গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতির সই জাল করে স্কুল ভবন তৈরির ৯ লক্ষাধিক টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হরিশ্চন্দ্রপুর (১) ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। সর্বশিক্ষা মিশমনের তরফে তিনটি স্কুলকে ভবন তৈরির জন্য ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। সোমবার স্থানীয় গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি এবং স্থানীয় বাসিন্দারা খোঁজ করে জানতে পারেন, কোনও কাজ না হলেও দফায় দফায় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এবং প্রশাসন। সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক চিন্ময় সরকার বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে আগামী ১৬ এপ্রিল সংসদে হাজির হয়ে লিখিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও সজল তামাং বলেছেন, “জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি স্কুল পরিদর্শককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।” সংসদ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত ওই শিক্ষক নেতার নাম দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হরিশ্চন্দ্রপুর বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিকাশ বন্দোপাধ্যায়ের তাঁর কাকা। তিনি ব্লকের সাধারণ সম্পাদক। ওই এলাকায় রাধানগর প্রাথমিক ও হলদিবাড়ি প্রাথমিক স্কুলও রয়েছে। দ্রোণাচার্যবাবু তিনটি স্কুলেরই গ্রাম শিক্ষা কমিটির সচিব। আর এলাকার কংগ্রেস পঞ্চায়েত সদস্য সবিতা দাস গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি। সবিতাদেবী বলেন, “আমার সই ছাড়া টাকা তোলা সম্ভব নয়। সচিব কীভাবে ৯ লক্ষ টাকা তুললেন বুঝতে পারছি না। কাজই হয়নি। মনে হচ্ছে আমার সই জাল করা হয়েছে।” অভিযুক্ত দ্রোণাচার্যবাবু বলেন, “আমি কলকাতায় আছি। সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি কোনও টাকা নয়ছয় করিনি। তদন্ত হলে সব স্পষ্ট হবে। কাগজপত্র জনিত নানা কারণে কাজ শুরু হয়নি।” দলের নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে তৃণমূল। ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিকাশবাবু বলেন, “দ্রোণাচার্য অভিযোগ মিথ্যা বলে জানিয়েছে। তবে অভিযোগের প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক। ও দোষী হলে প্রশাসন আইন মেনে ব্যবস্থা নেবে। এতে বলার কিছু নেই।” গত বছর পুজোর পর তিনটি স্কুলের প্রতিটিকে ভবন তৈরির জন্য ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এতদিনে বরাদ্দ টাকায় কাজ না করে সচিব টালবাহানা করছিলেন বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। এদিন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাতে মাত্র ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ২৭০ টাকা পড়ে রয়েছে। ব্যাঙ্কের তথ্য নিয়ে তড়িঘড়ি গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি-সহ একদল বাসিন্দা প্রশাসনের কাছে টাকা লোপাটের অভিযোগ জানান। |