চাকরির অপেক্ষা ছেড়ে কাজ খুঁজে নিন, পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর
চাকরি পাওয়ার আশায় না-থেকে রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের নিজেদেরই ‘কাজ খুঁজে নেওয়ার’ পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার দুর্গাপুরে হস্তশিল্পের স্থায়ী মেলাকেন্দ্র ‘দুর্গাপুর হাট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু সরকারি চাকরিই কাজ! চাকরি না-পেলে কী করবেন! চা বিক্রি করুন। বিড়ির দোকান করুন। খাতা তৈরি করুন। কত কাজ আছে, খুঁজে নিলেই হয়! সব কাজেরই মূল্য আছে। হতাশ হবেন না। অপপ্রচারে কান দেবেন না।”
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হল কর্মসংস্থান। যা নিয়ে তাঁর উপরে প্রত্যাশার চাপও যথেষ্ট। কিন্তু তাঁর ঘোষিত জমি-নীতির কারণে (এ দিনও মমতা বলেছেন, তাঁর সরকার কোনও অবস্থাতেই জোর করে জমি নেবে না) পশ্চিমবঙ্গে বড় মাপের শিল্প প্রতিষ্ঠার আশু কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই শিল্পমহলের অনেকের অভিমত। আর ভারী শিল্প না-হলে এক লপ্তে খুব বেশি মানুষের কর্মসংস্থানও সম্ভব নয়। শিল্প ও রাজনীতিবিদ মহলের একাংশের মতে, এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বেকার ছেলে-মেয়েদের স্বনিযুক্তির উপরে জোর দিয়েছেন।
নয়াদিল্লির ‘দিল্লি হাট’-এর অনুকরণে দুর্গাপুরের পলাশডিহায় তৈরি ‘দুর্গাপুর হাট’-এর এ দিন উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশে এটি দ্বিতীয় স্থায়ী হস্তশিল্প মেলাকেন্দ্র।
‘দুর্গাপুর হাট’-এর উদ্বোধনে। ছবি: অশোক মজুমদার
এখানে বছরভর পনেরো দিনের মেয়াদে বিভিন্ন হস্তশিল্পের মেলা বসবে। যে সময়টা সাধারণত মেলার ‘মরসুম’ নয়, সেই এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যেও শিল্পীরা এখানে নিজেদের হাতে গড়া শিল্পসামগ্রী বিক্রির সুযোগ পাবেন। ‘দুর্গাপুর হাট’-এ প্রথম মেলাটি এ দিনই শুরু হল, চলবে ২৯ তারিখ পর্যন্ত। (মমতা অবশ্য বলেছেন, মেলা জমার পক্ষে পনেরো দিন মোটেই যথেষ্ট নয়। অন্তত এক মাস হস্তশিল্প প্রদর্শনের সুযোগ দিতে হবে।)
দুর্গাপুরের পরে সল্টলেক, শান্তিনিকেতন ও শিলিগুড়িতেও এই ধরনের হাট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্প দফতরের। সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়ে দেন, পর্যায়ক্রমে রাজ্যের সব মহকুমায় হস্তশিল্পের এমন হাট হবে। এবং ওই কাজে যুক্ত করা হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে, যাতে গ্রামবাংলায় কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ তৈরি হয়।
কিন্তু এ ধরনের হাট ‘সফল’ হবে কতটা?
বস্তুত তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকের মধ্যে কিছুটা সংশয় রয়েছে। এঁদের দাবি, বাংলার হস্তশিল্পকে শহুরে ক্রেতার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে গেলে শুধু একটা হাট খুলে দেওয়া যথেষ্ট নয়। বিপণনের ক্ষেত্রে আরও আগ্রাসী হতে হবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘লেগে থাকলে’ শহরের মানুষ ক্রমে হস্তশিল্পের কদর করবেনই। তাঁর কথায়, “হয়তো এক বছর ক্ষতি হবে। তাতে কী যায়-আসে! তার পর থেকে লাভের মুখ দেখবেন। নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না।” ওঁদের উদ্যোগে সরকার প্রয়োজনীয় ঋণ জোগাবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন দুর্গাপুরে আইকিউ সিটির-ও শিলান্যাস করেন মমতা। ওই প্রকল্পে ৭৫০ শয্যার হাসপাতালের সঙ্গে মেডিক্যাল, নার্সিং, ডেন্টাল, ফার্মাসি, প্যারামেডিক্যাল, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট ও সংযুক্ত স্বাস্থ্যবিজ্ঞান কলেজ গড়া হবে। গোটা প্রকল্পে প্রায় দশ হাজার কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি বাংলার উন্নয়নের কাজে বেসরকারি সংস্থাও স্বাগত।
এবং এই প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলকেও এক হাত নেন মমতা। বলেন, “ওরা পঁয়ত্রিশ বছর কিছু করেনি। আর আমরা মাত্র দশ মাস ক্ষমতায় এসেছি। লজ্জা নেই, শরম নেই, এরই মধ্যে বেরিয়ে পড়েছে! এত তাড়াহুড়ো কীসের বন্ধু! আপনারা এখন ঘুমিয়ে থাকুন।” পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের পথে কোনও বাধাই যে তিনি মানবেন না, তা জানিয়ে মমতার মন্তব্য, “নির্বাচনের আগে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, এক বছরের মধ্যে তা পূরণ করে দেব। তার পর শুধুই এগিয়ে যাব সোনার বাংলা গড়ার পথে। বাংলার উন্নয়নই আমার স্বপ্ন।”
প্রশাসনিক সুবিধার্থে তাঁর জেলা ভাগের পরিকল্পনার কথাও এ দিন ফের শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “এটা যোগাযোগের যুগ। মানুষ যাতে সহজে জেলা সদরে আসতে পারেন, সে জন্য আরও নতুন জেলা গড়া দরকার।” দুর্গাপুর-আসানসোলকে নিয়ে একটা আলাদা জেলা গড়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
তবে পঞ্চায়েত ভোটের বছরখানেক আগে এ দিন মমতার দু’টি সভার বক্তৃতা জুড়ে ছিল গ্রামবাংলায় কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গই। দিনের শেষে তাঁর আশ্বাসবাণী, “কোনও চিন্তা করবেন না। অনেক শিল্প হবে। সবাই এই বাংলার মাটিতে কর্মসংস্থান পাবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.