শুধু মারধরই নয়, মঙ্গলকোট থানার লকআপে পুলিশ তাঁর কাছে ‘কিছু’ চেয়েছিল বলেও আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করলেন খুনের আসামি। ওসি দীপঙ্কর সরকার তা অস্বীকার করলেও বিচারক তাঁকে সতর্ক করে জানান, এমন অভিযোগ ভবিষ্যতে আর উঠলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলবেন বলে তাঁকে মুচলেকাও দিতে হয়েছে।
লকআপে মারধরের অভিযোগ ওঠাতেই বুধবার মঙ্গলকোটের ওসি-কে আদালতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন কাটোয়ার এসিজেএম অঞ্জনকুমার সরকার। চার দিন পুলিশ হেফাজতের শেষে মঙ্গলবার জাহিরুল মল্লিক নামে এক খুনের আসামি তাঁর এজলাসে এসে পোশাক খুলে দেখান, পুলিশ কী ভাবে তাঁকে ‘মারধর’ করেছে। এ দিন ওসি-র সঙ্গে তাঁকেও ফের এজলাসে হাজির করাতে বলা হয়েছিল। এজলাসে এসে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ওসি দাবি করেন, “আমি বা আমার কোনও পুলিশকর্মী আসামিকে মারধর করেনি।”
বিচারক জাহিরুলকে আসামিদের খাঁচা থেকে বেরিয়ে ওসি-র পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেন। খাঁচা থেকে বেরিয়েই বিচারকের সামনে হাতজোড় করে জাহিরুল ফের বলেন, “আমায় ঝুলিয়ে মেরেছে। গতকাল আপনাকে দেখিয়েছিলাম। আজও ফের দেখাতে পারি কোথায় কোথায় মেরেছে।” তাঁর অভিযোগ, “বড়বাবু (ওসি) আমায় বলেছিলেন, জমি বিক্রি করে কিছু একটা দিতে। তা দিতে অস্বীকার করায় আমায় মারধর করা হয়েছে।” এর পরেই বিচারক ওসি-কে সতর্ক করেন। |
মঙ্গলকোটে এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগে গত ৫ এপ্রিল বর্ধমান থেকে জাহিরুলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ৬ এপ্রিল আদালতে তোলা হলে তাঁকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরেই তাঁর উপরে নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ। যদিও মঙ্গলবার ফের আদালতে হাজির করানোর আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে জাহিরুল কিছু বলেননি। চিকিৎসকের কাছে মুখ খুললে পুলিশ আরও পেটানোর হুমকি দিয়েছিল বলে পরে তিনি আদালতে অভিযোগ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, পুলিশ লকআপে জেরা করার নামে কোনও বিচারাধীন বন্দিকে মারধর করা যায় না। রাজ্যের আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটকও ইতিমধ্যে সে কথা জানিয়েছেন। জাহিরুলের অন্যতম আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওসি দোষ স্বীকার করেননি। তবে আদালত মনে করেছে, ওসি-র গাফিলতি রয়েছে। সে কথা বিচারক তাঁর রায়ে জানিয়েছেন।”
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক বলেন, লকআপে বন্দিদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলবেন বলে ওসি-কে মুচলেকা দিতে হবে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে দীপঙ্করবাবু মুচলেকা জমা দেন। জাহিরুলকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর আইনজীবী আর্জি জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় জাহিরুলের চিকিৎসার ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন। তা মঞ্জুর করে বিচারক কাটোয়া উপসংশোধনাগারের জেলরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন। |