মাওবাদী মোকাবিলায় এ বার এনআইএ-কে নামাচ্ছে কেন্দ্র
লকাতাকে কেন্দ্র করে মাওবাদীরা অস্ত্রশস্ত্রের জাল ছড়িয়েছে বলে সন্দেহ করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই জালের হদিশ পেতে এ বার জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে মাঠে নামাচ্ছে তারা।
প্রাথমিক তদন্তের পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানতে পেরেছে, কলকাতাকে কেন্দ্র করে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরকের বড়সড় জাল ছড়িয়েছে মাওবাদীরা। কলকাতা বা শহরতলির বিভিন্ন কারখানায় এই সব অস্ত্র-গোলাবারুদ তৈরি হচ্ছে। কখনও বা বেআইনি অস্ত্র কারখানা থেকেও এ সব কিনছে মাওবাদীরা। তার পরে তা জঙ্গলমহল, ওড়িশা বা বিহারের জঙ্গলে মাওবাদীদের গেরিলা বাহিনীর হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, কলকাতা-সহ পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র কারখানা গড়ে তোলার পাশাপাশি বিদেশ থেকেও অস্ত্রশস্ত্র এবং ওয়্যারলেস সেট কিনছে মাওবাদীরা। এ জন্য সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ মাওবাদীকে গ্রেফতার করা হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের সাহায্যে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স এদের গ্রেফতার করে। ধৃত পাঁচ মাওবাদীর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন সধানালা রামকৃষ্ণ ওরফে সন্তোষ। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, রামকৃষ্ণ ওরফে সন্তোষকে গ্রেফতার একটা বড় সাফল্য। তিনি সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও বটে। রামকৃষ্ণের ডান হাত দীপক কুমারকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের জেরা করে কলকাতা ও বেলঘরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে কয়েকটি লেদ কারখানায় রকেট লঞ্চারের যন্ত্রাংশ উদ্ধার করে। সেই সব যন্ত্রাংশ জোড়া লাগিয়ে ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র, ওড়িশার বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হত বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। এর আগে মাওবাদী নেতা সুদীপ চোংদার ও তাঁর সঙ্গীদের গ্রেফতার করেও কলকাতা এবং শহরতলির গোপন ডেরা থেকে মাইন ও ওয়্যারলেস তৈরির প্রচুর যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়েছিল।
মাওবাদীদের এই অস্ত্র কারবারের একেবারে কেন্দ্রস্থলের খোঁজ পেতে চাইছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রক-কর্তাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে মাওবাদী তৎপরতা বাড়ছে বলে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও মাওবাদীদের অস্ত্রশস্ত্র লেনদেনের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্র ও ছত্তীসগঢ়ে এক সঙ্গে এই বিষয়টির তদন্ত করতে হবে। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা অন্ধ্রের গ্রেহাউন্ড বাহিনীর পক্ষে একা এই কাজ করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে মামলা তুলে দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারকে জানাতে চলেছে কেন্দ্র। গত কাল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত হয়। মুম্বই-হামলার পরে তৈরি হওয়া এনআইএ-কে এত দিন মূলত বিভিন্ন সন্ত্রাসের ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মাওবাদীদের কাজকর্ম নিয়ে তদন্তের ভার এই প্রথম।
যে সধানালা রামকৃষ্ণের গ্রেফতার নিয়ে গোয়েন্দারা উল্লসিত, তাঁর প্রকৃত পরিচয় কী?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বছর ষাটের রামকৃষ্ণ গত ৩৪ বছর ধরে মাওবাদীদের হয়ে কাজ করছেন। অন্ধ্রের ওয়ারঙ্গল রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। বহু দিন ধরেই তিনি মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান। সেই সুবাদে তিনি দলের মধ্যে ‘টেকি আন্না’ হিসেবেও পরিচিত। জেরায় রামকৃষ্ণ জানিয়েছেন, কিষেণজির মৃত্যুর পরে দলকে পুনরুজ্জীবিত করতেই তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়েছিল। ওড়িশা, ছত্তীসগঢ় ও অন্ধ্রে দলের ‘টেকনিক্যাল সেল’-এর দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। টেকনিক্যাল কমিটির কাজ হল, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক তৈরি করা বা কেনার বন্দোবস্ত করা। তার পরে তা গোটা দেশের গেরিলা বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেওয়া। সে জন্য বেশ কিছু দিন কলকাতাতে ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন রামকৃষ্ণ। অন্ধ্র পুলিশের থেকে খবর পেয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি জোড়াসাঁকো থানা এলাকা থেকে রামকৃষ্ণকে গ্রেফতার করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, ইতালীয় নাগরিক পাওলো বোসুস্কো, তাঁর সঙ্গী ক্লদিও কোলাঞ্জেলো এবং বিজেডি বিধায়ক ঝিনা হিকাকা-র অপহরণ কাণ্ডের তদন্তেও মাওবাদীদের এই অস্ত্রের কারবারের নমুনা মিলেছে। তা ছাড়া, ওড়িশার কোরাপুট ও মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে সম্প্রতি মাওবাদী ডেরা থেকে বেশ কিছু অস্ত্র মিলেছে, যার মধ্যে বিদেশি যোগ খুঁজে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাই এ বারে একেবারে আঁটঘাট বেঁধেই এনআইএ-কে দায়িত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.