পাঠ্যক্রম কমিটির দরকার কী, প্রশ্ন শিক্ষাজগতেই
রকারি পাঠ্যক্রম কমিটির ভাবনা-চিন্তা ঘিরে বিতর্ক চলছিলই। উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস বইতে মার্ক্স-এঙ্গেলস বহাল থাকছেন কি না, চাপানউতোরের কেন্দ্রে ছিল সেটাই। সংশয় নিরসনে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীকেই ময়দানে নামতে হয়েছে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস বই থেকে মার্ক্স-এঙ্গেলস বাদ পড়ছেন না। কিন্তু এ বার বিতর্ক বেধেছে খোদ পাঠ্যক্রম কমিটির প্রয়োজনীয়তা নিয়েই।
এক বিতর্কের অবসানে জন্ম নিয়েছে আর এক বিতর্ক। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ বলছেন, উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমে কী থাকবে আর কী বাদ পড়বে, সেই সিদ্ধান্ত তো নেওয়ার কথা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, সংসদ সিদ্ধান্ত নিলে তো সরকারি পাঠ্যক্রম কমিটির প্রয়োজন থাকে না, মুখ্যমন্ত্রীকেও এই নিয়ে মন্তব্য করতে হয় না!
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এগুলি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। তাদের নিজস্ব পাঠ্যক্রম কমিটি বা বোর্ড অফ স্টাডিজ রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম তৈরি করার কথা তাদেরই। যেমন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সরকারি কমিটি গড়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের ব্যাখ্যা, পাঠ্যক্রমকে আরও বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক করতে এবং ছাত্রছাত্রীদের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্যই আলাদা করে কমিটি গড়েছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। পর্ষদ বা সংসদ চাইলে কমিটির সুপারিশ গ্রহণ না-ও করতে পারে। কিন্তু অভিজ্ঞ শিক্ষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, সরকারি কমিটির সুপারিশে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটতে পারে। আর তাতে প্রভাবিত হতে পারে পর্ষদ বা সংসদ। সেটা মোটেই কাম্য নয়।
ইতিহাসবিদ রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়ের মতে, যে পাঠ্যক্রম উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তৈরি করার কথা, সরকার পাঠ্যক্রম কমিটির মাধ্যমে সেটা তৈরি করছে এবং সংসদের উপরে তা চাপিয়ে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, “এটা এ রাজ্যেই সম্ভব।” শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের স্বাধীনতার প্রশ্নে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে তিনি জানান, আমেরিকার মতো দেশে এ ভাবে পাঠ্যক্রম তৈরি করে পড়াশোনার রেওয়াজই নেই। রুদ্রাংশুবাবু বলেন, “ধরা যাক, নাৎসি বাহিনীর ইতিহাস পড়াতে হবে বলা হল। কিন্তু কতগুলি ক্লাসে কোন কোন বিষয় পড়ানো হবে, পড়ুয়ারা কী বই পড়বে, তা বেঁধে দেওয়া হয় না। কারণ শিক্ষক-শিক্ষিকার একটা স্বাধীনতা দরকার। সব কিছু পূর্বনির্ধারিত হলে সেই স্বাধীনতা খর্ব হয়।”
সমাজতত্ত্ববিদ আন্দ্রে বেতেই-ও মনে করেন, পড়ানোর সময় শিক্ষকের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি। তবে একই সঙ্গে তাঁর কথায়, “একটা বাঁধন থাকাও দরকার। সেই বাঁধন কে তৈরি করবে, সেটা অবশ্য বড় প্রশ্ন।”
শিক্ষাক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের জন্য বাম সরকার বিভিন্ন সময়ে স্কুল-কলেজের পাঠ্যের উপরে নিজেদের মত চাপিয়েছে বলে অভিযোগ। কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস, বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কবি-সাহিত্যিকদের প্রতি পাঠ্যক্রমে পক্ষপাত করা হয়েছে এমন অভিযোগও নতুন নয়। প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকের মতে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ছেদ পড়েনি।
ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র যেমন বলেন, “পাঠ্যক্রম কমিটি তৈরির ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের থেকে এদের (নতুন সরকারের) কোনও পরিবর্তন দেখছি না। কেবল মুখগুলো বদলেছে।” প্রবীণ ওই অধ্যাপক এও বলেন যে, “পাঠ্যক্রম বদলালে ইতিহাস পড়া বা শেখায় আলাদা করে কোনও মানোন্নয়ন হবে না। একে আমি একটা গৌণ বিষয় বলে মনে করি।”
যদিও এর পাল্টা মতও জানিয়েছেন এক দল শিক্ষক। তাঁরা মনে করেন, যদি সরকারের গড়া কোনও কমিটি পর্ষদ বা সংসদকে পাঠ্যক্রম তৈরির বিষয়ে সুপারিশ করে, তাতে আপত্তির কিছু নেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস যেমন বলেন, “সব জায়গাতেই বোর্ডের নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম থাকে। সরকারি কমিটিও এই ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু তা গৃহীত হবে কি না কিংবা কতটা হবে, সেটা ঠিক করবে সংশ্লিষ্ট বোর্ড।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.