‘ভোগান্তির’ বন্ধ তরাই-ডুয়ার্সে
শাসক দল রাস্তায় নামল না কেন, নানা মত নানা পক্ষের
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরোধী শিবিরের ডাকা ২৪ ঘণ্টার বন্ধে মঙ্গলবার কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল তরাই-ডুয়ার্সের জনজীবন। বন্ধ উপেক্ষা করে যাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছেন, ভুগেছেন। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির মতো শহর এবং লাগোয়া ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, ব্যাঙ্ক খোলেনি। অর্ধেকের বেশি চা-বাগানে কাজ হয়নি। রাস্তায় হাতে গোনা সরকারি বাস চলেছে। বেসরকারি যানবাহন প্রায় দেখাই যায়নি। বাসস্ট্যান্ড, বিমানবন্দর, রেল স্টেশনে পৌঁছনো নিত্যযাত্রী, পর্যটকদের গন্তব্যে পৌঁছতে কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অনেকেরই অভিমত, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, সাধারণ ধর্মঘটের দিন জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে রাজ্য সরকার যা পদক্ষেপ করেছিল, তার ধারাবাহিকতা থাকলে হয়তো এ দিন এতটা ‘হয়রানি’ হত না। অনেকের জিজ্ঞাসা, “রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে ঘোষিত ভাবে কর্মনাশা বন্ধের বিরোধী, তা হলে এ দিন এমন হল কেন?”
আমজনতার এমন মনে করার অন্যতম কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে শিলিগুড়িতে একাধিক বন্ধের বিরোধিতায় অনুগামীদের নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে এলাকার তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে। এ দিন সকালে গৌতমবাবু জয়ন্তীর জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় প্রস্তাবিত রেলপথ কোথায় হবে, তা দেখতে যান। বিকেলে তিনি কোচবিহারের সিতাই এলাকার আদাবাড়ি ঘাটে সেতু তৈরির কাজের সূচনা করায় ব্যস্ত ছিলেন।
শিলিগুড়িতে সুনসান উড়ালপুল। মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
বন্ধের বিরোধিতা করলেন না? মন্ত্রীর জবাব, “অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজ থাকে। সে জন্য সব সময় রাস্তায় নামা সম্ভব হয় না।”
তবে মন্ত্রীর অনুগামীরা আমজনতার ‘ভোগান্তি’ এড়াতে সাহায্যের হাত বাড়ালেন না কেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ জানান, দলের তরফে নির্দেশ না থাকায় তাঁরা রাস্তায় নামেননি। এ নিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্য, “বন্ধের বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে দেখতে বলা হয়েছে।” আবার সরকারি তরফের অনেকের যুক্তিতে উঠে আসছে এ দিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথাও। কিন্তু ঝড়বৃষ্টি তো বেলা ৯টার মধ্যেই প্রায় থেমে গিয়েছিল, তার পরেও জনজীবন স্বাভাবিক হয়নি কেন? জবাব মেলেনি।
রাস্তায় নেমে শাসকদলের বন্ধের বিরোধিতা না করার ভিন্ন ‘ব্যাখ্যা’ দিচ্ছে মোর্চা-বিরোধী শিবির তথা আদিবাসী বিকাশ পরিষদ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলিকে নিয়ে গড়া ‘তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। তরাই-ডুয়ার্সের কোনও এলাকা ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এ অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা খতিয়ে দেখার বিরোধিতায় বন্ধ ডেকেছিল তারাই। তা সমর্থন করে আইএনটিইউসি-র দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি জেলা কমিটি। ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র নেতাদের দাবি, তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের ‘আবেগের’ কথা মাথায় রেখেই ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল সরকার।
আইএনটিইউসি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি অলক চক্রবর্তীর দাবি, “গত ৮ এপ্রিল শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে আমরা এক দিনের বন্ধ প্রত্যাহার করি। সরকারও তরাই-ডুয়ার্সের মানুষের ‘আবেগে’ আঘাত দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছিল। তৃণমূলের কেউ বন্ধ ব্যর্থ করতে রাস্তায় নামলে, আগামী দিনে তরাই-ডুয়ার্সের মানুষের কাছে জবাবদিহি করার যুক্তি খুঁজে পেত না।
এই ‘তত্ত্ব’ না মানলেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, পাহাড়-সমতলের মানুষকে মিলেমিশে থাকতে হবে। তার পরেও অশান্তির চেষ্টা হচ্ছে। কারও আবেগে আঘাত দিতে চাই না। তাই আন্দোলনের নামে গণ্ডগোল যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েই উদ্বেগে রয়েছি। তাই মোর্চা শিবিরের যৌথ মঞ্চ ১৮-১৯ এপ্রিল যে পাল্টা বন্ধের হুমকি দিয়েছে, তা প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করছি।”
‘যৌথ মঞ্চ’-এর নেতা শুকরা মুণ্ডার মন্তব্য, “এ দিনের বন্ধ নিয়ে সরকারের ভূমিকায় আমাদের কিছু বলার নেই। মানুষ সবই দেখছেন, সবই বুঝছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.