বাম আমলে তাদের যে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তা তুলে নেওয়ার জন্য এ বার রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ জোট শরিক কংগ্রেস।
নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্ধমানের রায়না, কোচবিহার বা মহাকরণ-বিধানসভা-রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ধর্ষণ, খুনের চেষ্টা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার মতো ‘মিথ্যে’ অভিযোগে কর্মীদের ‘ফাঁসানোর’ চেষ্টা হয়েছিল বলে কংগ্রেসের দাবি। ১০-১৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা মামলাগুলির ‘নিষ্পত্তি’র জন্য বিগত সরকারের কাছে দরবার করেও সুরাহা হয়নি। এখন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা তোলার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় কংগ্রেসও তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলি তোলার আর্জি জানিয়েছে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে।
সোমবার মলয়বাবুর সঙ্গে এ ব্যাপারে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “তৃণমূলের মতোই বাম আমল থেকে আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধেও অসংখ্য মামলা ঝুলে রয়েছে। তৃণমূলের মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কংগ্রেসের মামলাগুলিও তোলার জন্য মলয়বাবুকে অনুরোধ করেছি। ব্যক্তি ধরে ধরে মামলার সবিস্তার বৃত্তান্ত-সহ আবেদন করতে বলেছেন মন্ত্রী।” দ্রুত মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানানোর জন্য কর্মীদের মঙ্গলবারই নির্দেশ দিয়েছেন প্রদীপবাবু। তাঁর কথায়, “যেমন যেমন আবেদন পাব, সরকারের কাছে পাঠাব।”
প্রসঙ্গত সরকারের তরফে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করেছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। কিন্তু কংগ্রেস কোনও ‘প্রতিবাদ’ করেনি। দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে সরকারের কাছে আবেদন জানানোর জন্যই কংগ্রেস ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেনি। কত কংগ্রেসকর্মীর বিরুদ্ধে এই ধরনের মামলা রয়েছে, তার হিসেব অবশ্য দিতে পারেননি প্রদীপবাবু। তবে ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় কংগ্রেসকর্মী সবুজ প্রধানের বিরুদ্ধে সিপিএমের এক কর্মীকে খুনের ষড়যন্ত্রের মামলা হয়। ওই ঘটনায় সবুজবাবুর সঙ্গেই অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের মিলন প্রধান এবং চন্দন পালের বিরুদ্ধেও। তাঁদের বেআইনি অস্ত্র ব্যবহার আইনের মতো জামিন-অযোগ্য মামলায় ‘ফাঁসানো’ হয়েছিল বলে কংগ্রেস নেতাদের দাবি। তাঁর অপরিচিত এক মহিলার মৃত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছে বলেও সবুজবাবুর দাবি।
বিধানসভা-মহাকরণ-রাজভবনে বিক্ষোভ দেখানোর ঘটনায় তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তী-সহ অসংখ্য কংগ্রেস কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে বলেও কংগ্রেস সূত্রের খবর। বন্ধের দিন কলকাতায় মিছিল বার করার অভিযোগে আটক করার পরে তদানীন্তন যুব কংগ্রেস কর্মী (বর্তমানে কংগ্রেসের কাউন্সিলর) সন্তোষ পাঠককে এক বাসচালককে খুনের চেষ্টার মামলায় ‘ফাঁসানো’ হয় বলে কংগ্রেস নেতাদের দাবি। ওই ঘটনায় কারাবাসও হয় সন্তোষের। আবার সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর সভা করায় বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক আটকে সভা করার অভিযোগে মামলা হয়। ঘটনাচক্রে, এদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, পুলিশকে ‘ফাঁকি’ দিয়ে ট্রাকে বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত মাল তুলে তা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া বন্ধ হোক। |