ছত্তীসগঢ়ে খনি কেলেঙ্কারির ঘটনায় এ বার খোদ বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল উঠল। ছত্তীসগঢ় বিধানসভায় পেশ হওয়া কনট্রোলার অ্যান্ড অডিটরস জেনারেলের (সিএজি) রিপোর্ট অনুযায়ী, গডকড়ী-ঘনিষ্ঠ নাগপুরের ব্যবসায়ী অজয় সঞ্চেতির সংস্থাকে নামমাত্র মূল্যে কয়লা খনি বণ্টন করেছিল বিজেপি সরকার। এর জন্য এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের।
অজয় সঞ্চেতির এই সংস্থা এসএমএস ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সঙ্গে গডকড়ীর সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। কিন্তু অতীতে গডকড়ীর ব্যবসায়ে অংশীদার ছিলেন সঞ্চেতি। কার্যত গডকড়ীর দৌলতেই বিজেপির টিকিটে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন সঞ্চেতি। স্বাভাবিক ভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয় কংগ্রেস। ছত্তীসগঢ়ের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নন্দকুমার পটেলকে পাশে বসিয়ে ছত্তীসগঢ়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক বি কে হরিপ্রসাদ বলেন, “সঞ্চেতি কে এবং তাঁর খুঁটির জোর কোথায়, কারও অজানা নয়। বোঝা যাচ্ছে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বুলি আওড়ানো গডকড়ী হরিশ্চন্দ্র নন। বরং দুর্নীতির দায়ে এ বার তিনি নিজেই পদত্যাগ করুন।”
কংগ্রেসের প্রচারের পাশাপাশি খনি কেলেঙ্কারি নিয়ে দলের মধ্যেও চাপে পড়ে গিয়েছেন গডকড়ী। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে ভরাডুবি, বসপা-র দাগী নেতা বাবুসিংহ কুশওয়াকে দলে নেওয়া ও ঝাড়খণ্ড থেকে অংশুমান মিশ্রকে রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থী করার ঘটনা নিয়ে গডকড়ী এমনিতেই দলে প্রবল চাপে রয়েছেন। তার ওপর আবার লোকসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক রমেশ ব্যাস বলেছেন, রাজ্যসভার সাংসদ অজয় সঞ্চেতি খনির বরাত নিয়ে ব্যবসা করতে পারলে দলের অন্যদেরও সেই অধিকার থাকা উচিত।
যে সিএজি রিপোর্টকে অস্ত্র করে টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে কেন্দ্রে কংগ্রেসকে চেপে ধরেছিল বিজেপি, এ বার কংগ্রেস সেটাই ফিরিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি-র দিকে। বিজেপি শাসিত গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও উত্তরাখণ্ড সরকারের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে সিএজি রিপোর্ট উল্লেখ করে আক্রমণ শানানো হচ্ছিলই। কিন্তু ছত্তীসগঢ়ের খনি কেলেঙ্কারির সঙ্গে অজয় সঞ্চেতির নাম জড়াতেই তেড়েফুঁড়ে নামতে চাইছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস যে এটা করতে পারে সেই আশঙ্কা গডকড়ীর ঘনিষ্ঠ মহলে ছিলই। দলীয় সূত্রে খবর, সেই কারণে গডকড়ী আজ সকালে সাধারণ সম্পাদকদের বৈঠকে স্পষ্ট নির্দেশ দেন, পূর্ণ শক্তি দিয়ে কংগ্রেসের এই প্রচারের মোকাবিলা করতে হবে। এটা তুলে ধরতে হবে যে দলের তিনি কোনও ভাবেই এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত নন। বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই নির্দেশ পালনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেন দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ। ছত্তীসগঢ় খনি উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানকেও হাজির করা হয়। রবিশঙ্করের বক্তব্য, দরপত্র ডেকেই খনি বণ্টন করা হয়। ২০০৮ সালে এই বণ্টনের সময়ে গডকড়ী দলের সভাপতিও ছিলেন না। সঞ্চেতি-গডকড়ী ব্যবসায়িক যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রবিশঙ্কর বলেন, রাজনীতিকরা ব্যবসা করতে পারবেন না, এমন কোনও কথা নেই। তা ছাড়া সঞ্চেতিরা তিন প্রজন্ম ধরে সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। সেই কারণেই তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, এমন একটা অবস্থায় গডকড়ী খুব সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছেন। এমনকী বিহারে বিধান পরিষদের নির্বাচনে সি পি ঠাকুরের পুত্র বিবেক ঠাকুরকে প্রার্থীও করতে চাননি, পাছে স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে। ছত্তীসগঢ়ের খনি কেলেঙ্কারির বিষয়টি মাথাচাড়া দিতেই তাই গডকড়ী আজ দলকে সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলার নির্দেশও দিয়েছেন। বিজেপির এক নেতার কথায়, খনি কেলেঙ্কারির ঘটনায় হয়তো সরাসরি গডকড়ীর কোনও যোগযোগ প্রমাণ করা যাবে না, কিন্তু কংগ্রেসের প্রচার বিজেপি সভাপতির অস্বস্তি যে বাড়াবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। |