নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সাফল্য পেলেন দুর্গাপুরের অমৃতা দত্ত। ইউপিএসসি আয়োজিত ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস (আইএফএস) পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে মোট ৮৫ জন চূড়ান্ত পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়েছেন। অমৃতার স্থান ২২ নম্বরে।
দুর্গাপুরে বিধাননগরে মা-বাবা আর ছোট বোনের সঙ্গে থাকেন অমৃতা। আগে থাকতেন কাঁকসার গোপালপুরে। ১৯৯৩ সালে চলে আসেন বিধাননগরে। ভর্তি হন কারমেল কনভেন্ট হাইস্কলে (এমএএমসি)। সেখান থেকেই ২০০২ সালে আইসিএসসিতে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সেই বছরই নির্বাচিত হন ন্যাশনাল ট্যালেন্ট স্কলারশিপের জন্য। এর পরে ২০০৪ -এ বিধানচন্দ্র ইনস্টিটিউশন ফর গার্লস থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন তিনি। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রাণিবিদ্যা নিয়ে সাম্মানিক স্নাতকে ভর্তি হন। ২০০৭ সালে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
কলেজে পড়ার সময় শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় পরিবেশ ও বন নিয়ে উৎসাহ আরও বেড়ে যায় অমৃতার। তাঁদের পরামর্শে তিনি দেরাদুনের ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এফআরআই) ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পরীক্ষায় বসেন। সারা দেশে প্রথম হন তিনি। ২০০৯-এ এফআরআই ইউনিভার্সিটি থেকে বনসৃজন (ফরেস্ট্রি) বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। |
অমৃতা দত্ত। — নিজস্ব চিত্র। |
প্রথম আইএফএস পরীক্ষা দেন সে বারই। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় তেমন ভাল ফল মেলেনি। পরে দিল্লির একটি সংস্থায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ২০১০-এও সাফল্য মেলেনি। তবে ২০১১ আর নিরাশ করেনি তাঁকে। লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরে এ বছর মার্চে ‘পার্সোনালিটি টেস্ট’ নেওয়া হয়। ৩০ মার্চ বের হয় চূড়ান্ত মেধা তালিকা। মোট ৮৫ জন স্থান পেয়েছেন তালিকায়। অমৃতার স্থান ২২। ইউপিএসসি ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বার ৮৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
অমৃতার সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার। বাবা প্রভাসচন্দ্র দত্ত ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। মা তনুশ্রীদেবী গৃহবধূ। তিনিই বাড়িতে অমৃতাকে পড়াতেন। তনুশ্রীদেবীর কথায়, “মেয়ের সামনে কোনও দিন ‘টাগের্ট’ দিইনি। বলেছি যেটা ভাল লাগবে, সেটাই পড়বে।” অমৃতার বোন বার্তা কলকাতায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ‘ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন’ নিয়ে পড়াশোনা করছেন। দিদির সাফল্য তাঁকেও অনুপ্রাণিত করবে বলে জানান তিনি।
পড়াশোনার পাশাপাশি তিন বছর বয়স থেকেই কত্থক শিখতেন অমৃতা। স্কুল, কলেজ ও শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি। অবসরে সঙ্গী গল্পের বই। এছাড়াও তাঁর পছন্দ অ্যাথলেটিক্স। এফআরআই ইউনিভার্সিটির বার্ষিক অ্যাথলেটিক্স মিটে মোট ৮টি ইভেন্টে পদক জিতে ‘সেরার সেরা’ শিরোপা পেয়েছেন তিনি। সর্বভারতীয় পরীক্ষায় এ রাজ্যের সাফল্য কম কেন? অমৃতার উপলব্ধি, “আমরা খুব তাড়াতাড়ি সাফল্য চাই। তাই সর্ব ভারতীয় পরীক্ষায় সফল হওয়ার ধৈর্য ও স্থিরতা আমাদের থাকে না। সাফল্য পেতে গেলে লেগে থাকতে হবে।” |