একটা ছিল সাধারণ ধর্মঘট। যা চেহারা নিয়েছিল পুরোদস্তুর বন্ধের। অন্যটি বন্ধই।
প্রথমটির ক্ষেত্রে অফিসে না যাওয়ায় ‘শাস্তি’ হয়েছে অনেক সরকারি কর্মীর। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে ‘শাস্তি’ হবে কি না, জানতে চান শিলিগুড়ি ও তরাই-ডুয়ার্সের সরকারি কর্মীদের একাংশ।
প্রশ্ন তোলার কারণ, বামপন্থী-সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা গত ২৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ ধর্মঘটে গরহাজির কর্মীদের রাজ্য সরকার শো-কজ করেছে। একাধিক জেলায় অনেক সরকারি কর্মীর এক দিনের বেতন কাটার নোটিসও পড়েছে। অথচ মঙ্গলবার ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র ডাকা তরাই-ডুয়ার্স বন্ধের দিন গরহাজির কর্মীদের ‘শাস্তি’ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এক যাত্রায় কেন এই ‘পৃথক ফল’!
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর কিংবা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অনেক কর্মীরই প্রশ্ন, এ দিনের বন্ধেও তো অনেকেই অফিসে আসতে পারেননি। তাঁরাও কি তাহলে ‘শাস্তি’র মুখে পড়বেন? কৌতূহলী কর্মীদের অবশ্য প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটে গরহাজির কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের নির্দেশ আগেভাগেই পৌঁছে গিয়েছিল। এ বার তেমন কোনও নির্দেশ আসেনি। |
বন্ধের জেরে এসজেডিএ-র দফতরে মঙ্গলবার হাজিরা ছিল অনেকটাই কম। নিজস্ব চিত্র |
তবে বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও অনেকে আসতে পারেননি বলে প্রশাসনের দাবি। এ দিন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর দফতরেই গরহাজির ছিলেন প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মী। দফতর সূত্রের খবর, এ দিন ১৪ জন কর্মীর মধ্যে এসেছিলেন ৫ জন। দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, গরহাজির কর্মীদের একাংশ মন্ত্রীর সঙ্গে সরকারি কাজে কোচবিহারে গিয়েছেন। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) দফতরের ৭৩ জন কর্মচারীর মধ্যে ৬৮ জন কর্মী হাজির ছিলেন। মহকুমাশাসকের দফতরে ১০৯ জন কর্মীর মধ্যে ছিলেন ৯৮ জন। শিলিগুড়ি পুরসভাতেও স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে।
তবে, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে ৭২ জন কর্মীর মধ্যে ছিলেন ৩১ জন। সভাধিপতি, সিপিএমের পাসকেল মিন্জও এ দিন দফতরে যাননি। বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আইনুল হকেরও দেখা মেলেনি। তিনি অবশ্য বলেন, “সকালে ভেবেছিলাম, মহকুমা পরিষদে আজ এক বার যাব। পরে বৃষ্টি দেখে বেরোইনি।” ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটে অনুপস্থিত থাকায় মহকুমা পরিষদের ৭ জন কর্মীকে ইতিমধ্যেই শো-কজ করা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, এ বারও কি রাজ্য সরকার একই পদক্ষেপ করবে? পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুবল রায় বলেন, “আগের বার সরকারের নির্দেশেই শো-কজ করা হয়। এ বার তেমন নির্দেশ এখনও নেই। কাজেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।”
একই আলোচনা চলছে ডুয়ার্সেও। বন্ধে সরকারি দফতরে কাজে যোগ দিতে পারেননি, মালবাজারের এমন বহু কর্মীই ফের তাঁদের বেতন কাটা যাবে কি না সেই প্রশ্নে শঙ্কিত। বীরপাড়া থেকে মালবাজারে চাকরি করতে আসা কিছু নিত্যযাত্রী বলেন, “ট্রেন বা বাস না থাকায় কাজে আসতে পারিনি।”
এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যও বলেন, “যে সব কর্মচারীর মোটরবাইক বা স্কুটার নেই, বন্ধে তাঁদের হাজির হওয়া সত্যিই সমস্যার।”
আর এই প্রেক্ষিতেই শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের শো-কজ হওয়া কর্মীদের অনেকের ক্ষোভ, যানবাহন না পেয়েই তাঁরা ২৮ ফেব্রুয়ারি অফিসে আসতে পারেননি বলে লিখিত ভাবে জানানোর পরেও তাঁদের এক দিনের মাইনে কাটার কথা বলা হয়েছে। তাঁদের দাবি, এ বারের বন্ধে গরহাজির কর্মীরা ছাড় পেলে তাঁদেরও তা পাওয়ার হক বর্তাবে। |