দায়িত্ব পাওয়ার পর বিশ্বভারতীর সার্বিক মানোন্নয়নে উদ্যোগী হলেন নতুন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। উচ্চশিক্ষায় উৎকর্ষ বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে বিশ্বভারতীর কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বভারতীর শিক্ষাসমিতির বৈঠকে বেশ কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সোমবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান বিশ্বভারতীর উপাচার্য।
এর আগে বিশ্বভারতীর ‘হৃত গৌরব’ ফেরাতে রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির বেশ কিছু সুপারিশকে মাথায় রেখে নতুন করে উদ্যমী হয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত বলেন, “বিদ্যা ভবন ও শিক্ষা ভবনকে নিয়ে যৌথ ভাবে ইন্টিগ্রেটেড কোর্স চালু করা হবে। পরিবেশ বিজ্ঞানকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।” কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স নিয়েও আলোচনা করেছে। সুশান্তবাবু জানিয়েছেন, আইআইএসইআর ও ভিইসিসিআই-এর সঙ্গে বিশ্বভারতীর খুব শীঘ্রই একটি মউ চুক্তি হতে চলেছে। তাঁর আশা, “এই উদ্যোগে ভূমিকম্প, সবুজায়ন, আর্সেনিক, ক্লোরাইড এবং মাটির রসায়ন-সব একাধিক বিষয়ে গবেষণার পরিধি আরও বাড়বে।”
বিশ্বভারতীর বর্তমান কর্মসংস্কৃতি নিয়ে বহুদিন থেকে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছিল। কর্তৃপক্ষ একটা সময় বাধ্য হয়ে এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকাও জারি করেছিলেন। বিশ্বভারতীর কর্মসচিব মুকুট মিত্র ‘সময়ানুবর্তী’ ও ‘নিয়মানুবর্তী’ হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি নির্দেশ অমান্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি বলেই অভিযোগ।
এ বারের শিক্ষা-সমিতির বৈঠকে কর্মসংস্কৃতি ফেরানোর বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত জানিয়েছেন, সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে গরমের সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা ৩০ এবং শীতের সময় ৯টা ৩০ থেকে ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্বভারতীর পর্যটন ক্ষেত্রেও কিছু বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সুশান্তবাবু বলেন, “রবীন্দ্রানুরাগীদের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু ব্যবস্থা থাকছে। রতনকুঠি অতিথি নিবাস-সহ বিশ্বভারতীর বিভিন্ন অতিথি নিবাসগুলিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। একসঙ্গে শ’দেড়েক পর্যটক যাতে বিশ্বভারতীতে থাকতে পারেন তার ব্যবস্থা থাকছে। তা ছাড়া আশ্রম চত্বরের সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য থাকছে বিভিন্ন পরিকল্পনা। গাছ লাগানো থেকে ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলের সংস্কার এবং পর্যটকদের জন্য পানীয় জল, শৌচাগারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির শতবর্ষ বিশেষ ভাবে পালন করা হবে। তার বিভিন্ন পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। উপাচার্য জানিয়েছেন, নোবেল প্রাপ্তির শতবর্ষ উদযাপনে জেএনইউ , বেজিং এবং বিশ্বভারতী একযোগে নানা অনুষ্ঠান করবে। |