আবার বিতর্কের কেন্দ্রে পাওলি দাম। পাওলি-অভিনীত হিন্দি ছবি ‘হেট স্টোরি’র পোস্টার নিয়ে রাজ্য সরকার যে আপত্তি জানিয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্টের রায় সেটাকেই বৈধতা দিল।
২০ এপ্রিল মুক্তি পাবে মহেশ ভট্ট প্রযোজিত, বিক্রম ভট্ট পরিচালিত ‘হেট স্টোরি’। ছবিটি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সেন্সর বোর্ডে ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। ছবির প্রদর্শকদের তরফে ওই ছবির প্রচারের জন্য পোস্টার ও স্টিল ছবি নিয়মমাফিক রাজ্যের সেন্সর আধিকারিকের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সেন্সর আধিকারিক পাওলির ‘সাহসী’ পোস্টারগুলি নিয়ে আপত্তি জানান। পোস্টারগুলিতে রং করে তবেই প্রচারের কাজে ব্যবহার করা যাবে বলে জানানো হয়। রাজ্য সরকারের এই নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে ছবির প্রদর্শক সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে।
আবেদনকারীর তরফে আইনজীবী শুদ্ধস্বত্ব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯৫২ সালের ইন্ডিয়ান সিনেমাটোগ্রাফ আইন অনুযায়ী এই ছবিকে ‘এ’ তকমা দিয়ে প্রদর্শনের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর পরে রাজ্য সরকার ছবির পোস্টার বা প্রচারে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে না। এটা মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে সওয়াল করেন তিনি। রাজ্য সরকারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র বলেন, ১৯৭৪ সালে রাজ্য সরকার ‘কম্পালসারি সেন্সরশিপ অফ পাবলিসিটি মেটিরিয়াল’ আইন পাস করে। ওই আইনে রাজ্য সরকার বিপণনের কাজে ব্যবহৃত কোনও উপাদানকে অশ্লীল বা আপত্তিজনক মনে করলে তা প্রচার করা বন্ধ করে দিতে পারে।
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে এ দিন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ছবির প্রদর্শনে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু ছবিটি যেহেতু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য চিহ্নিত, তাই পোস্টারে বা হলের শোকেসে যদি ওই ছবি লাগানো হয়, তা হলে তা সকলেই দেখবে। অপ্রাপ্তবয়স্কেরাও দেখবে। সেটা করা যাবে না। |
এর আগে একটি অলঙ্কার-সংস্থার বিজ্ঞাপনী পোস্টার নিষিদ্ধ করেছিল রাজ্য সরকার। এ বার সিনেমার পোস্টারে রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করল হাইকোর্ট। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত পোস্টার অপ্রাপ্তবয়স্করাও দেখতে পাবে, এমনটা হওয়া উচিত নয় বলেই রায় দিয়েছেন বিচারপতি। এ জাতীয় পোস্টার কতটা প্রভাবিত করে শিশুমনকে? শিশু মনস্তত্ত্ববিদ হিরণ্ময় সাহার মতে, তিন-দশ বছর বয়স্ক শিশুর মধ্যেও যৌন উত্তেজনা প্রবল ভাবেই থাকে। সে ক্ষেত্রে উত্তেজক উপাদান তার মনকে নাড়া দেওয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। কিন্তু টিভি, খবরের কাগজ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে পরিমাণ যৌন উপাদান শিশুরা এখন এমনিই দেখতে পায়, সেখানে একটা সিনেমার পোস্টারকে আটকে দিয়ে সুবিধা হবে কি? সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায় বলেন, “শিশুদের মধ্যে যৌন অপরাধ বাড়ার পিছনে যৌন-দৃশ্যের ছড়াছড়ির একটা ভূমিকা আছে বলেই মনে হয়। হাইকোর্টের বক্তব্যে যুক্তি আছে। তবে ওই পোস্টারটা নিয়ে এমনি হয়তো বিশেষ কেউ মাথা ঘামাত না। কিন্তু ‘নিষিদ্ধ’ হওয়ার পরে ওটা এখন আরও বেশি করে মেল-মেসেজ-ফেসবুকে চালাচালি হবে!”
বিপণন নিয়ে এই বিতর্কের মুখে পড়ে পাওলির ছবির ব্যবসা কি মার খাওয়ার আশঙ্কা আছে? এ রাজ্যে ‘হেট স্টোরি’-র পরিবেশক কুশাগ্রা আর্টস-এর তরফে আইনজীবী শ্রেয়া ঘোষ বলেন, “ছবির প্রচার যদি সঠিক ভাবে করা না যায়, সেটা তো আমাদের পক্ষে ক্ষতির বটেই!”
বিজ্ঞাপন জগতের কর্তা রাম রায় অবশ্য মনে করেন, এই বিতর্কে হুজুগে দর্শকের ভিড় বাড়বে! তবে সামগ্রিক ভাবে তাঁর মতে, এই ধরনের উত্তেজক পোস্টার শেষ পর্যন্ত খুব বেশি লোক টানতে সাহায্য করে না। হাইকোর্টের রায়কে সমর্থন করে তিনি বলেন, “বিজ্ঞাপন-প্রচার-বিপণনের ক্ষেত্রেও সামাজিক দায়বোধের দিক থেকে একটা নির্দেশিকা থাকা দরকার।” ‘হেট স্টোরি’র পরিবেশকরা আটটি পোস্টার সেন্সর আধিকারিকের কাছে জমা দিয়েছিলেন! তার মধ্যে দু’টি এখনও আটকে রয়েছে। বাকি ছ’টি পোস্টারে পাওলির শরীরের অনাবৃত অংশে রং লাগিয়ে সাঁটতে বলা হয়েছে। প্রযোজক মহেশ ভট্টের অবশ্য দাবি, রং লাগিয়ে দেওয়ার ফলে পোস্টারটি ‘অশ্লীলতর’ লাগছে। রায় ঘোষণার পরে শ্রেয়া জানান, বাকি দু’টি পোস্টারে ছাড়পত্র চাওয়ার জন্য সেন্সর আধিকারিকের কাছে আপিল করতে অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট। আর, ‘কম্পালসারি সেন্সরশিপ অফ পাবলিসিটি মেটিরিয়াল’ আইনের সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁরা যে আবেদন করেছিলেন, তার শুনানি চলবে। |