তোলা আদায়ের অভিযোগকে ঘিরে বিবাদের জেরে লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষ বাধল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর। জখম হলেন ১০ জন। মঙ্গলবার রাতে কোচবিহারের বক্সীরহাট থানার নাকারখানা এলাকার ঘটনা। পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে সরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “এখনও কোনও তরফে অভিযোগ মেলেনি। তা পেলে খতিয়ে দেখা হবে।”
যে এলাকায় গোলমাল হয়েছে, সেখানে বাণিজ্য কর বিভাগের একটি চেকপোস্ট রয়েছে। তার অন্য দিকে রয়েছে অসমের জোড়াই। এ দিকে বক্সীরহাট। যে কোনও ট্রাক কিংবা পণ্যবাহী গাড়ি ওই চেকপোস্টে পরীক্ষা করা হয়। গড়ে রোজ অন্তত ২ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াত করে। অভিযোগ, ওই চেকপোস্টে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার সময় ট্রাক চালকদের থেকে তোলা আদায় করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বাম জমানায় তোলাবাজির কথা জেনেও পুলিশ-প্রশাসন নীরব থাকত। নতুন সরকারের আমলেও ছবিটা বদলায়নি। এলাকার দখল নেওয়া নিয়ে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ রয়েছে। সেই বিবাদের জেরেই ওই সংঘর্ষের ঘটনা।
দলীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই এলাকায় জনসভা করছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অনুগামী বলে পরিচিত বক্সীরহাট ব্লক যুব তৃণমূল নেতা শঙ্কর সাহা ও তাঁর সমর্থকেরা। সভা চলাকালীন স্থানীয় বিধায়ক তথা যুব নেতা অর্ঘ্য রায়প্রধানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ভানুকুমারী-২ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি দেবেন মণ্ডলের গোষ্ঠীর সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষই ইট-পাথর ছোড়ে। লাঠির ঘায়ে এক জনের মাথা ফাটে। সভা দ্রুত শেষ করে দেওয়া হয়।
গোলমালের খবর পেয়ে বক্সীরহাট থানার ওসি বিশ্বাশ্রয় সরকার বড় পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। দেবেনবাবুর দাবি, “দলের অনুমতি না নিয়েই যুব সংগঠনের কিছু লোক সভা ডাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ব্যবহার করে সভার জন্য চেকপোস্ট থেকে কুপন দিয়ে টাকা তোলা তোলা হয়েছে। তা নিয়ে খোঁজ নিতে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের উপরে হামলা চালানো হয়।আমার ও সঙ্গীদের তিনটি মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। ৪ জন জখম হন।” তাঁর আরও অভিযোগ, “চেকপোস্ট থেকে ওরা (শঙ্করবাবুর লোকজন) টাকা তুলত। আমরাই তা বন্ধ করেছি। তার পরেই পথসভার নাম করে কুপন ছাপিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে।”
পথসভার উদ্যোক্তা শঙ্করবাবুর পাল্টা দাবি, চেকপোস্ট থেকে টাকা তোলার বিরোধিতায় তাঁরাই দীর্ঘদিন ধরে সরব। তিনি বলেন, “যুব সংগঠন নিজের মতো করে কর্মসূচি নিয়েছে। এতে ব্লক নেতৃত্বকে জানানোর কী আছে? আসলে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি বলে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। সে জন্যই অঞ্চল সভাপতির লোকজন আমাদের পথসভায় হামলা করেছে। আমাদের ছ’জন জখম হন।” দু’তরফই দাবি করেছে, জেলা নেতাদের সব জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশ পেলে পুলিশে অভিযোগ করা হবে। জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথবাবুর মন্তব্য, “আমি কলকাতায় রয়েছি। খোঁজ নিয়ে যা বলার বলব।” অর্ঘ্যবাবু বলেন, “আমার গোষ্ঠী বলে কিছু নেই। ওখানে কী হয়েছে, তা ব্লক নেতৃত্বই ভাল বলতে পারবেন।” |