যাঁর মোহালির মাঠে থাকার কথা ছিল, তিনি গুরগাঁওতে সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যস্ত। জানাচ্ছেন, কী ভাবে বিশ্বকাপ জয়ের পরে ডুয়েল লড়েছেন মারণ রোগ ক্যানসারের সঙ্গে।
যাঁর বদলে ইনি, তিনি আবার তাঁরই ‘দ্রোণাচাযর্’। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে তো ‘দ্রোণাচার্য’-ই মনে করেন যুবরাজ সিংহ।
প্রিয়তম শিষ্য যখন দিল্লিতে সাংবাদিকদের ঢলের সামনে ইন্ডিয়ানাপোলিসে কেমোথেরাপির দিনগুলোর কথা বলছেন, তার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁরই গুরু মোহালির মাঠে শিষ্যের ব্যাটন নিয়ে কুচকাওয়াজের অপেক্ষায়। যুবরাজের মহল্লায় নেটে পড়ে মহারাজ। বৃহস্পতিবার যুবরাজ মাঠে এলে তাঁর সামনে তিনে তিন করার হাতছানি।
“কাল আমরা হারি বা জিতি, সবটাই যুবরাজকে উৎসর্গ করব। আমরা যা করছি, ওর জন্যই করছি। ওকে বড় হয়ে উঠতে দেখেছি আমি। আশা করব খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক যুবরাজ,” পরম মমতার সঙ্গে এ দিন আনন্দবাজারকে বলছিলেন সৌরভ। এ যদি হয় আবেগের ছবি, মোহালি মাঠের ক্রিকেট ক্যানভাসটা একটু আলাদা। সেখানে চোখ টানছেন দু’রকমের সৌরভ। |
পুণে ওয়ারিয়র্সের তিন নম্বর ম্যাচের আগে অধিনায়ক সৌরভ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার জায়গায় নেই। ঘোর শাহরুখ-অনুরাগীও সৌরভকে দশে সেই দশই দিতে বাধ্য। রাইডার-স্যামুয়েলস-স্মিথ-দিন্দাদের নিয়ে লড়ে নিচ্ছেন তো। সামনে হ্যাটট্রিকের সুখস্বপ্ন। কিন্তু ব্যাটসম্যান সৌরভ? মুম্বই ম্যাচে ৬ বলে ৩। আর গিলক্রিস্টের কিংদের সামনে ১৮ বলে ২০। নিজে যদিও এ দিন বললেন, “আগের ম্যাচটায় বল ভাল হিট করছিলাম।” তবুও ‘দাদা’-র ব্যাটিংয়ে এখনও সেই চেনা ‘সৌরভ’ নেই।
পুণে অধিনায়ক সৌরভের ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের তুলনা টানা যেতে পারে ফুটবল দুনিয়ায় হোসে মোরিনহোর সঙ্গে। সাইডলাইনে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ বা মাঠে ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি, বরাবরই ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’। চল্লিশতম জন্মদিন থেকে মাস তিনেক দূরে থাকা সৌরভকে নিয়েও হরভজন সিংহকে বলতে হয়, “কী ক্যাপ্টেন্সি রে বাবা! দাদিই ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক।” সর্দার ভুল কিছু বলেননি। চলতি বছরে অধিনায়ক সৌরভ যা ছুঁচ্ছেন, তাই যেন সোনা। তালিকা ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাকে এক দিনের ক্রিকেটে ভারত সেরা করা। তার পর আইপিএলে দুইয়ে দুই। প্রথমে মুম্বই। পরে পঞ্জাব।
বুধবার প্র্যাক্টিসের ছবিটাই দেখা যাক। মোহালির গরমে প্রায় চার ঘণ্টা টিমকে নিয়ে লড়লেন সৌরভ। কখনও সঙ্গী মার্লন স্যামুয়েলস, কখনও জেসি রাইডার। এই রাহুল শর্মা-মুরলী কার্তিকদের নিয়ে ব্যাটে-বলে করছেন তো তার পর মুহূর্তেই ব্যাট-প্যাড তুলে রেখে নেটে হাত ঘোরাচ্ছেন। বোলার সৌরভকে এ বার এখনও দেখেনি আইপিএল। পুণে অধিনায়ক কিন্তু নিজেকে তৈরি রাখছেন।
মোহালির উইকেটের কিউরেটর দলজিৎ সিংহ বলছিলেন, “মোহালিতে উইকেট কোনও দিন খারাপ পাবেন না। খেলতে পারলে ব্যাটসম্যানরা রান পাবে। বল করতে পারলে বোলাররা উইকেট পাবে।” একদম ঠিক। টি-টোয়েন্টিতে যেমন উইকেট লাগে, ঠিক তেমনই উইকেট হয় মোহালিতে। উপর-উপর যা দেখা যাচ্ছে, ১৭০-৮০ রানের ম্যাচ হবে। গিলক্রিস্টের বাহিনী তাদের ঘরের মাঠে প্রত্যাঘাত করতে চাইবেই। এই আইপিএলে দু’টো ম্যাচ খেলে তাঁদের ভাঁড়ার শূন্য। ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচ। খাতা খোলার সোনার সুযোগ যে তাঁদের সামনে, এ দিন জানিয়ে রাখলেন গিলক্রিস্ট। যদিও তাঁর দলে মশলার অভাব আছে। আবার আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, মোহালিতে কাল ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। পঞ্জাব অধিনায়ক নিজে ছোটখাটো ঝড় তোলার রাখেন বটে, কিন্তু তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম। আগের বারের তারকা পল ভলথাটির ব্যাটও এখন পর্যন্ত ‘স্পিকটি নট’। ডেভিড হাসি বা শন মার্শের ব্যাট চললে প্রীতি জিন্টার মুখে যা হাসি ফুটতে পারে।
প্রীতির গালের টোল নিয়ে অবশ্য দাদাপ্রেমীদের ভাবার সময় নেই। তাদের আকুতি অন্য জায়গায়। ক্যাপ্টেন সৌরভ শুধু নয়, ব্যাটসম্যান সৌরভকেও তো দেখতে চায় তারা। দেখতে চায় একটা ২০ বলে ৪৫ বা ৩৫ বলে মন ভাল করে দেওয়া ৫৫। প্রার্থনা ঘুরেফিরে সেই একটাই। ৫ মে-র আগে দু’তিনটে ম্যাচে রান আসুক ব্যাটে। আর ইডেনে শাহরুখের সামনে হোক ‘বাপি বাড়ি যা...।’ ব্যাটসম্যান সৌরভ কী সে রকমই কিছু ভাবছেন? কে জানে। রাহুল শর্মার বলে নেটে স্টেপ আউট করা ছক্কাগুলো তো নিয়ম করে মাঠের বাইরেই পড়ল! |