সকাল থেকে হাসপাতালের বাইরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রোগীরা, কিন্তু ডাক্তারের দেখা পাওয়া দায়। সুতরাং বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে ফিরে যাওয়া ছাড়া বেশিরভাগ দিনই অন্য উপায় থাকে না বলে অভিযোগ রোগীদের। রোগীরা জানাচ্ছেন, নওদার টুঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ প্রায় রোজকার ছবি। বেলা এগারোটাতেও রোগীদের লাইন এবং ডাক্তার না আসার অভিযোগ শুনে হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট শম্ভুনাথ বড়াইকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর উত্তর, “ডাক্তারবাবু আসেননি।” কেন? “সেটা তিনিই বলতে পারবেন।”
কোনও নার্স এমনকী চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও নেই এখানে। চিকিৎসক অনিয়মিত। মানেকা বিবি বলেন, “পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছিল। জ্বরও এসেছিল। কিন্তু ডাক্তারবাবু নেই। নার্স নেই।” ফলে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নওদার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। বালি-১, ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং নদিয়ার পলাশিপাড়া এলাকার মানুষ মূলত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। তাদের অভিযোগ, দূরদূরান্ত থেকে এসে ডাক্তারের দেখা মেলে না, এমনকী ওষুধও পাওয়া যায় না সবসময়। স্থানীয় বাসিন্দা শীর্ষেন্দু মণ্ডল বলেন, “এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থেকেও নেই। এলাকার মানুষ তাই পলাশিপাড়া বা আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল কিংবা পাটিকাবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। তাতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমন খরচও বেশি হয়।”
স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য আরএসপি’র বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “ওই হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগও শোনা যায়। আমরা একাধিকবার অভিযোগ জানালেও কোনও ফল মেলেনি।’’
এ ছাড়া হাসপাতাল ভবনের হালও বেশ খারাপ। সংস্কারের অভাবে ভবনের বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কোনও সীমানা প্রাচীর না থাকায় হাসপাতাল চত্বরেই রয়েছে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “ওই বাড়িটির কিছু অংশ অনেকদিন মেরামত করা হয়নি। সেখানে আগাছা জন্মে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, সাধারণত কেউ সে সব দিকে যান না। সেখানে এখন সমাজবিরোধীদের আড্ডা হয়েছে।” শম্ভুনাথবাবু জানান, হাসপাতালে নার্সিং স্টাফ, সুইপার নেই। দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি বলে হাসপাতালের আবাসনে স্বাস্থ্যকর্মীরাও থাকতে পারেন না। এছাড়া আগে বহুবার এখানে চুরি হয়েছে ফলে কেউই থাকতে ভরসা করেন না। বর্তমানে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে যিনি আছেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে নওদা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাদিত্য বক্সি বলেন, “টুঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে যিনি আছেন তাঁকেই সামলাতে হয় সর্বাঙ্গপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। সে কারণেই তিনি টুঙ্গিতে রোজ যেতে পারেন না। বাকি সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।” |