নববর্ষের গোড়ায় বাঙালিয়ানার পাশাপাশি ঝালিয়ে নেওয়া যাক বিনিয়োগের টুকিটাকিও। লগ্নির এই সাধারণ জ্ঞান সঞ্চয়কারীদের মাথায় থাকলে সিদ্ধান্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী হয়। লাভ বাড়ে, ঠকতে হয় না। বিভিন্ন জায়গায় লগ্নির দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বিষয়টিকে দেখার চেষ্টা করব।
ব্যাঙ্কিং লেনদেন:
১) সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এখন সুদ কষা হয় দৈনিক ব্যালান্সের ভিত্তিতে। ২) প্রতি বছর সেভিংস অ্যাকাউন্টে অন্ততপক্ষে একবার টাকা তোলা/স্থানান্তর করা প্রয়োজন, যাতে অ্যাকাউন্টটি অচল (ইনঅপারেটিভ) না হয়ে যায়। ৩) পুরনো অ্যাকাউন্টে গ্রাহক পরিচিতি বা কেওয়াইসি সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল করা প্রয়োজন। ৪) যে-সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-স্টেটমেন্ট পাঠিয়ে থাকে, আবেদন করলে তারা পাস বুক ইস্যু করতে বাধ্য থাকবে অতিরিক্ত মাসুল ছাড়াই। ৫) বিভিন্ন ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্টে এখন সুদ দিচ্ছে ৪ থেকে ৭% পর্যন্ত। ৬) অ্যাকাউন্টে সব সময় যেন ন্যূনতম ব্যালান্স থাকে। না হলে মাসুল গুনতে হবে। ৭) ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডের নম্বর এবং ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ার-এর কোনও নম্বর কোথাও লিখে রাখুন অথবা মোবাইলে সেভ করে রাখুন, যাতে কোনও কারণে কার্ড হারানো মাত্রই ব্যাঙ্ককে জানানো যায়। ৮) মেয়াদি আমানত সময় মতো নবীকরণ করিয়ে নিন। ৯) এক ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড দিয়ে অন্যান্য ব্যাঙ্কের এটিএম থেকেও টাকা তোলা যায়। অন্য এটিএম থেকে মাসে পাঁচ বার পর্যন্ত এ ভাবে টাকা তোলা যায় বিনা মাসুলে। ১০) অ্যাঙ্কাউন্টে যথেষ্ট টাকা রাখুন, যাতে ইএমআই চেক ফেরত না-যায়। ১১) যে-কোনও ব্যাঙ্কে আপনার এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা ডিপোজিট ইনশিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন দ্বারা গ্যারান্টি প্রদত্ত। ১২) সেভিংস অ্যাকাউন্টে বছরে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত সুদ করমুক্ত।
ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্প:
১) সেভিংস অ্যাকাউন্টে একক নামে ১ লক্ষ এবং যুগ্ম নামে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখা যায়। সুদ ৪ শতাংশ। ২) ৫ বছর মেয়াদি মাসিক আয় প্রকল্পে সুদের হার ৮.৫%। কোনও বোনাস নেই। ৩) ৫ এবং ১০ বছর মেয়াদি জাতীয় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার যথাক্রমে ৮.৬ এবং ৮.৯%। ৪) পিপিএফে করমুক্ত সুদের হার ৮.৮%। সর্বাধিক বার্ষিক জমা ১ লক্ষ টাকা। ৫) প্রবীণ নাগরিক প্রকল্পে নতুন সুদের হার ৯.৩%। ৬) মেয়াদি আমানতে সর্বাধিক সুদ ৮.৫%। ৭) ৮.৪% সুদ দেওয়া হচ্ছে ৫ বছর মেয়াদি রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে।
পরিকাঠামো বন্ড:
১) ২০১২-’১৩ সালে দীর্ঘমেয়াদি পরিকাঠামো বন্ডে লগ্নির উপর ৮০ সিসিএফ ধারায় আর কোনও কর ছাড় নেই। ২) গত বছর ৩০,০০০ কোটি টাকা মূল্যের করমুক্ত পরিকাঠামো বন্ড ইস্যু অনুমোদন করেছিল কেন্দ্র। ১০ এবং ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির মতো সংস্থা সুদ ঘোষণা করেছে সামান্য কমবেশি ৮.২% এবং ৮.৩%। চলতি আর্থিক বছরে পরিকাঠামো সংস্থাগুলি ৬০,০০০ কোটি টাকার করমুক্ত বন্ড ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে বাজেটে। ৩০% হারে করদাতাদের জন্য এটি টাকা রাখার অত্যন্ত ভাল জায়গা।
মিউচুয়াল ফান্ড:
১) ভাল আয় করতে হলে একটু দীর্ঘ মেয়াদে টাকা খাটাতে হয়। ২) ডিভিডেন্ড বাবদ আয় পুরোপুরি করমুক্ত। ৩) এসআইপি পদ্ধতিতে নিয়মিত সঞ্চয় করা যায়। ৪) ইএলএসএস-এর অন্তর্গত খাঁটি ইক্যুইটি প্রকল্পে লগ্নি করে ৮০সি ধারায় কর সাশ্রয় করা যায়। ৫) আয় এবং করের দিক থেকে করদাতাদের কাছে এফএমপি প্রকল্প বেশ আকর্ষণীয়।
শেয়ার:
১) লগ্নি এবং লেনদেনের জন্য প্রয়োজন একটি ডি-ম্যাট এবং একটি ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট। ২) ডিভিডেন্ড পুরোপুরি করমুক্ত। ৩) এ বারের বাজেটে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ইক্যুইটিতে লগ্নির ৫০ শতাংশের উপর করছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। আয় যাঁদের ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাঁরাই পাবেন এই সুবিধা। প্রকল্পের শর্ত আর কিছু দিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। ৪) ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যে-কোনও সংস্থার মাত্র একটি শেয়ারও কেনা যেতে পারে। ৫) ব্যাঙ্কের পুরো তথ্য দেওয়া থাকলে ডিভিডেন্ড সরাসরি ব্যাঙ্কে চলে যায়।
আয়কর:
১) করযোগ্য আয় না-থাকলেও প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়। ২) প্যান কার্ড থাকলেই রিটার্ন ফাইল করতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। ৩) অন-লাইনে এখন রিটার্ন ফাইল করা যায়। ৪) ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে যাঁদের আয়ের অডিট করানোর প্রয়োজন নেই, তাঁদের জন্য রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন সাধারণত ৩১ জুলাই। অ্যাসেসমেন্ট বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে উপযুক্ত ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা না-করা হলে ৫,০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। ৫) উৎসমূলে কর কাটা (টিডিএস) হলে তা আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে উঠেছে কি না, তা নজর রাখা প্রয়োজন। না হলে যে-সংস্থা বা ব্যাঙ্ক কর কেটেছে, তাদের জানানো প্রয়োজন। ওয়েবসাইটে না-উঠলে, কেটে নেওয়া করের সুবিধাও পাওয়া যাবে না। |