মৃদু ভূকম্পনে আতঙ্ক দুই মেদিনীপুরে
দেশ ও রাজ্যের সঙ্গে বুধবার দুপুরে মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হল পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরেও। কম্পনের তীব্রতা কম হলেও আতঙ্ক ছড়ায় যথেষ্ট। রটে নানা গুজব। তবে, কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরা ছাড়া বড় কোনও বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মলয় হালদার বলেন, “দুর্যোগের আশঙ্কায় উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।”
বুধবার বেলা সোয়া ২টো নাগাদ মৃদু ভূকম্পনে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকততটে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস না হলেও দিঘা, মন্দারমণির অনেক পর্যটক আতঙ্কে হোটেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে জানান, হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সচিব বিপ্রদাস চক্রবর্তী। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সৌমেন পাল জানিয়েছেন, মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। দিঘার সমুদ্রপাড়ের পাঁচটি পয়েন্টে নুলিয়া রেখে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সতর্কতা জারির পরে তমলুকে রূপনারায়ণের তীরে পুলিশি টহল। ছবি তুলেছেন পার্থপ্রতিম দাস
তাজপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা শান্তনু সাহা বলেন, ‘‘দুপুরের খাওয়ার সময়ই ভূমিকম্প টের পাই। খাবার টেবিলে জলের গ্লাস ও ঘরের সিলিং ফ্যানগুলি নড়তে থাকে। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা না বাড়লেও প্রবল গর্জন শোনা যায়।’’ এ দিন বিকেল থেকেই আকাশ মেঘলা করে অন্ধকার ঘনিয়ে আসায় মানুষের মনে ভয় বাড়ে।
খেজুরি ২ ব্লকের অজানবাড়িতে আবার দু’টি মাটির বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে বিডিও জগন্নাথ ভড় জানিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সতর্ক করে দেওয়ার পাশাপাশি ত্রাণব্যবস্থা প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন জানান।
এ দিন ক্লাস চলাকালীন হলদিয়ার মহিষাদল গয়েশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ত্রিতল ভবনে ফাটল ধরা পড়ে। সেই খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসেন মহিষাদলের ভারপ্রাপ্ত বিডিও প্রদ্যুৎ পালই, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী প্রমুখ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা পালচৌধুরী জানান, ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোয় স্কুলে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
ঝোড়ো হাওয়া হলদিয়ায়। ছবি তুলেছেন আরিফ ইকবাল খান।
চৈতন্যপুরের বারশুকলালচকের রামকৃষ্ণ বেরার বছর দেড়েকের ছেলে বাপ্পাদিত্য আবার খাট থেকে পড়ে গিয়ে সামান্য আঘাত পান।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতে কম্পনের মাত্রা এতটাই মৃদু ছিল যে কোনও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। একতলা বাড়িতে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কম্পন অনুভব করেননি। যাঁরা চার তলা বা পাঁচ তলাতে ছিলেন তাঁরা একটু বেশি কম্পন অনুভব করেছেন। গ্রামীণ এলাকার মানুষ অবশ্য ভূমিকম্প বুঝতে পেরেছেন পুকুরের জল দেখে। হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি ছাড়াই দুলে উঠেছিল পুকুরের জল। প্রথমে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু আর কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় মানুষের মনে স্বস্তি ফেরে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “অতি মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছিল। কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।”
এ দিন দফায়-দফায় মৃদু কম্পনের রেশ অনুভব করেছেন ঝাড়গ্রাম শহরের বহুতলগুলির বাসিন্দারা। ঝাড়গ্রাম শহরের একটি বহুতলের সাত তলার বাসিন্দা শিপ্রা মুখোপাধ্যায় তখন ভাত খাচ্ছিলেন। শিপ্রাদেবী বলেন, “হঠাৎই দেখি ভাতের থালা কাঁপছে। থরথর করে চেয়ার, টেবিল সব কাঁপছে। প্রায় ৫-৬ বার কম্পন অনুভব করেছি।” শিপ্রাদেবীর মেয়ে মধুরিমা বলেন, “দুপুরে শুয়েছিলাম। কম্পনের জেরে তন্দ্রা কেটে যায়। অনেকক্ষণ ধরে খাটটা নড়ছিল। ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” বিকেল ৪টে ২০মিনিট নাগাদ ফের একবার মৃদু কম্পন অনুভূত হয় বলে বহুতলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.