‘মজুতদারি’তে দর আগুন,
পরিত্রাণে চিনা আলু
বাঙালির পাতে রোজকার ‘আলুভাতে’-তেও এ বার চিনের ছোঁয়া!
পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে কিছুটা সস্তায় আলু পৌঁছে দিতে শেষমেষ চিনের দ্বারস্থ হচ্ছে তৃণমূল সরকার। চিন থেকে আলু আমদানি করে ‘ঘাটতি’ মেটানোর কথা ভাবা হচ্ছে। চিনে রান্নার স্বাদে দেশ বহু দিনই মজেছে। খেলনা, কলম, বেলুন, ব্যাটারি থেকে কম্পিউটার রকমারি চিনা পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে গিয়েছে বহু দিন আগেই। এমনকী, অধুনা বেনারসি শাড়িও বাদ যাচ্ছে না। তাই বলে আলুর মতো অতি সুলভ একটা সব্জিতেও ‘মেড ইন চায়না’ তকমা?
এ রাজ্যের বাসিন্দাদের কাছে ব্যাপারটা বিস্ময়কর ঠেকা স্বাভাবিক। বিশেষত এমন এক সময়ে, যখন গত মরসুমের তুলনায় কম হলেও চাহিদার যথেষ্ট বেশি আলুই উৎপাদন হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু সরকারি মহলের একাংশের দাবি, উদ্বৃত্ত আলুর সিংহভাগ ‘অসাধু’ উদ্দেশ্যে মজুত করে রাখায় কৃত্রিম একটা অভাবের সৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে দাম বাড়ছে। আর আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেই রাজ্য সরকার এখন চিন থেকে বাড়তি আলু এনে চাহিদা সামলানোর কথা ভাবছে বলে দাবি করেছেন কৃষি বিপণন দফতরের এক সূত্র।
রাজ্যের কৃষি-বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলছেন, “গত চল্লিশ বছরে এ বারই আলুর সবচেয়ে ভাল দাম পেয়েছেন চাষিরা। মাঠে কিলোপিছু ন’টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল।” অথচ গৃহস্থকে তা বাজার থেকে অন্তত ১৩-১৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে কেন?
এক নজরে
ফলেছে দরকার হিমঘরে
৮২ লক্ষ টন ৪৮ লক্ষ টন ৬২ লক্ষ টন

* রাজ্যে, এ বছরে
মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “এক শ্রেণির মজুতদার ও ফড়ের জন্য এই সঙ্কট। এতে বাজারে আলুর দাম বাড়ছে।” আলুর জোগান বাড়িয়ে দাম বেঁধে রাখতেই রাজ্যকে ‘সস্তা’র চিনে আলুর দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীও। সরকারি কর্তাদের ধারণা, আমদানির খরচ ধরলেও বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি সম্ভব। পাশাপাশি আলুর বিপণনের ক্ষেত্রেও নতুন কৌশল অবলম্বনের কথা ভাবা হচ্ছে।
কিন্তু মূল যে সমস্যা, তার কী হবে? অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার?
কৃষি দফতরের দাবি, হিমঘরগুলোয় বিনা লাইসেন্সে কেউ আলু মজুত রাখছেন কিনা, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। বস্তুত হিমঘরগুলোর অবস্থা খতিয়ে দেখলেই রাজ্যের আলু-সঙ্কটের ছবিটা স্পষ্ট মালুম হয়। কী রকম?
কৃষি-সূত্রের খবর: গত বার দাম ঠিকঠাক না-মেলায় এ বার পশ্চিমবঙ্গে আলু ফলাতে চাষিদের উৎসাহ ছিল কম। তা সত্ত্বেও ফলেছে প্রয়োজনের তুলনায় ঢের বেশি। কিন্তু তার খুব অল্পই বাজারে এসেছে। সরকারি তথ্য বলছে, উৎপাদিত ৮২ লক্ষ টনের মধ্যে ৬২ লক্ষই এ মাসের গোড়ায় রাজ্যের শ’চারেকের বেশি হিমঘরে ঢুকে কার্যত ‘অদৃশ্য’ হয়ে গিয়েছে। তাতেও সমস্যা ছিল না। কেননা এ রাজ্যে ফি মাসে খাদ্য হিসেবে দরকার হয় সাকুল্যে চার লক্ষ টন আলু। সেইমতো গত দু’মাসে আট লক্ষ টন। আরও আট লক্ষ টন চলে গিয়েছে ভিন রাজ্যে। বাকি চার লক্ষ টন কোথায় গেল?
কৃষি বিপণন-কর্তাদের আশঙ্কা, সেটাও মজুতদারদের গুদামে চলে গিয়েছে। আর তাতেই দেখা দিয়েছে জোগান-সঙ্কট। যার জেরে কলকাতা ও শহরতলিতে চন্দ্রমুখী আলু ইদানীং বিকোচ্ছে ১৫ টাকা কেজি’তে। জ্যোতি-কুফরিও ১৩ টাকা ছুঁইছুঁই। আলুর দরে এ ভাবে ‘আগুন লাগা’র জন্য হিমঘরগুলোকেই ‘ভিলেন’ ঠাওরাচ্ছেন কৃষি-কর্তারা। সমস্যার সুরাহা কী?
সম্প্রতি মহাকরণে এ নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন হিমঘর-মালিক, আলু ব্যবসায়ী ও কৃষি বিপণন অফিসারেরা। তাতে মাদার ডেয়ারির বুথ থেকে আলু বিক্রিতে জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে হিমঘর থেকে আলুর মজুতদারদের নাম-ধাম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। দেখা হচ্ছে, কেউ কোথাও বেনামে বা বিনা লাইসেন্সে আলু রেখেছেন কি না। কৃষি বিপণন-কর্তাদের একাংশের মতে, সঙ্কটের একটা প্রধান কারণ হল অন-লাইনে আলুর আগাম ব্যবসা। ওই পদ্ধতিতে কোন হিমঘর থেকে কত আলু কারা কিনে রেখেছেন, তা-ও জানার চেষ্টা হচ্ছে। অনলাইনে আলু কেনা-বেচা বন্ধের ব্যাপারেও ভাবনা-চিন্তা করছে রাজ্য। এ সব পথে সমস্যার সমাধান অবশ্য অনেক দূরে। জোর করে হিমঘর খুলে আলু বার করে নেওয়ার আইনও নেই এ রাজ্যে।
অতএব, আপাতত সেই চিনে আলুই ভরসা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.