নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
নান্টু পালকে ৩২-১৮ ভোটে হারিয়ে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সাধারণ সচিব হলেন অরূপরতন ঘোষ। মঙ্গলবার মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কার্যনির্বাহী সমিতির পদাধিকারীদের নির্বাচন হয়। তাতে ওই পদে জয়ী হন অরূপবাবু। ২ বছর তিনি ওই পদে থাকবেন। তিনি আইএনটিটিইউসি’র দার্জিলিং জেলা সভাপতিও। অন্যান্য পদের জন্য নান্টুবাবু এবং অরূপবাবুদের তরফে যে দুটি প্যানেল এ দিন জমা পড়েছিল তাতেও অরূপবাবুর প্যানেলের সকলেই এ দিন নির্বাচিত হয়েছেন।
মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কার্যনির্বাহী সমিতির নির্বাচকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের বিবাদ প্রকাশ্যে আসে।
|
অরূপরতন ঘোষ।
— নিজস্ব চিত্র। |
তার উপর সম্প্রতি নান্টুবাবু কংগ্রেসের একাংশের বিরাগভাজন হয়ে পড়ায় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাচন তাঁর কাছে কঠিন হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে ক্লাবগুলি থেকে কার্যনির্বাহী সমিতির প্রতিনিধি বাছতে এবং কো-অপ্ট পদ্ধতিতে প্রতিনিধি ঠিক করতে নির্বাচন করতে হয়। দুইটি ক্ষেত্রেই নান্টুবাবুর প্যানেলের তুলনায় অরূপবাবুদের গোষ্ঠীর প্যানেলের বেশিরভাগ সদস্য নির্বাচিত হন। তাতেই বিপাকে পড়েন নান্টুবাবু।
বছর দু’য়েক আগে অরূপবাবুকে ১ ভোটে হারিয়ে ক্রীড়া পরিষদের সচিব হয়েছিলেন নান্টু পাল। সে বার পরিবর্তনের হাওয়ায় মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ হাত ছাড়া হয়েছিল বাম মনোভাবাপন্নদের। সরে যেতে হয়েছিল দীর্ঘদিনের সাধারণ সচিব সমীর বিন্দু ধরকে। পরিস্থিতি দেখে সাধারণ সচিব পদে সমীরবাবু অবশ্য প্রার্থীই হননি। এ বার পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম। নান্টুবাবুর হাত থেকে ক্রীড়া পরিষদের ক্ষমতা দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন। বিশেষ করে গতবার তাদের সেই চেষ্টা ভেস্তে গিয়েছিল।
কংগ্রেস ঘনিষ্ঠদের সামিল করে এ যাত্রায় রেহাই পেতে সচেষ্ট হন নান্টুবাবু। জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর মালাকার, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সুবীন ভৌমিকের মতো ব্যক্তিদের তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সমিল করেন। তবে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। কংগ্রেসের একটা অংশের বিরাগভাজন হয়ে পড়াই যে তার হারের জন্য অনেকাংশে দায়ী তিনি তা স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন, “দলের একাংশকে পাশে পাইনি। অপর পক্ষ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।” অরূপবাবুদের শিবিরে কুন্তল গোস্বামীর মতো কংগ্রেস নেতাদেরও দেখা গিয়েছে। কুন্তলবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “এর মধ্যে রাজনীতি নেই। খেলার মাঠের লোক বলেই আমি পরিচিত।” এ দিন পেশ করা নান্টুবাবুর প্যানেলে সহসভাপতির পদে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অমর চন্দ্র পালের নাম ছিল। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের ওই প্যানেলে আমি থাকতে চাইনি। তাই প্রত্যাহার করেছি।”
উভয় পক্ষের তালিকায় নাম থাকায় কোষাধ্যক্ষ পদে সদীপ্ত দাস, ক্রিকেট সচিব জয়ন্ত ভৌমিক, সহকারি ক্রিকেট সচিব বিনোদ মিশ্র, ভলিবল সচিব স্বরাজ সূত্রধর সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন। নান্টুবাবুর প্যানেলে থাকা সহকারি কোষাধ্যক্ষ পদে প্রস্তাবিত মানব দত্ত, সহকারি ভলিবল সচিব, অ্যাথলেটিক্স সচিব এবং সহকারি অ্যাথলেটিক্স সচিব পদে থাকা মৈনাক তালুকদার, দেবেশ দে এবং অনুপ সরকার নাম প্রত্যাহার করেছেন। তাতে অপর তালিকায় ওই পদগুলিতে থাকা মৈনাক তালুকদার, রিপন দাস, অনুপ সরকার এবং দেবেশ দে যথাক্রমে সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন। সচিব-সহ অন্য ৯ টি পদে নির্বাচন হয়।
ক্লাবগুলি থেকে প্রতিনিধি এবং কো-অপ্ট পদ্ধতিতে সদস্য নির্বাচনের পর ক্রীড়া পরিষদের কার্যনির্বাহী সমিতির পদাধিকার নিয়ে দুই পক্ষের চাপান উতোর চরমে পৌঁছয় গত কয়েক দিন ধরেই। তাদের মধ্যে একাধিক আলোচনাতেও ঐকমত্য হয়নি। নান্টুবাবু সচিব পদ ছাড়লে কার্যনির্বাহী সভাপতি পদে থাকতে চান। তা ছাড়া ক্রিকেট বা ফুটবলের একটির সচিব পদ, অ্যাথলেটিক্স, ভলিবলের সচিব বা সহসচিবের পদে পছন্দের লোককে রাখতে দাবি করেন। অরূপবাবুরা তা মেনে নিতে পারেননি। এ দিন ভোটে জিতে খুশি অরূপবাবু বলেন, “খেলাধূলার উন্নতিতে সচেষ্ট হব। ব্লকস্তরে বিভিন্ন খেলার প্রসার ঘটাতে চাই। ক্রিকেটের জন্য শিলিগুড়িতে আলাদা একটি মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সাহায্যে সেই কাজ করতে চাই। তিনি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।”
অন্যান্য পদের মধ্যে কার্যনির্বাহী সভাপতি হয়েছেন কুন্তল গোস্বামী। ৩ জন সহসভাপতি সজল নন্দী, শুভঙ্কর গুপ্ত, সংগ্রাম সিংহ। সহসাধারণ সচিব শুভাশিষ ঘোষ এবং অরূপ মজুমদার। ফুটবল সচিব হয়েছেন অচিন্ত্য গুপ্ত এবং সহকারি ফুটবল সচিব নারায়ণ দাস। |