প্রশ্ন ‘সৌজন্য’ নিয়ে
দুর্গাপুর হাট উদ্বোধনে আমন্ত্রণ নেই মেয়রের
‘সৌজন্যের রাজনীতি’ নিয়ে এ রাজ্যে ইতিমধ্যে কম জলঘোলা হয়নি। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর দুর্গাপুর হাটের উদ্বোধনে শহরের মেয়র আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ফের একই প্রশ্ন উঠে গেল।
দুর্গাপুরে রাজ্যের প্রথম ‘আরবান হাট’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল পূর্বতন বাম সরকারই। বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন শহরের মেয়র, সিপিএমের রথীন রায়। কিন্তু শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্য প্রশাসন তাঁকে ডাকেনি। সিপিএমের অভিযোগ, আসন্ন পুরভোটের আগে তাদের করা কাজের কৃতিত্ব ‘ছিনতাই’ করতেই এই কৌশল। জেলার মন্ত্রী তথা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক অবশ্য ঘটনার দায় নিতে চাননি। আর ক্ষুদ্রশিল্প ও বস্ত্রমন্ত্রী, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়ার দাবি, এর পিছনে কোনও ‘উদ্দেশ্য’ ছিল না।
২০০৯ সালে দিল্লি হাটের আদলে এ রাজ্যেও ‘আরবান হাট’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক। মূলত পিছিয়ে পড়া এলাকার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিপণনই এই হাট গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। এর জন্য দুর্গাপুর, শান্তিনিকেতন, সল্টলেক ও শিলিগুড়িকে বেছে নিয়েছিল বাম সরকার। সে সময়ে মেয়র রথীনবাবুই আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) সঙ্গে কথা বলে দুর্গাপুর হাটের জন্য জাতীয় সড়কের দক্ষিণে জায়গা পছন্দ করেন। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় পলাশডিহায় প্রকল্পের শিলান্যাস করেন।
সভামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ও শাসকজোটের নেতা-মন্ত্রীরা। শুক্রবার বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
প্রায় ৪ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বাজেটে সেই হাট নির্মাণের কাজ সম্প্রতি শেষ হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের তাঁত ও বয়ন দফতর ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা করে এবং রাজ্য সরকার ২ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা দেয়। হাট গড়ার জন্য সাড়ে পাঁচ একর জমি ও ১৫ লক্ষ টাকা দেয় এডিডিএ। প্রকল্পের ‘নোডাল এজেন্সি’ও ছিল তারাই। সামগ্রী বিক্রির জন্য স্থায়ী স্টল, লোকসংস্কৃতির প্রসারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য একটি মুক্তমঞ্চ এবং শিশুদের বিনোদনের জন্য ‘চিলড্রেন্স কর্নার’ গড়ে তোলা হয়েছে। শুক্রবার সেই হাটেরই উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাপুরের দুই বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় ও নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও মানসবাবু এবং মলয়বাবুও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
মেয়রের খেদ, এই অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। তাঁর মতে, “শহরের ভিতরে এমন একটা অনুষ্ঠানে মেয়রকে না-ডাকা মোটেই শোভন নয়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার আবার বিষয়টির মধ্যে ‘রাজনীতি’ দেখছেন। তাঁর দাবি, “মেয়রকে বাদ দিয়ে একক কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা বস্তুত পুরভোটকে সামনে রেখেই। শিল্পশহরের বাসিন্দাদের প্রভাবিত করতেই বর্তমান রাজ্য সরকার এই কাজ করেছে। এটা মোটেই সুস্থ রুচির পরিচয় নয়।”
মেয়রকে আমন্ত্রণ না-জানানো নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছে অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও। তবে আইনমন্ত্রী মলয়বাবু এই ‘রুচি-সৌজন্যের তরজায়’ ঢুকতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “ক্ষুদ্রশিল্প দফতর কাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বা জানায়নি, তা তারাই বলতে পারবে। দলের তরফে আমার কিছু বলার নেই।” ক্ষুদ্রশিল্প মন্ত্রী মানসবাবু অবশ্য মেনে নিয়েছেন, “তাড়াহুড়ো করে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে। তেমন হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে শুধরে নেব।” তাঁর দাবি, “এর মধ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।”
বস্তুত, ‘তাড়াহুড়ো’ এবং ‘বিশৃঙ্খলা’র ছাপ ছিল গোটা অনুষ্ঠানের মধ্যেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে পৌঁছনো মাত্র নেতা-কর্মীরা প্রায় সকলেই চেয়ার ছেড়ে মঞ্চের দিকে এগোতে শুরু করেন। এক সময়ে কার্যত মঞ্চ ঘিরে ফেলেন তাঁরা। পিছনের লোকজন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে চিৎকার জুড়ে দেন। তার মধ্যেই বক্তব্য শুরু করেন মমতা। এই বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে পুরো সময় ধরে। চিৎকার চেঁচামিচিতে অনেকেই তাঁর কথা শুনতে পাননি।
তবে মেয়রের প্রতি ‘রাজনৈতিক অসৌজন্য’ দেখানোর অভিযোগকে মোটেও পাত্তা দিতে রাজি নন দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, সারা রাজ্যের মতো এই শিল্পশহরেও সিপিএমের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ৩৭টিতে পিছিয়ে আছে সিপিএম। সে কারণেই রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে মেয়রকে না ডাকার বিষয়টিকে বড় করে দেখাতে চাইছে তারা। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের মতে, “সামান্য বিষয়কে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর কিছু না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.