শ্লীলতাহানির অভিযুক্তকে
থানা থেকেই ছাড়
শ্লীলতাহানির মতো অভিযোগে আটক অভিযুক্তকে থানা থেকেই ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল গরফা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। ওই অভিযুক্তকে আটক করে থানায় পাঠিয়েছিলেন এক পুলিশ অফিসারই!
শনিবার বাংলা নববর্ষের রাত। ঘটনাস্থল ইএম বাইপাসের কালিকাপুরের মোড়। সাড়ে দশটা নাগাদ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন এক তরুণী। তাঁর সঙ্গী এক যুবক যুঝে চলেছেন বাইক-আরোহী এক যুবকের সঙ্গে। কিন্তু পেরে উঠছেন না।
বাইক-আরোহী যুবক ক্রমাগত উত্যক্ত করে চলেছে তরুণীটিকে। শেষ পর্যন্ত ওই বাইক-আরোহীর হাত থেকে তরুণীটিকে রক্ষা করলেন এক পুলিশ অফিসার। ঘটনাচক্রে তিনি ডিউটি সেরে মোটরবাইকে চেপে ওই রাস্তা দিয়ে ফিরছিলেন। তাঁর পিছনে বসে ছিলেন এক কনস্টেবল।
তরুণীর সঙ্গী দেবাঞ্জন ব্রহ্ম জানাচ্ছেন, মোটরবাইক চেপে আসা ওই পুলিশ অফিসার অভিযুক্ত যুবকটিকে আটক করে তাকে সঙ্গে নিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থাকেন রাস্তায়। সঙ্গী কনস্টেবলকে দিয়ে তরুণী ও দেবাঞ্জনকে অভিযোগ লেখার জন্য পাঠান সার্ভে পার্ক থানায়। পরে ওই থানার পুলিশ গিয়ে ট্যাক্সিতে চাপিয়ে অভিযুক্ত যুবককে থানায় আনে। আবার সেখান থেকে অভিযুক্তের সঙ্গেই দেবাঞ্জন ও তাঁর বান্ধবীকে ওই ট্যাক্সিতে চাপিয়ে পুলিশ নিয়ে যায় গরফা থানায়। কারণ, ঘটনাস্থল গরফা থানার অন্তর্ভুক্ত।
এর পরে কী হল? ওই তরুণী জানাচ্ছেন, তিনি থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশের কাছে যতক্ষণ তাঁরা বসেছিলেন, ওই যুবক থানার মধ্যেই তাঁদের হুমকি দিচ্ছিলেন। পুলিশ কর্মীরা তার কোনও প্রতিবাদ করেননি বলে অভিযোগ ওই তরুণীর। পুলিশ তাঁদের অভিযোগের প্রতিলিপিতে সই করায়নি, প্রতিলিপিও দেয়নি বলে অভিযোগ তরুণীর সঙ্গী, একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার মালিক দেবাঞ্জনের। রবিবার অভিযুক্ত যুবকটিকে কালিকাপুর এলাকায় ঘুরতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দেবাঞ্জনবাবু। বুঝতে পারেন, পুলিশ গ্রেফতার করেনি ওই যুবকটিকে। আটক করলেও থানা থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। ওই ধরনের কোনও যুবককে গরফা থানা গ্রেফতার করেছে বলে খবর নেই কলকাতা পুলিশের কর্তাদের কাছেও।
এ ব্যাপারে ডিসি (সাউথ সুবার্বান) সুজয় চন্দের সঙ্গে রবিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রবিবার রাতে কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী হয়েছে লালবাজার। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ দেবাঞ্জন বলেন, “কিছুক্ষণ আগেই যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমাদের নতুন অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে।”
পেশায় ‘কনটেন্ট রাইটার’ ওই তরুণী রবিবার জানান, শনিবার রাত দশটা নাগাদ তিনি এবং তাঁর বন্ধু দেবাঞ্জন যাদবপুর থেকে একটি অটো ধরে কালিকাপুরে আসেন। সেখান থেকেই তিনি বাস ধরে দক্ষিণ শহরতলির বাড়িতে ফিরবেন বলে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনই বাইক-আরোহী ওই যুবক রুবি মোড়ের দিক থেকে এসে তাঁর পাশে দাঁড়ায়। এর পরে ওই যুবক তাঁকে অশালীন কথা বলতে থাকে। তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই যুবক মোটরবাইকটি প্রায় তাঁর গায়ে ঠেকিয়ে শ্লীলতাহানি করতে শুরু করেন। সঙ্গে চলতে থাকে গালাগালি। বাধা দিতে গেলে তরুণীর সঙ্গীও আক্রান্ত হন। প্রাণভয়ে চিৎকার করে ছুটতে থাকেন তিনি।
ওই তরুণী বলেন, “ওই সময় রুবির দিক থেকেই মোটরবাইক চেপে আসছিলেন ওই পুলিশ অফিসার। আমি তাঁকে দেখে সাহায্য চাইতে থাকি। তিনি মোটরবাইক থামিয়ে ছেলেটিকে পাকড়াও করেন। এর পরে তিনি আমাদের থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে বলেন।” তরুণীর আরও বক্তব্য, “ওই পুলিশ অফিসার উর্দি পরেছিলেন। তাঁর বুকের ব্যাজে নাম লেখা ছিল, প্রসেনজিৎ সেন। তাঁর মোটর বাইকের পিছনে বসেছিলেন এক কনস্টেবল। ওই অফিসার এবং কনস্টেবল যা করেছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু এর পরে যা ঘটল, তার জন্য আমরা একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না।”
তরুণীর সঙ্গী দেবাঞ্জন বলেন, “যে ট্যাক্সিতে করে অভিযুক্তকে সার্ভে পার্ক থানায় আনা হয়েছিল, সেই ট্যাক্সিতেই আমাদের দু’জনকে তোলা হয়। ওই সময়ে ট্যাক্সিতে দুই পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁরা অভিযুক্তের সামনেই বারবার আমাদের ঠিকানা জানতে চাইছিলেন। আমরা প্রথমে ঠিকানা বলতে রাজি হইনি। কিন্তু পুলিশকর্মীদের চাপে শেষ পর্যন্ত ঠিকানা বলতে বাধ্য হই। আমাদের ঠিকানা শুনে অভিযুক্ত বলে ‘ও! ওই জায়গায় থাকিস? তোদের দেখে নেব।’ এতে আমরা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।”
ওই তরুণীর অভিযোগ, গরফা থানায় পৌঁছে তিনি পুরো ঘটনাটি কর্তব্যরত অফিসারকে জানান। তিনি সমস্ত বিষয়টি একটি খাতায় লিখে নেন। তবে, সেই খাতায় তাঁকে কোনও সই করানো হয়নি।
এমনকী, তাঁকে অভিযোগের কোনও প্রতিলিপিও দেওয়া হয়নি বলে জানান ওই তরুণী। এর পরে রাত একটা নাগাদ অভিযোগকারিণী এবং দেবাঞ্জন থানা থেকে বেরিয়ে চলে আসেন। পুলিশ সূত্রে জানাগিয়েছে, এর কিছু ক্ষণ পরেই থানা থেকে অভিযুক্ত যুবককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.