নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
স্ত্রী ও তিন নাবালিকা মেয়েকে খুনের অভিযোগ তুলে মাঝবয়সী লোকটিকে পিটিয়েছিল ক্ষিপ্ত জনতা। তার আগেই অবশ্য তিনি কীটনাশক খেয়েছিলেন বলে পাড়াপড়শির সন্দেহ। পরে হাসপাতালে তাঁরও মৃত্যু হল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে গেল গোটা একটা পরিবার।
ঘটনাস্থল দুর্গাপুরের জেমুয়া গ্রামের ডাঙাপাড়া। পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে শেখ বরকত আলির (৪০) বাড়িতে তাঁর স্ত্রী আহিমা বিবি (৩৫) এবং তিন মেয়ে আমিনা খাতুন (১২), সামিনা খাতুন (১০) ও হালিমা খাতুনের (৬) মৃতদেহ মেলে। পুলিশের অনুমান, চার জনকেই গলা টিপে খুন করা হয়েছে।
|
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই এলাকার লোকজন বরকতকে মারধর করেন। তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুরও চালানো হয়। নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ বরকতকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহিমার খুড়তুতো ভাই নুরুল হক জানান, তাঁর দিদি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরপর তিন মেয়ে হওয়াতেই স্ত্রীর উপর খেপে ছিলেন বরকত। তা অশান্তির অন্যতম কারণ। আহিমার বাবা আবার জানিয়েছেন, পারিবারিক জমি বিক্রি করা নিয়েই তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের অশান্তি হত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ব্যাপক অশান্তি হয়। এ দিন সকালে বাড়ি থেকে কেউ না-বেরোনোয় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। বাড়িতে ঢুকে কয়েক জন দেখেন, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। দরজা ভেঙে দেখা যায়, বিছানায় আহিমা বিবি এবং বড় মেয়ে আমিনা খাতুনের অসাড় দেহ উপরে পড়ে আছে, মেঝেয় সামিনা ও হালিমার দেহ। বিছানার এক কোণে বসে ছিলেন বরকত আলি, মুখে কীটনাশকের গন্ধ। এতেই কিছু পড়শির সন্দেহ হয়, বরকত স্ত্রী ও তিন মেয়েকে খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
দুর্গাপুর শহর ছাড়িয়ে মোরাম রাস্তা ধরে জেমুয়া গ্রামে ঢোকার মুখেই ডান দিকে বরকত আলির বাড়ি। ইটের দেওয়াল, অ্যাসবেস্টস এর চাল। দেওয়াল, চাল, ঘরের আসবাব ভাঙচুরের চিহ্ন সর্বত্র। আশপাশ সুনসান। |
গ্রাম সূত্রে জানা যায়, বরকত ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই অশান্তি হত। বরকতের সঙ্গেই থাকতেন তাঁর মা আয়েষা বিবি। দাদা শেখ সজমানও পাশেই থাকেন। কিন্তু তাঁরা অশান্তি মেটানোর চেষ্টা করতেন না বলে কিছু প্রতিবেশীর অভিযোগ। ঘটনার পর থেকে ওই দু’জনের খোঁজ মিলছে না। এডিসিপি (পূর্ব) শুভঙ্কর সিংহ সরকার, তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
ওই গ্রামেরই অন্য পাড়ায় আহিমা বিবির বাপের বাড়ি। তাঁর বাবা শেখ মাহাই জানান, বরকতের প্রায় ১২ বিঘা জমি আছে। সেই জমিতে চাষ করেই দিন গুজরান হয়। শুধু চাষ করে সংসার চালানো বা মেয়েদের বিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় ভেবে এক বিঘা জমি বিক্রি করে কিছু টাকা জমানোর পরিকল্পনা করেছিলেন বরকত। কিন্তু আহিমা তা মানতে চাননি। তা নিয়েই অশান্তি। বৃহস্পতিবার রাতে কী নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল, তা অবশ্য তিনি জানাতে পারেননি। শেখ মাহাইয়ের কথায়, “এমন ঝগড়া তো প্রায় সব স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই হয়। কিন্তু তা বলে স্ত্রী-মেয়েকে খুন করে দেবে, এটা কল্পনাও করতে পারিনি।” বরকতকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। |