ফের ‘কাঠগড়ায়’ সরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ, ‘দায়সারা’ চিকিৎসায় রোগী-মৃত্যুর।
অভিযোগ, সিলিন্ডারে অক্সিজেনই ছিল না। সেই ‘খালি’ সিলিন্ডারের নল গুঁজে দেওয়া হয়েছিল নাকে। মিনিট দশেকের মধ্যেই ছটফট করে মারা যান দিলীপ ঘোষ (৬৫) নামে দুর্ঘটনায় আহত এক বৃদ্ধ। মঙ্গলবার সকালে ওই ঘটনার পরে বহরমপুরের নিউ জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিবার। অভিযোগ, এই সময়ে সুপারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে দিলীপবাবুর স্বজনদের ‘শুনতে’ হয়, রোগী-মৃত্যু হলেই চিকিৎসায় ‘গাফিলতির’ অভিযোগ করা রোগীর বাড়ির লোকের ‘অভ্যাস’ হয়ে গিয়েছে।
তবে জনতার ক্ষোভ ক্রমশ চড়তে থাকায় ‘বেগতিক’ বুঝে শেষ পর্যন্ত দিলীপবাবুর পরিবারের লোকজনদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন হাসপাতালের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক। তাঁর বক্তব্য, “কর্তব্যরত নার্সদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেছেন মৃতের পরিবার। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যা শুনে দিলীপবাবুর ছেলে সুদীপ ঘোষের মন্তব্য, “চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গড়া নিয়মমাফিক ব্যাপার। কিন্তু তার রিপোর্ট কোনও দিন প্রকাশ পেয়েছে কি?” তাঁর আক্ষেপ, “একটু অক্সিজেন পেলেই বাবা বেঁচে যেতেন।”
|
হাসপাতালের বাইরে মৃতের পরিজনেরা। — নিজস্ব চিত্র |
মুর্শিদাবাদে সরকারি হাসপাতালে ‘গাফিলতি’র অভিযোগ নতুন নয়। এ বছর জানুয়ারি মাসে এই হাসপাতালেই শামিমা আখতার নামে এক প্রসূতিকে ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছিল। জেলার অন্যতম সরকারি প্রসূতিসদন মাতৃমঙ্গলে জীবাণুনাশকের পরিবর্তে অ্যাসিড দিয়ে পরিষ্কার করায় পুড়ে গিয়েছিলেন এক প্রসূতি। মারা গিয়েছিল তাঁর সদ্যোজাত।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সৈয়দাবাদ থেকে ট্রেকারে খাগড়া বাজারে যাচ্ছিলেন দিলীপবাবু। দিলীপবাবুদের ট্রেকারটির সঙ্গে ওই রুটের অন্য ট্রেকারের শুরু হয় রেষারেষি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধাক্কা লাগে দু’টি গাড়ির। আহত হন চার জন। তাঁদের মধ্যে দিলীপবাবুর আঘাতই ছিল গুরুতর। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাঁকে বহরমপুর নিউ জেনারেলে ভর্তি করান।
মৃতের পুত্রবধূ তপতীদেবীর ক্ষোভ, “ভর্তি করার পরে চিকিৎসক বাবাকে দ্রুত অক্সিজেন দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ওয়ার্ডে কেউই অক্সিজেন সিলিন্ডার বাবার শয্যার কাছে নিয়ে গেলেন না। আমরা অনেক বলায় কর্তব্যরত নার্সেরা চোখের ইশারায় দেখিয়ে দিলেন, ঘরের কোণায় রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার। আমরা সিলিন্ডারটা বয়ে এনে দেওয়ার পরে এক নার্স বাবার নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, সিলিন্ডারে অক্সিজেন নেই! বাবা তখনও শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করছিলেন।”
তপতীদেবীরা নার্সদের সে কথা বলায় অন্য সিলিন্ডার লাগানো হয়। তবে মিনিট কয়েকের মধ্যেই মারা যান দিলীপবাবু। |