স্বনির্ভরতা থেকে এসেছে অধিকার বোধ
দাপটের সঙ্গে ওঁরা মঞ্চে অভিনয় করছিলেন। নাটকের নাম ‘দিশা’। নাটকে ভাবনার মূল সূত্র, স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সচেতনতা, বাল্যবিবাহ রোধ ভ্রূণ-হত্যা ঠেকানো, সকলের জন্য শিক্ষা। এঁরা কেউই পেশাদার অভিনেতা নন। অধিকাংশই প্রাথমিকের গণ্ডিও পেরোননি অনেকে। কিন্তু নাটকের অভিনয়, সংলাপ প্রক্ষেপণে দর্শকদের মন জয় করে নিচ্ছিলেন কুশীলবেরা।
কুশীলবেরা সবাই মহিলা। সামনে বসে থাকা হাজার দুয়েক শ্রোতাও মহিলা। ওঁরা সকলেই স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যুক্ত। বরাবাজারের এটিএম গ্রাউন্ডে সোমবার দুপুর থেকে স্বনির্ভর দলের সদস্যাদের অধিবেশন শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠান চলেছে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত। উদ্যোক্তা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার পুরুলিয়ার দায়িত্বে থাকা অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে আমাদের সংস্থা পুরুলিয়ায় দু’দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে আড়াই হাজারেরও বেশি মহিলা উপস্থিত হয়েছিলেন। বরাবাজারে ৪টি ও বাঘমুণ্ডিতে একটি, মোট পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাতায় ১৭৮টি স্বনির্ভর দল রয়েছে। সদস্য সংখ্যা ২৬০০।”
মিছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। বরাবাজারে প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।
সংস্থার দাবি, দু’দশক আগে শুরু করা স্বনির্ভর দলের সদস্যেরা বর্তমানে আর্থিক ভাবে অনেকটাই স্বাবলম্বী। হাঁস-মুরগি পালন, ছাগল পোষা থেকে শুরু করে চিঁড়ে বা কোটা ধান থেকে চাল তৈরি করার মতো প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এই গোষ্ঠীগুলি। হুল্লুং গ্রামের ইসলামিয়া গোষ্ঠীর সদস্যারা এখন বছরে ২লক্ষ টাকার কারবার করেন। সমস্ত দল মিলিয়ে সঞ্চয়ের পরিমাণ এক কোটি টাকারও বেশি। বরাবাজারের তিলাবনি গ্রাম থেকে আসা পারুল কোড়া, শোভা কোড়া, সখী মাহাতোরা বললেন, “২০০৫ থেকে সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছি। স্বনির্ভর দলের সদস্য হওয়ার সুবাদে জীবিকার ধরণ পালটে গিয়েছে। মহিলাদের অধিকার বোধ সম্পর্কে সচেতন হয়েছি।” ‘প্রদান’ নামে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে কুন্তলিকা কুম্ভকার নাটক শেষে কুশীলবদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। মাত্র ছয় দিনের মহড়ার পর এমন উপস্থাপনা কি সম্ভব? অভিজিৎবাবু বলেন, “বিভিন্ন গ্রামের মেয়েদের এক জায়গায় এনে আমরা মহরার ব্যবস্থা করেছিলাম। স্থানীয় ভাষায় নাটকটি লেখা হয়েছে। ফলে ওই মহিলাদের পক্ষে অভিনয় করতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি।”
নাটক লিখেছেন স্বনির্ভর দলেরই এক সদস্য। মহিলাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার উপাখ্যান আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগে উপস্থাপিত হওয়ায় নাটক উপভোগ করতে অসুবিধা হয়নি দর্শকদের। বেড়াদা গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি মাহাতো, পূর্ণিমা সিংহদের কথায়, “এ তো আমাদেরই জীবনের কথা! যা সংস্থা আমাদের নিজেদের মতো ভাবতে শিখিয়েছে।” অভিজিৎবাবু জানান, এই মহা অধিবেশন সফল করায় মহিলাদের ভূমিকাই বেশি। তাঁরা কেবল প্যান্ডেল বানিয়ে দিয়েছেন। বাসে আসা যাওয়া, খাওয়া, পরিবেশন, নাটক ও লোককৃষ্টি উপস্থাপন সবই মহিলারা করেছেন।
প্যান্ডেলে নব-স্বাক্ষর মহিলাদের হাতে লেখা স্থানীয় লোককথা, প্রবাদবাক্য স্থান পেয়েছে। কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা নেই। বরাবাজারের বিডিও দেবজিৎ বসু বলেন, “সংস্থার মহিলা সদস্যরা যে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় রেখেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.