সম্পাদকীয় ২...
পুত্র স্বর্গ পুত্র ধর্ম
শ্চিমবঙ্গের কলিকাতা ও তাহার পার্শ্ববর্তী জেলা শহরগুলির সহিত বেঙ্গালুরুর আপাতদৃষ্টিতে কোনও মিল নাই। দুই অঞ্চলের প্রকৃতি আলাদা, আধুনিক প্রাগ্রসরতার বিচারে বেঙ্গালুরু আগাইয়া রহিয়াছে। কিন্তু আশঙ্কা হয়, মেয়েদের হীন দৃষ্টিতে দেখিতে পশ্চিমবঙ্গ ও বেঙ্গালুরু উভয়ে উভয়ের সহিত তুলনীয়। সম্প্রতি আইন করা হইয়াছে, সদ্যোজাত সন্তানকে লিঙ্গ পরিচায়ক নথিতে ‘মেল’ বা ‘ফিমেল’ হিসাবে নির্দেশ করা হইবে না। পরিবর্তে বয় বা গার্ল লেখা হইবে। কেন এই বিধান? পুত্রকামনায় উন্মত্ত অভিভাবককুল নাকি প্রদত্ত সার্টিফিকেটে প্রায়শই কারচুপি করিয়া থাকেন। অর্থাৎ, ফিমেল চাইল্ডের এফ-খানি কাটিয়া মুছিয়া কন্যার পরিবর্তে পুত্রসন্তানের দাবি উত্থাপন নাকি এই পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত ঘটনা। বয় বা গার্ল লেখা থাকিলে এইরূপ কারচুপি কমিবার সম্ভাবনা। অপর দিকে, বেঙ্গালুরুতে এক পুত্রকামী পিতার অত্যাচারের কাহিনি কবুল করিয়াছেন জননী। তাঁহার তিন-চার মাসের কন্যাসন্তানকে সিগারেটের ছ্যাঁকা ও অপরাপর শারীরিক নিগ্রহ করিতে পিতৃদেবটি দ্বিধা করেন নাই। তিনি পুত্র চাহিয়াছিলেন, কেন কন্যা হইল, এই অপরাধ! শারীরিক অত্যাচারের শিকার ওই শিশুটি আপাতত চিকিৎসাধীন। পিতার জেল হইয়াছে।
এই ঘটনা দুইটি নমুনা মাত্র। এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ভারতের নানা রাজ্যে ঘটিতেছে। আমরা ইন্ডিয়া, উন্নয়ন, বিশ্বায়ন ইত্যাদি যে স্বপনের কথা বলিয়া থাকি, তাহা আদতে খণ্ডিত বাস্তব। বৃহত্তর ভারত এখনও অবধি মেয়েদের সম্মান করিতে শেখে নাই, তাহাদের মর্যাদা প্রদানে অক্ষম। কেন এমন হয়! একাধিক কারণ ক্রিয়াশীল। প্রথমত, অভিভাবকরা ভাবিয়া থাকেন যে, কন্যাসন্তানের মাধ্যমে তাঁহাদের বংশগতি রক্ষিত হইবে না। ‘অন্য গোত্রে’ যাহার বিবাহ হইবে, তাহার দ্বারা তো বংশরক্ষা হইবার নহে। বিচিত্র হইলেও এই বংশগত ও পরম্পরাগত যুক্তিটি এখনও পর্যন্ত অনেকের মাথায় ভর করিয়া আছে। এই মনস্তাত্ত্বিক যুক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক যুক্তি প্রবল। মেয়েকে বড় করিবার পর তাহাকে টাকাপয়সা দিয়া বিবাহ দিতে হইবে। বৃদ্ধ বয়সে মেয়ের উপার্জনের টাকায় খাইবার উপায় নাই, কারণ অধিকাংশ পিতামাতা এখনও মেয়েদের উপার্জনক্ষম ভাবিতে নারাজ। আবার, যদি বা তাহারা উপার্জন করে, সে টাকায় শ্বশুরকুলের অধিকার। সুতরাং কন্যাসন্তানের পশ্চাতে ‘ইনভেস্ট’ করিবার মানে নাই। পারিলে তাহাকে অপরের পুত্রসন্তানের সহিত বদলাইয়া লইতে হইবে, না হইলে অত্যাচার করিতে হইবে। কন্যাভ্রূণ হত্যা, কন্যাসন্তান বদল, কন্যাসন্তানের প্রতি অত্যাচার একই মানসিকতার ফল। কলিকাতা হইতে বেঙ্গালুরু, সর্বত্র।
এই অমানবিক মানসিকতা তো শুধু আইন দিয়া বদলানো যাইবে না। খেয়াল করিলে দেখা যাইবে, আইনের সহায়তায় মেয়েদের রক্ষার প্রয়াস তো সেই উনিশ শতক হইতেই। আইনের ফলে যে একেবারে কাজ হয় নাই তাহা নহে। কিন্তু আইনের বাহিরে যে মানুষের মন, তাহা একই রকম অন্ধকারে ঢাকা। এই সামাজিক মন বদলের উপায় কী? উপায় লাগাতার প্রচার ও সামাজিক চাপ। সর্বোপরি যাহারা বঞ্চনার শিকার, সেই মেয়েদের সচেতন করিতে হইবে। ইদানীং এমন সংবাদ বিরল নহে যে, বিবাহের বিরুদ্ধে মেয়েরা উচ্চকণ্ঠ হইয়া উঠিতেছে। আবার পাত্রপক্ষের চাহিদা দেখিয়া বিবাহমণ্ডপে তালাক চাহিয়া বসিয়াছে এমন মেয়েও আছে। ইহারাও আমাদের সমাজের অঙ্গ। এই সকল আপাতসাধারণ অথচ প্রতিবাদী মেয়েদের উদাহরণে উৎসাহিত জননীরা কন্যা বদলের ও কন্যা নিগ্রহের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইতে পারেন। মেয়েদের অর্থনৈতিক কৃত্য ও স্বাধীনতার বিষয়টিও জরুরি। তাহাও যে সম্ভব, ইহা বুঝিতে হইবে। পশ্চাৎপদতার ঐক্য ইহাতে বিনষ্ট হইতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.