নিঃসৃত হয়েছিল। বাল্মীকির রামায়ণে উড্ডীয়মান কামমোহিত ক্রৌঞ্চমিথুনের উল্লেখ নেই।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ থেকে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দেওয়া হল
ক্রৌঞ্চ-ক্রৌঞ্চী বসিয়া আছিল বৃক্ষডালে।
বিন্ধিলেক ব্যাধ পক্ষী শৃঙ্গারের কালে ¶
কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীও ‘বাল্মীকির কবিত্বলাভ’ কবিতায় লিখেছেন
শাখী-শাখে রসসুখে ক্রৌঞ্চক্রৌঞ্চী মুখেমুখে
কতই সোহাগ করে বসি দু’জনায়।
হানিল শবরে বাণ নাশিলে ক্রৌঞ্চের প্রাণ
রুধিরে আপ্লুত পাখা ধরণী লুটায়।
অর্থাৎ, ক্রৌঞ্চ দম্পতি উড্ডীয়মান ছিল না। |
রঘুমণি ভট্টাচার্য। খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
|
নোংরা! |
|
কলকাতার ধর্মতলা এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবৎ কলকাতা ট্রাম কোম্পানির আশপাশের এলাকা ভয়ঙ্কর রকম নোংরা। মলমূত্রের গন্ধ তো বটেই, ট্রাম কোম্পানির বাসগুলো যখন যাতায়াত করে তখন সংশ্লিষ্ট এলাকাটি ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গে সরকার বদল হয়েছে। তাই এলাকাটির পরিবেশ বদলে একটু নতুন চেহারায় দেখতে ইচ্ছে করছে। |
তরুণকুমার সেন। কলকাতা-১২ |
|
|
|
|
|