চিঠি বিতর্কে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। সোমবার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগনের বিরুদ্ধে সার্ভিস রুল ভাঙার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সোমবার এনবিএসিটিসির সদর দফতর কোচবিহার পরিবহণ ভবনে চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এমডি’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁর অভিযোগ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিছু অসাধু লোকের খপ্পরে পড়েছেন। সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এমডি সার্ভিস রুল ভেঙেছেন। গোপন চিঠি প্রকাশ করছেন। সেই সঙ্গে দৈনন্দিন কাজে না জড়ানোর ব্যাপারে এমডি যে চিঠি দিয়েছেন তা ‘ণত্ত্ব ষত্ত্ব জ্ঞান’ থাকলে কেউ দিতে পারেন না বলেও কটাক্ষ করেছেন চেয়ারম্যান। এমডি অবশ্য রবীন্দ্রনাথবাবুর ওই কটাক্ষকে আমলই দিতে চাননি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার শাসক দল প্রভাবিত নিগমের কর্মী সংগঠন কোচবিহার পরিবহণ ভবনে এমডির অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে এমডি সংস্থার কয়েকজন আধিকারিককে বদলি এবং কয়েকজনের দায়িত্ব রদবদল করার জারি করা থেকেই চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই নির্দেশ স্থগিত রাখার জন্য ৫ এপ্রিল এমডিকে চিঠি দেন চেয়ারম্যান। শনিবার পাল্টা চিঠি দিয়ে চেয়ারম্যানকে দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজে জড়াতে বারণ করেন এমডি। সংবাদমাধ্যমে ওই খবর প্রকাশের জেরে নিগমের অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এ দিন চিঠি হাতে পান রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পরে মাস দেড়েক কাটতেই এমডি উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছেন। রাজ্যে পরিবর্তন হলেও কিছু আমলা বদলাননি। এমডি’র ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।” |
রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ছয় মাসের মধ্যে নিগমের হাল ফেরানোর যে চেষ্টা শুরু করেছিলাম তাও ভেস্তে যেতে বসেছে। পূর্ণ সময়ের এমডি চাইব।” এমডি বলেন, “চেয়ারম্যান আমার সম্পর্কে এরকম মুল্যায়ণ করলে কী আর বলার থাকতে পারে।” ডিসেম্বরে কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক সি মুরুগন নিগমের এমডি হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন। প্রথম দিকে চেয়ারম্যানই প্রকাশ্যে তাঁর প্রশংসাও করেছেন। এমনকী নিগমের হাল ফেরাতে ডিপোর সংখ্যা কমানো-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ তাঁর সময়েই নেওয়া হয়। তাতে আয়ও বাড়ছিল। চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে ‘তৃণমূল ঘনিষ্ঠ’ এক অফিসারকে বদলির তালিকায় রাখা নিয়েই তাঁর সঙ্গে বিবাদের সূত্রপাত। চিঠি ও পাল্টা চিঠির ঘটনায় যা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে ১১ এপ্রিল কলকাতায় পরিবহণ মন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে এমডি অব্যাহতি চাইতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এদিনই এমডি’র অপসারণের দাবিতে পরিবহণ ভবনে বিক্ষোভ দেখান এনবিএসটিসির ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা। ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, “এমডি চেয়ারম্যানের ওপর খবরদারি করছেন। তাঁকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এটা মানা যাবে না। আমরা তাঁর অপসারণের দাবিতে পরিবহণ মন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছি।” চেয়ারম্যানকে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। |