পশ্চিমবঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আসল সংখ্যাটা কত, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের দুই দফতরের হিসেব দু’রকম। ফলে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। যার জেরে নতুন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘জাতীয় জীবিকা মিশন’-এর কাজ আটকে রয়েছে রাজ্যে।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ব্যাঙ্ক-ঋণ ও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা জোগানোর পদ্ধতি আরও সহজ, দ্রুত, ও স্বচ্ছ করে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় জীবিকা মিশনের আওতায় পশ্চিমবঙ্গে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘জীবনজীবিকা’ নামে প্রকল্পটির কাজ শুরু করার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে গড়া হচ্ছে একটি ফেডারেশন, যা কি না এ ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, গোষ্ঠীগুলো আগে সরাসরি ব্যাঙ্কে প্রকল্প জমা দিয়ে ঋণের আবেদন জানাত। ঋণ মঞ্জুর হলে সরাসরি তারাই টাকা পেত। এ বার ফেডারেশনই পুরো প্রক্রিয়ায় ‘মধ্যস্থ’ হিসেবে কাজ করবে। ঋণ যেমন মিলবে ফেডারেশন মারফত, তেমন কেন্দ্রীয় অর্থ ফেডারেশনেরই মাধ্যমে ছোট-ছোট গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছবে।
অর্থাৎ ‘জীবনজীবিকা’র মূল চালিকাশক্তিই কার্যত থাকবে ফেডারেশনের হাতে। কিন্তু হিসেবে ‘বিভ্রান্তি’র দরুণ সেটাই গড়ে তোলা যাচ্ছে না। কী রকম?
দফতর-সূত্রের খবর: ফেডারেশন গড়তে রাজ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মোট সংখ্যা জানাটা জরুরি। সেই হিসেব কষতে গিয়ে গোড়াতেই সরকারকে হোঁচট খেতে হয়েছে। কারণ স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতর বলছে, পশ্চিমবঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ১৪ লক্ষ। অন্য দিকে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের হিসেব মোতাবেক, সংখ্যাটা সাকুল্যে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার! দুই দফতরের হিসেবে এই ‘বিপুল’ ফারাকের দরুণ জাতীয় জীবিকা মিশনের রূপরেখাই তৈরি করা যাচ্ছে না বলে সরকারি-সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিকে ফেডারেশন পরিচালনার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে মাথায় রেখে একটি সোসাইটি তৈরি করে ফেলেছে, যার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। ২৮ সদস্যের সোসাইটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিককে। আগামী সপ্তাহে সোসাইটি নথিভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা নিয়ে এ হেন ধন্ধ পুরো উদ্যোগটির পথেই বাধার সৃষ্টি করেছে।
সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কেন?
পঞ্চায়েত-সূত্রের খবর: অনেক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হলেও ব্যাঙ্ক ঋণ মিলছে না। হয়তো কোনও গোষ্ঠী যে বস্তু উৎপাদনে আগ্রহী, ব্যাঙ্ক সেটিকে অলাভজনক মনে করে ঋণের আবেদন বাতিল করে দিচ্ছে। এবং ঋণ না-পেয়ে গোষ্ঠীটির অস্তিত্ব মুছে যাচ্ছে। অথচ বন্ধ হয়ে যাওয়া এমন বিভিন্ন গোষ্ঠীর নামও রয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের তালিকায়। অন্য দিকে যে সব গোষ্ঠীকে ব্যাঙ্ক ঋণ দিচ্ছে, শুধু তাদের নিয়ে তৈরি হয়েছে পঞ্চায়েত দফতর তালিকা। সূত্রটির দাবি, হিসেবের ফারাক এই কারণেই। এর সুরাহা কী?
পঞ্চায়েত-কর্তারা জানাচ্ছেন, এ বার দুই দফতর একসঙ্গে বসে তালিকা বানিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে ফেডারেশনে নথিভুক্ত করাবে। ‘জীবনজীবিকা’র পথে সমস্ত বাধা দ্রুত দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। প্রকল্পটি কার্যকর হলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর সুবিধে কী হবে?
পঞ্চায়েত-কর্তারদের বক্তব্য, কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠী যাতে ব্যাঙ্ক-ঋণের অভাবে বন্ধ না-হয়, মূলত সেটা নিশ্চিত করতেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্প। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে সাহায্য করতে তাঁর দফতর রাজ্যের ১৯ জেলায় বিক্রয়কেন্দ্র, ‘ভিলেজ হাব’, জেলা হাট তৈরি করছে। প্রতিটি কেন্দ্র নির্মাণে খরচ করা হবে আড়াই কোটি টাকা। এর জন্য জমি খুঁজে দিতে সম্প্রতি সব জেলাশাসককে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। |