বনধ সমর্থকদের মিছিলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার উত্তেজনা ছড়াল ডুয়ার্সের বানারহাটে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বন্ধ সফল করার জন্য জনগণকে অভিনন্দন জানাতে মিছিল বার করে মোর্চা বিরোধী আদিবাসী বিকাশ পরিষদ ও তাদের সহযোগীরা। সে সময় আচমকা বনধ বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন মিছিল আটকাবার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে মারপিট শুরু হয়। ঘটনাস্থলের পাশে মোতায়েন থাকা পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জলপাইগুড়ির ডিএসপি দমন কর্মকার বলেন, “উত্তেজনা ছড়ালেও তেমন বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেউ জখম হয়নি।” এদিন শিলিগুড়িতেও পুলিশ ৯ জন বন্ধ সমর্থককে গ্রেফতার করে। সকালে রাস্তা অবরোধের অভিযোগে গ্রেফতার হন বাংলা ও বাংলাভাষা বাঁচাও কমিটির সভাপতি মুকুন্দ মজুমদার। দুপুরে দাগাপুরে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সমর্থকেরা ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার। বন্ধকে কাজে লাগিয়ে এদিন দিনভর শিলিগুড়িতে দাপায় সিটি অটো। |
|
|
বন্ধের জেরে কাজ বন্ধ দাগাপুর
চা বাগানে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
বন্ধে জলপাইগুড়ির শান্তিপাড়া বেসরকারি
বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়েনি বাস। ছবি: সন্দীপ পাল। |
|
পুলিশের সামনেই অটোয় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলে অবাধ যাতায়াত। নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ আদায় করা হল ‘জোর করে’ই। দু’একজন প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিতণ্ডায় জড়িয়ে হেঁটেই রওনা দেন গন্তব্যে। সন্ধ্যায় পুলিশের তরফে অবশ্য জানানো হয়, বনধ্রে দিন যে সমস্ত অটো যাত্রীদের হেনস্থা করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং বেশি যাত্রী তোলার অভিযোগে ২০টি অটো আটকও করে পুলিশ। শিলিগুড়ির ট্রাফিক পুলিশের ডিএসপি বলবন্ত সিংহ তিরভা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে দিনভর শহরের বাইরে ছিলাম। সন্ধ্যায় অভিযোগ মেলার পরে বেশ কয়েকটি অটো আটক করা হয়েছে।” কিছু চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয় বলে ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। শিলিগুড়ি সিটি অটো ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে এদিন চালকদের দৌরাত্ম্যের নিন্দা করা হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক নির্মল সরকার বলেন, “কিছু অটো চালক আইন ভেঙে বেশি ভাড়া নিয়েছে বলে আমরাএ অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশেরই তো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” |
সুনসান ফালাকাটার নেতাজি মোড়। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
এদিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জংশন এলাকা থেকে সেবক মোড়ে একটি অফিসে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন ভাস্কর পাল। তিনি বলেন, “আধ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। অটোয় আট জনের জায়গায় ১৫ জনকে ওঠানো হয়েছে। ভাড়াও দ্বিগুণ চাইছে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কর্মী মন্টু অধিকারী অন্যদিন ১০ টাকা ভিড়ি দিয়ে তিলক সাধুর মোড় থেকে দফতরে যাতায়াত করেন। এদিন খরচ হয় ২০ টাকা। মন্টুবাবু বলেন, “গরিব মানুষ। চাকরি গেলে কে বাঁচাবে? অটোয় ডাবল ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্যও কী আমাদের আছে?” রথখোলা থেকে হেঁটেই এদিন শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন দফতরে কাজে যান মনোজ রায়। তিনি বলেন, “বন্ধের জন্য গাড়ি পাচ্ছিলাম না। ছাতা মাথায় দিয়ে হেঁটেই অফিসে যাই।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কর্মী মনোজ নাগাসিয়া জানান, তিনি চম্পাসারি থেকে অফিসে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সিটি অটো আজ ভাড়া বেশি নিয়েছে।” অটো না-পেয়ে সুকনা থেকে হেঁটে দার্জিলিং মোড়ে পৌঁছন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসকের দফতরের কর্মী বেবিয়ানা লাকড়া। সেখান থেকে সরকারি বাসে চড়ে দফতরে যান। সিটি অটোর এক চালকের দাবি, বন্ধের জন্য পেট্রোল পাম্প বন্ধ। বাইরের থেকে তেল কিনে অটো চালাতে হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের এই অভিযোগ রিকশা চালকদের বিরুদ্ধেও। বহু যাত্রী এদিন অভিযোগ করেন, আগের বেশ কয়েকটি বন্ধে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার অতিরিক্ত বাস রাস্তায় দেখা গিয়েছে। এনজেপিতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-সমর্থকরা রাস্তায় ট্রেন যাত্রী এবং পর্যটকদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখেছিলেন। এক যাত্রী বলেন, “এবারে দুটির একটিও হয়নি।” তৃণমূলের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দী বলেন, “এবারে পরিষেবা অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। তাই রাস্তায় নামতে হয়নি।” |