১৩ জনকে মুক্তি দেবে রাজ্য |
জনতার আদালতে বিচার হবে হিকাকার, জানাল মাওবাদীরা |
বিজেডি বিধায়ক ঝিনা হিকাকার মুক্তি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। তাঁর মুক্তির ব্যাপারে মাওবাদীদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হল আজ বিকেল পাঁচটায়। তার পরেই অন্ধ্র-ওড়িশা সীমানা কমিটির এক নেতা সংবাদমাধ্যমে একটি বার্তায় জানিয়েছেন, ওড়িশা সরকারের উপর আর তাঁরা আস্থা রাখতে পারছেন না। জেলবন্দি মাওবাদীদের ছাড়ার ব্যাপারটিও সরকার গুরত্ব দিয়ে দেখছে না। তাই জনতার আদালতেই এ বার হিকাকার ভাগ্য নির্ধারিত হবে। বার্তাটিতে আরও বলা হয়েছে, এর আগেও চার বার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আর তা বাড়ানো হবে না।
মাওবাদী এবং তাদের সহ সংগঠন চাষি মূলিয়া আদিবাসী কমিটি (সিএমএএস)-র সদস্যদের হয়ে মামলা লড়েন কোরাপুটের আইনজীবী নীহার পট্টনায়ক। তিনি জানিয়েছেন, কাল গণ আদালতে হিকাকার বিচার হতে পারে। তবে বিচারের স্থান এবং সময় পরে ঠিক করা হবে।
মাওবাদীদের এই বার্তার পরেই বিজেডি বিধায়কের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে প্রশাসনের। তাই আজ পাঁচ মাওবাদী-সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করল নবীনের সরকার। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ইউ এন বেহেরা বলেন, “১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তবে তিনি জানান, মাওবাদীদের কাছ থেকে বার্তা তাঁরা পাননি।
হিকাকার মুক্তির জন্য ৩০ জন মাওবাদী এবং সিএমএএস সদস্যর মুক্তির দাবি জানিয়েছিল মাওবাদীরা। তাদের মধ্যে ছিল ৫৫ জন পুলিশ খুনে অভিযুক্ত মাওবাদী চেন্দা ভুসানাম ওরফে ঘাসি। পরে ঘাসিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি থেকে সরে আসে মাওবাদীরা। কাল একটি বার্তায় অন্ধ্র-ওড়িশা সীমানা কমিটির কম্যান্ডার অরুণা জানান, এই ২৯ জনের মুক্তি নিয়ে রাজ্য কী পদক্ষেপ করছে তা জানানো হলে বুধবার হিকাকাকে মুক্তি দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, বুধবার বিকাল পাঁচটার মধ্যে হিকাকাকে মুক্তি দেওয়া হলে মাওবাদীদের শর্ত মানা হবে। পঞ্চায়েতিরাজ সচিব পি কে জেনা আরও জানিয়েছিলেন, যে সব বন্দির বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়া সম্ভব তাদের ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে রাজ্য। এই দর কষাকষির মধ্যেই মাওবাদীরা আজ জনতার আদালতে হিকাকার বিচার করা হবে বলে জানায়। এর পরেই মাওবাদীদের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয় ওড়িশা সরকার। বেহেরা জানান, ১৩ জন বন্দির বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের খবর পেয়ে আশা করি মাওবাদীরা সন্তুষ্ট হবে এবং হিকাকাকে মুক্তি দেবে।
কালই হিকাকা ফোনে কথা বলেছিলেন মুখ্যসচিব বি কে পট্টনায়ক, কোরাপুটের জেলাশাসক জে এস রামাচন্দ্র এবং কোরাপুটের বিজেডি সাংসদ জয়রাম পাঙ্গির সঙ্গে। তাঁদের হিকাকা জানিয়েছিলেন, তিনি ভাল আছেন। কিন্তু আজ মাওবাদীদের বার্তা পেয়েই চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে হিকাকার পরিবার। স্বামীকে সুস্থ অবস্থায় মুক্তি দেওয়ার জন্য আজ ফের মাওবাদীদের আবেদন জানিয়েছেন হিকাকার স্ত্রী। একই আবেদন জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। এর মধ্যেই ওড়িশা সরকারের চিন্তা আরও বাড়িয়েছেন প্রাক্তন মেজর জেনারেল গঙ্গুরদীপ বক্সী। ওড়িশা সরকারের মাওবাদীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আজ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। মাওবাদীদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন গঙ্গুরদীপ বক্সী জানান, রাজ্য সরকারের মাওবাদীদের মুক্তি দিতে চাইলে তা আটকানো উচিত। কারণ নিরাপত্তা কর্মীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে তাদের গ্রেফতার করেছে। বিচারপতি টি এস ঠাকুর এবং জ্ঞানসুধা মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কাল এই আবেদনের শুনানি হবে। |