পড়শি গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে মালদহ থানার মুচিয়া এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছে। ওই বধূর চিৎকার শুনে উত্তেজিত গ্রামবাসীরা ছুটে যান। গৃহবধূকে উদ্ধারের পরে গ্রামবাসীরা অভিযুক্তকে ধরে বেধড়ক মারধরের পরে তাঁর সারের দোকানে আগুন লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ মালদহ থানার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে। দমকল গিয়ে আগুন নেভায়। পুলিশ ওই দগ্ধ সারের দোকানে তল্লাশি চালিয়ে একটি পাইপগান উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত দুলাল চাকি মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সোসালিস্ট পার্টির উপপ্রধান ছিলেন। তিন মাস আগে এক ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ৯ দিন জেলে থাকায় তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। ঘটনার পরে গ্রামবাসীরা ওই গৃহবধূকে মৌলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভর্তি করান। পাশাপাশি অভিযুক্ত প্রাক্তন উপপ্রধানকে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা অভিযুক্তকে বেধড়ক মারধর করে তার দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। দমকল গিয়ে আগুন নিভিয়েছে। অভিযুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ত্র আইনেও মামলা রুজু হয়েছে।” মুচিয়ার প্রাক্তন উপপ্রধান দুলালবাবুর দাবি, “আমায় চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারিণীর পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই গোলমাল চলছে অভিযুক্তের। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে একাধিকবার তানায় অবিযোগ করেছে। তা নিয়ে একাধিক মামলাও চলছে। অবিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণীর পরিবারের পক্ষ থেকে এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, এদিন সকাল ৮ টা নাগাদ মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত লাগোয়া নজরপুর গ্রামের এক দিনমজুরের গৃহবধূ জিনিস আনতে মুদি দোকানে যাচ্ছিলেন। সেই সময় পঞ্চায়েত অফিস লাগোয়া মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান দুলালবাবু ৩-৪ জন সঙ্গীকে নিয়ে নিজের সারের দোকানে বসেছিলেন। তাঁর দোকানের কাছে আসতেই ওই প্রাক্তন উপপ্রধান ওই গৃহবধূকে জবরদস্তি সারের দোকানের পাশে একটি ঘরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। ঘরের ভিতর থেকে ওই বধূ চিৎকার শুরু করলে নজরপুর ও মল্লিকপাড়ার বাসিন্দারা ছুটে যান। গ্রামবাসীদের দেখে ওই প্রাক্তন উপপ্রধান পালাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। গ্রামবাসীরা তাকে মাটিয়ে ফেলে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। উত্তেজিত গ্রামবাসীরা অভিযুক্তের সারের দোকান ও পাশের ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেন। মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান উত্তম চৌধুরি বলেন, “এর আগে এক ব্যক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মারধর করার অভিযোগে পুলিশ ওই উপপ্রধানকে গ্রেফতার করেছিল। ৯ দিন জেল খাটায় দুলাল চাকির সদস্যপদ সদর মহকুমাশাসক খারিজ করে দেন।” গ্রামবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, দুলাল ও তাঁর কয়েকজন সাকরেদ পঞ্চায়েত অফিসের পাশে এক অস্থায়ী চাটাই ঘর তৈরি করে সেখানে নানা ধরনের কুকর্ম করতেন। গ্রামের রাস্তা গিয়ে কোনও মহিলা গেলেই নানরকম অশ্লীল ইঙ্গিত করা হত। থানায় জানানোর পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এলাকার মানুষ ভয়ে ওদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারতেন না। আগুনে পুড়ে যাওয়া ওই ঘর থেকে পুলিশ প্রচুর খালি মদের বোতল ও নানা আপত্তিকর জিনিস উদ্ধার করেছে। |