বাড়িওয়ালার পক্ষে এক দল। ‘দখলদারের’ তরফে আর এক পক্ষ। এক পক্ষ তৃণমূলের বিধায়কের ‘ঘনিষ্ঠ’। অন্যেরা তৃণমূলেরই সাংসদের ‘অনুগামী’ বলে পরিচিত। দু’পক্ষের সংঘর্ষে রবিবার তেতে উঠল হুগলির রিষড়া। লক্ষ্মীপল্লিতে এ দিনের মারামারিতে জখম সাবির আলি নামে এক তৃণমূল নেতাকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে খবর, রিষড়ায় একটি পরিবারের ঘর ‘দখল’ করে দলীয় কার্যালয় চালানো নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ চলছিল কিছু দিন ধরেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনুগামী’ নেতা-কর্মীরাই ওই কার্যালয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ। কেন হল সংঘর্ষ? কল্যাণবাবুর জবাব, “দলের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করি। ঝগড়াঝাঁটি নিয়ে আমি ক্লান্ত। এ নিয়ে মন্তব্য করব না।” শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্তবাবু বলেন, “কারও ঘর আটকে রাখা দলের নীতিবিরুদ্ধ। যাঁরা ঘরটি আটকে রাখছেন, ঠিক করছেন না।” |
গত মাসের গোড়ায় আরামবাগে গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ‘দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না’ বলে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ অব্যাহত হুগলিতে। রবিবারে রিষড়ার ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “দলের তরফে জেলার কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদবকে বলেছি বিশদে খোঁজ নিতে। রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেব। মারামারি দল বরদাস্ত করবে না।” দিলীপবাবু বলেন, “গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। দলনেত্রীর নির্দেশ, বাড়ির মালিকের অমতে কোথাও ঘর দখল করে দলীয় কার্যালয় চালানো যাবে না।”
লক্ষ্মীপল্লির বাসিন্দা জয়া বড়ুয়া ও তাঁর বোন রূপা বড়ুয়া (কর্মকার)-র দোতলা বাড়ির একতলার একটি ঘরে তৃণমূলের কার্যালয়টি চলে। ওই পরিবার সূত্রে খবর, বছর পাঁচেক আগে এক মহিলাকে মুদির দোকান করার জন্য ঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়। ২০১০-এ পুরভোটের আগে সেই মহিলার থেকে ঘরটি ভাড়া নেয় তৃণমূল। চেষ্টা করেও ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে রূপাদেবীর দাবি, “তখনই প্রতিবাদ করেছিলাম। তৃণমূল নেতারা পুর-ভোট মিটে গেলেই কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কথা রাখেননি।”
রূপাদেবীদের দাবি, ঘর ফাঁকা করানোর জন্য তাঁরা সাংসদ, বিধায়ক, থানা সব মহলেই দরবার করেছেন। বিধায়কের অনুগামী হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতা সাবির আলি এ দিন রূপাদেবীদের নিয়ে কল্যাণবাবুর কাছে যান। কিন্তু সাংসদ কোনও কথা শোনেননি, এই অভিযোগ তুলে রূপাদেবীরা ফিরে এসে ওই কার্যালয়ের সামনে বসে পড়েন। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লোকজনই সেখানে জড়ো হন। বাধে মারামারি। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায় রাস্তা। গোলমালকারীদের একাংশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ক্যামেরা বন্ধ রাখার ‘হুমকি’ দেয়। সাবিরের বিরুদ্ধে ওই বাড়ি ভেঙে বহুতল তৈরির চেষ্টার অভিযোগ তোলেন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা। পুলিশ আসে। তবে রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ জানায়নি। সাবিরের অভিযোগ, “যে সব গুন্ডা দলে ভিড়েছে, সাংসদ তাদের আমাদের উপরে লেলিয়ে দেন। আমি কি প্রোমোটার, যে প্রোমোটিং করব?” কল্যাণবাবুর দাবি, “ওখানে টাকার লেনদেন হয়েছে। প্রোমোটারির কথাও শোনা যাচ্ছে। আজ মালিক পরিচয় দিয়ে ২ মহিলা এসে নিজেরাই ঝগড়া করছিলেন। ওঁদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিই। কে মালিক, কে ভাড়াটেসেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় আমি নেই।” |