প্রমাণের অভাবে রায়গড় গুলিচালনা মামলা থেকে মাওবাদী নেতা সব্যসাচী পণ্ডার স্ত্রী শুভশ্রী দাসকে মুক্তি দিল ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। আজই জেল থেকে ছাড়া পেলেন শুভশ্রী। মুক্তি পেয়ে অবশ্য নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না তিনি। তাঁর আশঙ্কা, নয়াগড় হামলার মামলার তাঁকে ফের গ্রেফতার করা হতে পারে।
শুভশ্রী বলেন, “আমার মনে হচ্ছে নয়াগড় মামলায় জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ফের আমাকে গ্রেফতার করবে পুলিশ।” তবে সরকার তাঁকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরার সুযোগ দিলে তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন শুভশ্রী। স্বামী সব্যসাচীর ব্যাপারে তিনি বলেন, “মানুষের মুক্তির জন্যই ওঁর লড়াই। আশা করি উনি সফল হবেন। তবে আমার মনে হয় মাওবাদীদের হিংসার পথ থেকে সরে আসা উচিত।”
শুভশ্রীর মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ইতালীয় পাওলো বোসুস্কোকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে সব্যসাচীদের গোষ্ঠী যে শর্তগুলি দিয়েছে, তার মধ্যে শুভশ্রীর মুক্তিও অন্যতম। তবে পাওলো এবং বিধায়ক ঝিনা হিকাকার মুক্তি নিয়ে মাওবাদীদের দু’টি গোষ্ঠী যে সব নতুন শর্ত চাপাচ্ছে তা কোনওমতেই মেনে নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে নবীন পট্টনায়ক সরকার।
মাওবাদীদের শর্ত মেনে জেলবন্দি জঙ্গিদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে গত কালই ওড়িশা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সাফ জানিয়েছিল, মাওবাদীদের নতুন কোনও শর্ত মানা হলে তারা আর মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় কাজ করতে যাবে না। ঝিনা হিকাকার অপহরণকারীরা ৩০ জন মাওবাদীকে মুক্তির দাবি জানিয়েছে। অন্য দিকে, কাদের কাদের ছাড়া হবে, সরকারকে তার স্পষ্ট তালিকা দিতে বলেছে পাওলোর অপহরণকারীরা। মাওবাদীদের দু’টি গোষ্ঠীর নতুন শর্ত মানা হবে না বলে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ইউ এন বেহরা। তিনি আজ জানিয়েছেন, বিধায়কের মুক্তির বিনিময়ে মোট ২৩ জন মাওবাদীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১৫ জনই মাওবাদীদের শাখা সংগঠন চাষি মূলিয়া সঙ্ঘের সদস্য। তবে হিকাকা এবং পাওলোর মুক্তির বিনিময়ে যে মাওবাদীদের ছাড়া হচ্ছে, তাদের অবিলম্বে আদালতে জামিনের আবেদন করতে বলেছেন বেহরা।
দুই অপহৃতের মুক্তির ব্যাপারে কোনও সমাধানের রাস্তা বের করতে না পারায় আজও বিজেডি সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। ওড়িশা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি নিরঞ্জন পট্টনায়ক বলেন, “সরকারের দুর্বলতা ও অকর্মণ্যতা প্রমাণিত।” বিজেপি নেতা বি বি হরিচরণ বলেন, “সরকার বৃহত্তর মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে কাজ করতে অক্ষম।” মাওবাদীদের মুক্তির ব্যাপারে যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। মাওবাদী সমস্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন তিনি।
শঙ্করাচার্য বলেন, “এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা জীবিকা-কেন্দ্রিক। পুরনো সংস্কৃতি ধরে রেখে দেশের উন্নয়ন ঘটানোর ভাবনা এর মাধ্যমে গড়ে ওঠে না। পাশাপাশি, পরিবার ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ছে। এই সব কিছু থেকেই জন্ম নিচ্ছে সন্ত্রাসবাদ।” |