সম্পাদকীয় ১...
শুভ সঙ্কেত
সি পি আই এমের পার্টি কংগ্রেস সাঙ্গ হইতে দেখা গেল, এই দলের শীর্ষ নীতি-নির্ধারক সংস্থা পলিটব্যুরোয় পশ্চিমবঙ্গ হইতে দুই জন সদস্য (মহম্মদ আমিন ও বিনয় কোঙার) বাদ পড়িলেও অন্তর্ভুক্ত হইয়াছেন কেবল রাজ্যের বিরোধী নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সূর্যবাবু তাঁহার নূতন ভূমিকায় যে দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও পরিপক্বতা দেখাইতেছেন, তাহা দলেরও অনেককেই বিস্মিত করিয়াছে। নির্বাচনে দল বিপর্যস্ত হইলেও তাঁহার পরিষদীয় ভূমিকায় কর্মীরা উজ্জীবিত বোধ করিতেছেন। রাজ্যের বিরোধী নেতা হিসাবে তিনিই রাজ্য-রাজনীতিতে দলের প্রকাশ্য ‘মুখ’। পলিটব্যুরোয় তাঁহার পদোন্নতি তাঁহার বৈধতাকে আরও বাড়াইয়াই তুলিবে। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত মহম্মদ আমিনের বিকল্প কে? দলের শ্রমিক শ্রেণির সংগঠন ‘সিটু’র রাজ্য নেতা হিসাবেই আমিন পলিটব্যুরোয় ছিলেন। তবে কি ‘শ্রমিক শ্রেণির পার্টি’ সি পি আই এম নিজের সর্বোচ্চ সংগঠনে সর্বহারা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব অপ্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিতেছে?
প্রশ্নটি আরও বেশি করিয়া উঠিতেছে এই কারণে যে, এই লইয়া দুই-দুই বার সিটু নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর নাম উঠিলেও পলিটব্যুরোয় এ বারও তাঁহার ঠাঁই হইল না। ইহা শ্যামলবাবুর ব্যক্তিগত যোগ্যতা সম্পর্কে পার্টি নেতৃত্বের অনাস্থার প্রমাণ, না কি দলীয় কর্মসূচিতে আগামী দিনে সিটুর ভূমিকা ও গুরুত্ব হ্রাসের ইঙ্গিতবহ, তাহা নিশ্চিত বলা কঠিন। তবে লক্ষণ দেখিয়া মনে হয়, দ্বিতীয়টি ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। এবং তাহার কারণও বিস্তর। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট তথা সি পি আই এমের দীর্ঘ শাসনকালে সিটুর ভূমিকা যে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থকে সিদ্ধ করিয়াছে, এমন নয়। বরং তাহার জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন, দরকষাকষির নামে গুণ্ডামি, স্বৈরাচার বহু ঐতিহ্যপূর্ণ শিল্পের মালিকদের রাজ্য হইতে পাততাড়ি গুটাইতে বাধ্য করিয়া সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদেরও রাজ্যে লগ্নি করিতে নিরুৎসাহিতই করিয়াছে। রাজ্যের আর্থিক নবীকরণের জন্য প্রয়াত জ্যোতি বসুর প্রস্তাবিত নয়া শিল্পনীতি কিংবা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পায়ন পরিকল্পনাতেও সিটুকে কোনও সদর্থক অনুঘটকের ভূমিকা লইতে দেখা যায় নাই, বরং নানা ভাবে অন্তর্ঘাত করিতেই দেখা গিয়াছে।
এই সবের পরিণাম হইয়াছে বিষময়। রাজ্য হইতে পুঁজি উধাও হইয়াছে, রাজ্যের শিল্প-সম্ভাবনা নস্যাৎ হইয়া গিয়াছে। ক্রমে মোহমুক্ত শ্রমিক শ্রেণি কারখানায়-ওয়ার্কশপে সিটুর ছত্রছায়া বর্জন করিয়া অন্যান্য ইউনিয়নেই আনুগত্য স্থানান্তরিত করিয়াছে। দলকে প্রশাসন চালাইতে সাহায্য করার পরিবর্তে তাহার উপর রীতিমত বোঝা হইয়া দাঁড়ায় এই সংগঠন। ক্রমশ গুরুত্বহীন হইয়া পড়া এই সংগঠন এখন কার্যত ধার-করা সময়ের উপর টিকিয়া আছে। শ্রমিক শ্রেণি আর সিটু-র প্রতি আকৃষ্ট হয় না, তাহারা দলে-দলে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনে নাম লিখাইতেছে। নেতৃত্বের হম্বিতম্বি হয়তো আগের মতোই, কিন্তু কারখানা বা শিল্পের ভাগ্য নিরূপণে মালিক-ম্যানেজাররাও আর সিটু নেতৃত্বের সহিত পরামর্শ করেন না। দলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের তাই মনে হইয়া থাকিতে পারে যে, শীর্ষস্থানীয় দলীয় সংগঠনে সিটুর প্রতিনিধিত্ব আর আগের মতো অপরিহার্য নয়। তাই মহম্মদ আমিন বয়স, স্বাস্থ্য ও অসুস্থতার কারণে পলিটব্যুরোর সদস্যপদ হইতে নিষ্কৃতি লইলেও তাঁহার স্থলে সিটু হইতে কাহাকেও অন্তর্ভুক্ত করার আবশ্যকতা ফুরাইয়াছে। সদ্য সমাপ্ত পার্টি কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান বার্তা ইহাই যে, সি পি আই এমের আগামী চলার পথে সিটু বা তাহার নেতৃত্ব আর আগের মতো পেশি ফুলাইয়া আস্ফালন করিতে পারিবে না, দল তাহার জন্য নির্দিষ্ট স্থান শনাক্ত করিয়া রাখিবে। অন্তত এমন একটি সঙ্কেত পড়িয়া লইবার কারণ আছে। শুভ সঙ্কেত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.