জমি হস্তান্তরের জটিলতা কাটিয়ে ৯৯টি বিনিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ‘লিজ চুক্তি’ করতে চলেছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম (ডব্লিউবিআইডিসি)। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে সব ক’টি চুক্তি হয়ে যাবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
সরকারি সূত্রের খবর, বাম আমলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শিল্পোন্নয়ন নিগমের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল ভূমি সংস্কার দফতর। এর মধ্যে রঘুনাথপুরে ৩২২৫ একর, উলুবেড়িয়ায় ৫৩.৬৫ একর, গোদাপিয়াসালে ১৫৪ একর, ফাল্গুনি (পঃ মেদিনীপুর)-তে ৮৮৯ একর, নৈহাটিতে ৯৭ একর, খড়্গপুরে ১১৬৩ একর, পানাগড়ে ১৪৫৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই সমস্ত জায়গায় ‘শিল্পপার্ক’ তৈরি করে তা বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বস্ত্র-পার্ক, অলঙ্কার সামগ্রীর জন্য মণিকাঞ্চন এবং শিল্পাঙ্গনের জন্য ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে নিগম।
শিল্পোন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, ওই সমস্ত পার্কে ইতিমধ্যেই ৯৯টি শিল্প সংস্থা প্রকল্প তৈরি করবে বলে জমি নিয়েছে। এদের প্রত্যেকের সঙ্গে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে আলাদা আলাদা করে জমির ‘লিজ চুক্তি’ স্বাক্ষর করবে নিগম। উল্লেখযোগ্য সংস্থার মধ্যে রয়েছে জিন্দল, জয় বালাজি, অভিনব, শ্যাম স্টিলের মতো ইস্পাত প্রকল্প, ওসিএম সংস্থার সিমেন্ট প্রকল্প, মহাভারত সংস্থার মোটরবাইক, ম্যাট্রিক্স সংস্থার সার কারখানা। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, এই ৯৯টি প্রকল্পের মধ্যে বেশ কিছু বিনিয়োগের প্রস্তাব নতুন সরকারের আমলে এসেছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ কত, তা অবশ্য এ দিন জানাতে পারেননি পার্থবাবু।
রাজ্যের ভূমি সংস্কার দফতরের হাত থেকে শিল্পোন্নয়ন নিগম এবং নিগমের থেকে বিনিয়োগকারীর হাতে জমি তুলে দেওয়ার নিয়মে আগে কিছু জটিলতা ছিল। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, আগে জমি অধিগ্রহণ করে তা শিল্পোন্নয়ন নিগমকে হস্তান্তর করার সময় সংশ্লিষ্ট জেলার কালেক্টরেট ‘পজেশনাল সার্টিফিকেট’ দিত। তার ভিত্তিতে জমির পরচায় শিল্পোন্নয়ন নিগমের নাম লেখা হত। তার ভিত্তিতেই বিনিয়োগকারী সংস্থার হাতে জমি দিত নিগম।
গত ২৬ মার্চ রাজ্যের ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে শিল্পোন্নয়ন নিগমের একটি চুক্তি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি জমি অধিগ্রহণের পরে তা শিল্পোন্নয়ন নিগমের হাতে তুলে দেওয়ার সময় ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে তাদের একটি ‘ট্রান্সফার চুক্তি’ সই হবে। তার পরে নিগম সেই জমি ‘লিজ চুক্তি’-র ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীর হাতে তুলে দেবে। আগে এই গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে যে জটিলতা ছিল, তার অনেক পরিবর্তন করে নিয়ম সহজ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিল্প দফতরের কর্তারা।
তথ্যপ্রযুক্তি নীতি: রাজ্যের জন্য একটি নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতি তৈরি করেছে সরকার। শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন নীতি চূড়ান্ত করার আগে তা অনুমোদনের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের দুই নামী ব্যক্তিত্ব শ্যাম পিত্রোদা এবং নারায়ণমূর্তির কাছে পাঠানো হয়েছে।
কী বলা হয়েছে নতুন নীতিতে? পার্থবাবু জানান, তথ্যপ্রযুক্তির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৫০ কোটি
টাকার একটি ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল’ তৈরি করা হবে। শিক্ষার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি কাজের মধ্যে সাজুয্য রাখতে ‘ইন্ডাস্ট্রি অ্যাকাডেমি ফোরাম’ তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। জোর দেওয়া হচ্ছে গবেষণা ও উন্নয়নের উপর। পাশাপাশি, সফ্টওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং মাইক্রো চিপ্স তৈরির উপর জোর দেওয়া হবে বলে জানান পার্থবাবু। নতুন নীতির মূল কথা, শহর ছাড়িয়ে গ্রামে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে। শিল্পমন্ত্রীর দাবি, “রাজ্যে আগে কোনও তথ্যপ্রযুক্তি নীতি ছিল না। ২০০০ সালে আগের সরকার যেটা তৈরি করেছিল, সেটা ছিল মূলত বিনিয়োগের রোডম্যাপ।” তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের পরামর্শদাতা কমিটি নয়া নীতির খসড়া তৈরি করেছে। |