|
|
|
|
ঝড়বৃষ্টিতেও জমজমাট চৈত্র সেল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
বিকেলে নিয়মিত কালবৈশাখীর দাপট। তার উপরে জিনিসপত্রের দাম বেশি। তবু চৈত্র সেলের ভরা বাজারে নবদ্বীপে উপছে পড়ছে ভিড়।
সেই সেলের বাজার এখন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাধাবাজার পার্কে। রাস্তাটি খোলা থাকায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন এলাকার বাসিন্দারা। একেই রাস্তা ছোট। দু’পাশে বাড়ি। দোকানপাটে ভরা। ঘনবসতির মধ্যে এই রাস্তাতে সাধারণ সময়েই চলাফেরা করা দায়। তার উপরে চৈত্রে সেই রাস্তা জুড়েই বসত সারি সারি অস্থায়ী দোকান। প্রায় সিকি মাইল জুড়ে নবদ্বীপের রাধাবাজারের সেই ‘সেলের বাজার’ প্রতিবছর কার্যত জতুগৃহ হয়ে থাকত। দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি সেই ছোট ছোট দোকানে লক্ষ লক্ষ টাকার জামাকাপড়ের স্তূপ ঘিরে ক্রেতা বিক্রেতাদের ভিড়ে দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি হত। কোনও অঘটন ঘটলে দমকলের পক্ষে যেন সম্ভব ছিল না সেই রাস্তায় ঢোকা। এলাকার কোনও বাসিন্দা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বার করে নিয়ে আসাটাও যেন ছিল কার্যত অসম্ভব।
রাধাবাজারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রণব রায় বলেন, “এমনিতেই এই এলাকাটি বড় বাজার। অজস্র দোকানপাট। তার মধ্যে চৈত্র সেলের সময় এই পুরো এলাকাটি দিয়ে যাতায়াত অসম্ভব হয়ে উঠত। বাড়ি থেকে বেরোতেই ভয় হত।” ওই এলাকার আর এক বাসিন্দা সুপ্রভা কর্মকার বলেন, “গোটা মাস জুড়ে সারাক্ষণ ভিড় লেগেই থাকত। যেন মনে হত রাস্তা অবরোধ হয়েছে। তার তুলনায় এ বার অনেক ফাঁকা লাগছে।” নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “কিছু মানুষের জন্য গোটা শহরের অসুবিধা হতে দেওয়া যায় না। তাই সেলের বাজার আমরা রাস্তা থেকে সরিয়ে পার্কে নিয়ে গিয়েছি। সে জন্য পরিকাঠামোও আমরা তৈরি করেছি।” সেলের বাজার করতে এসেছিলেন শঙ্কর বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “রাস্তায় বাজার করতেও অসুবিধা হত। এখানে ভিড় অপেক্ষাকৃত কম। তা ছাড়া, যাঁরা এখন আসছেন, তাঁরা সেলের বাজার করতেই আসছেন। তাই অপেক্ষাকৃত সহজেই বাজার করা যাচ্ছে।” বিক্রেতা কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “আগে যাঁর দোকান বা বাড়ির সামনের রাস্তায় বসতাম তাঁরা ইচ্ছে মতো আটশো থেকে বারোশো টাকা করে চাইতেন। এখন পুরসভা ৩০০ টাকা করে ভাড়া বেঁধে দিয়েছেন। আলোর জন্য অতিরিক্ত ৩০ টাকা। এতে আমাদের সমস্যা কমেছে।” |
|
চৈত্র সেলের বাজার নবদ্বীপে বরাবরই খুব ভাল। বিক্রেতা গৌর মোদক বলেন, “পুজো বা ঈদের চেয়েও চৈত্র সেলের বাজারে বিক্রি বাটা বেশি হয় নবদ্বীপে।” কেন? স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানন, নবদ্বীপকে কেন্দ্র করে একটি বড় গ্রামীণ বাজার রয়েছে। তাতে নদিয়া বা বর্ধমানের পূর্বস্থলীর অনেক গ্রামীণ এলাকা থেকে শুধু ক্রেতারাই নন, গ্রাম থেকে বাজার করতে আসেন ব্যবসাদারেরাও। প্রবীণ ব্যবসায়ী সুভাষ সাহা বলেন, “নবদ্বীপ বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে গিয়ে গ্রামের হাটে বা দোকানে জিনিসপত্র বেচার প্রথা বহু দিনের। এখন সেই প্রথায় কিছুটা ভাঁটা পড়েছে। তবু গ্রামীণ এলাকা থেকে দোকানদার, ব্যবসায়ীদের আসার স্রোত এখনও যথেষ্ট।” যে কারণে এই সময়ে নবদ্বীপে অনেক বস্ত্রব্যবসায়ীকেই নিজেদের ‘কারখানা’ তৈরি করে জামাকাপড় তৈরি করতে হয়। ব্যবসায়ী প্রদীপ সাহা বলেন, “ঘর ভাড়া করে কাপড় সেলাইয়ের মেশিন নিয়ে মহিলারা বসে জামা কাপড় বানাচ্ছেন, এই দৃশ্য আগে নিয়মিত দেখা যেত। এখনও দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা ছিট কিনে আনেন কলকাতা থেকে। তারপরে জামা তৈরি করেন স্থানীয় ভাবেই।” আর এক ব্যবসায়ী রণজিৎ বসু বলেন, “অনেকে কলকাতা থেকে পাইকারি হারে জামা কিনে নিয়ে আসেন। সেই জামা এখান থেকে কিনে নিয়ে যান গ্রামের ব্যবসায়ীরা।”
খুচরো ও পাইকারি দু’ধরনের বিক্রিবাটাই তাই এই বাজারে রমরম করে চলে। ব্যবসায়ী সমিতির উত্তম সাহা বলেন, “দুর্গাপুজো বা ঈদের বাজারে সাধারণত ক্রেতারা আরও দামি জিনিসের খোঁজ করেন। সেক্ষেত্রে তাঁরা সরাসরি কলকাতা চলে যান। কিংবা ব্র্যান্ডেড জিনিসের সন্ধান করেন। তাই সেই জিনিস যাঁরা রাখেন, সেই বড় দোকানগুলিরই লাভ হয়। কিন্তু চৈত্র সেলে কমদামি জিনিসের বিক্রি বেশি। সেই ক্রেতারাও বড় শহরে বা দোকানে যাওয়ার বদলে মফসস্লের অস্থায়ী দোকানে বেশি স্বচ্ছন্দ্য। এই কারণেই বিক্রিবাটার সংখ্যা চৈত্র সেলে বেশি।” |
|
|
|
|
|