বিষয়: ভারতীয় সংসদ
স্টেজে, টিভিতে, দেশে কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কুইজ শো পরিচালনা করতে গিয়ে কি আমার নার্ভাস লাগে? নার্ভাস, কখনওই না। বরং বেশ উত্তেজিত থাকি এই সব সময়ে। গত মার্চে রাজ্যসভায় আমি প্রথম বক্তৃতা দিই। ওহ্, সে দিন কিন্তু রীতিমত নার্ভাস ছিলাম। আরে, ওটা তো আর কোনও কুইজ প্রতিযোগিতা নয়। তবে রাজ্যসভায় আমার প্রথম বক্তৃতা মনে রাখার মতো একটা অভিজ্ঞতা বটে। রাজ্যসভায় যোগ দেওয়ার পর প্রথম ছ’মাসে বক্তৃতার সুযোগ ছিল। কিন্তু আমি খালি বসে বসে অন্যদের কথা শুনতাম, কী ভাবে কী বলতে হয় সেটা নজর করতাম, নানা জিনিস শেখার চেষ্টা করতাম। এ ভাবে কত কিছু জানা যায়। যেমন, এখান থেকেই আমি প্রথম শিখি, যে বিষয়টা তুমি জানো, বোঝো, সেই বিষয়েই নিজের বক্তব্য পেশ করো। সংসদের সদস্য পদ লাভ করার আগে আমি ভারতীয় রেল-এর যাত্রী পরিষেবা সংগঠনের সভাপতি ছিলাম। দু’বছর। ওখানে এত দিন কাজ করার ফলে বিষয়টা সম্পর্কে আমার বেশ ভালই ধারণা হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণেই আমার প্রথম বক্তব্যের বিষয় ছিল রেল বাজেট। বিষয়টা আমার জানা বলে সেটা আমার বক্তব্যের ভিত যেমন গড়েছিল, তেমনই আমাকে আত্মবিশ্বাসীও করে তুলেছিল। আমার দ্বিতীয় শিক্ষাটি ছিল, বক্তব্যের আগে প্রস্তুতিটা জোরদার হওয়া চাই। খুব জোরদার। কোনও বিষয়ের ওপর পরিসংখ্যান, তথ্য যা পাওয়া যায়, যতটা পাওয়া যায়, সব পড়ে ফেলা চাই। এর জন্য গবেষণা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সঙ্গেও কথা বলার দরকার হয়। তাঁরা তোমাকে এই বিষয়ে অনেক খুঁটিনাটি খোঁজখবর দিতে পারবেন। তৃতীয়ত, বক্তব্য পেশ করার একটা মহাজনী পন্থা আছে, সেটা অনুসরণ করা চাই। পন্থাটি কী? বক্তব্যটি কয়েকটি ছোট পয়েন্টে ভাগ করে নাও। তবে সব ক’টি পয়েন্ট-ই যেন জরুরি তথ্য হয়। এটা তৈরি করাই বেশ কঠিন কাজ। এমনিতে বক্তব্যে তো কত কিছু বলার থাকে। কিন্তু তোমাকে দেখে নিতে হবে যে এখানে কোন কোন পয়েন্টগুলি তুমি তুলে ধরতে চাও। যখন তুমি তোমার বক্তব্যের একটা খসড়া তৈরি করছ, সেটা ঠিক করে নিতে পারো। দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরি করার সময় যেমন প্রথমে বাঁশের একটা কাঠামো তৈরি করতে হয়, ঠিক তেমনই খসড়া হল মূল বক্তব্যের কাঠামো। এই পন্থাগুলি অনুসরণ করলাম নিজের বক্তব্য পেশ করার আগে। ব্যস, আমিও তৈরি। বিষয়টা বোঝা হয়ে গিয়েছে, জরুরি পয়েন্টগুলি একটি পাতায় লিখে রেখেছি, বেশ কয়েক বার মহড়াও দিয়ে নিয়েছি। তার পর বেশ দীর্ঘ একটা প্রতীক্ষা। অবশেষে এক দিন রাজ্যসভার ভাইস চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন, ‘মিস্টার ডেরেক ওবেরয়’। অমনি আমার বাঁ পাশে বসে থাকা সহ-সংসদ, প্রাক্তন এক জন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার উঠে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত সশ্রদ্ধ ভাবে বলে উঠলেন, ‘স্যর, ওর নাম ডেরেক ও’ব্রায়েন, ও’বেরয় নয়’। শুনে ভাইস চেয়ারম্যান আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। আমিও তার প্রত্যুত্তরে হাসলাম। ভাবলাম নামে কী বা আসে যায়! যাক, এতক্ষণে আমার নার্ভাস ভাবটা প্রায় কেটে গিয়েছিল। আমি আমার প্রথম বক্তব্য পেশ করলাম এই মহিমান্বিত সভায়। তথ্য হিসেবে জানিয়ে রাখি, আমার প্রথম বক্তৃতার মেয়াদ ছিল ষোলো মিনিট। মার্চ মাসের শেষের দিকে আমি আমার দ্বিতীয় বক্তৃতা দিলাম সভায়। এখানে আমি বললাম ‘কার্যকর যুক্তরাষ্ট্রীয়তা এবং কেন্দ্রীয় বাজেট’-এর ওপর। মেয়াদ ছিল দশ মিনিট। অমন মহিমময় সভায় দু’বার বক্তব্য রাখার পরই আমার সব নার্ভাস ভাব কেটে গিয়েছে। এখন যে প্রবল উৎসাহ মনে জেগেছে, তা সবার আশীর্বাদে অক্ষয় থাকবে।
জানো কি
ব্রিটিশ শাসনকালে ১৯১৯ সালে মন্টেগু-চেমসফোর্ড নীতিই ভারতে ‘কেন্দ্রীয় আইনসভা’ বা সংসদ গড়ার পথ প্রশস্ত করে দেয়। ১৯২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সংসদের প্রতিষ্ঠা ফলকটি বসান রাজকুমার আর্থার, ডিউক অব কনট। ইনি রানি ভিক্টোরিয়ার তৃতীয় সন্তান। বিল্ডিংটি তৈরি হতে ছ’বছর সময় লাগে। ১৯২৭ সালে এর উদ্বোধন করেন ভারতের তৎকালীন গর্ভনর জেনারেল, লর্ড আরউইন। সংসদের সেন্ট্রাল হলটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট এখানেই ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়। ভারতীয় সংবিধানও এই হলেই তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে পার্লামেন্টকে ‘সংসদ ভবন’ও বলা হয়।

ভারতীয় সংসদের দুটি কক্ষ রয়েছে। উচ্চতর কক্ষ বা রাজ্যসভা এবং নিম্ন কক্ষ অর্থাৎ লোকসভা।
লোকসভা বা ‘হাউস অব দ্য পিপল’-এর প্রতিনিধিরা প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নাগরিকদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি নির্বাচিত হন। লোকসভায় সর্বাধিক ৫৫২ জন সদস্য থাকতে পারেন। এর মধ্যে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৫৩০ জন পর্যন্ত এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ২০ জন অবধি সদস্য এখানে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। আর ভারতীয় রাষ্ট্রপতির যদি মনে হয় যে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে সংসদে যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব নেই, তা হলে তিনি এই সম্প্রদায় থেকে সর্বাধিক দু’জনকে মনোনীত করতে পারেন।

১৯৫৪ সালের ২৩ অগস্ট উচ্চতর কক্ষের চেয়ারপার্সন ‘কাউন্সিল অব স্টেটস’-কে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রাজ্যসভা’ বলে নামকরণ করেন। রাজ্যসভার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ধারা ৮০ অনুযায়ী রাজ্যসভায় সর্বাধিক ২৫০ জন সদস্য থাকতে পারে। যার মধ্যে ১২ জন সদস্য রাষ্ট্রপতির দ্বারা মনোনীত হন। আর বাকি ২৩৮ জন আসেন সব ক’টি রাজ্য এবং দুটি কেন্দ্র শাসিত এলাকা থেকে। এখানকার সদস্যরা কিন্তু লোকসভার মতো সরাসরি জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হন না। তাঁরা সদস্য পদ পান পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। বিভিন্ন রাজ্য এবং দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে রাজ্যসভার সদস্যরা নির্বাচিত হন। সাধারণত রাজ্যসভার সদস্যপদের মেয়াদ ছ’বছর।
বলো তো
যে প্রস্তাব সংসদের দুটি কক্ষেই পাশ করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেয়েছে, সেটাকে কী বলা হয়?
কোনও আর্থিক বছরের প্রেক্ষিতে সরকারের আনুমানিক আয় ব্যয়ের যে বার্ষিক খসড়া তৈরি হয় তার নাম কী?
ড. বিবেক কুমার অগ্নিহোত্রী রাজ্যসভায় কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন?
প্রতি বছর কোনও সংসদ সদস্যের মেম্বার অব পার্লামেন্ট লোকাল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট (এমপিল্যাড) ডিভিশন স্কিম-এর জন্য কত টাকা বরাদ্দ করা হয়?
সাধারণ ভাবে বছরে সংসদের কী কী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর
১) অ্যাক্ট বা আইন, ২) বাজেট, ৩) সেক্রেটারি জেনারেল,
৪) পাঁচ কোটি টাকা, ৫) বাজেট, বাদল এবং শীতকালীন অধিবেশন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.