শিল্প গড়তে গিয়ে নানা সমস্যাকোথাও জমি-জট, কোথাও প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়া। কিন্তু সমস্যা মেটাতে নতুন রাজ্য প্রশাসনের একটা বড় অংশের ‘গয়ংগচ্ছ’ মানসিকতা রয়ে গিয়েছে। বদলায়নি ‘পরিবর্তনের’ পরেও। সোমবার শিলিগুড়িতে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এমনই ক্ষোভ-অভিযোগ জানালেন উত্তরবঙ্গের শিল্পোদ্যোগীরা। দাবি করলেন দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপের। শিল্পমন্ত্রী অবশ্য যত দ্রুত সম্ভব যাবতীয় জটিলতার নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘শিল্প গড়ার কাজে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।”
বাম-জমানায় রায়গঞ্জের কাছে একটি জুট-পার্ক গড়তে গিয়ে জমি-জটে পড়েন শিল্পোদ্যোগী পবন শিকারিয়া। এ দিন শিল্পমন্ত্রীর কাছে তাঁর অভিযোগ, বাম-আমলে মহাকরণে কয়েকবার ছোটাছুটি করে কাজ হয়নি। রাজ্যে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নানা জায়গায় বলেও জট কাটেনি। |
শিলিগুড়ি লাগোয়া ঘোড়ামোড় এলাকায় বিয়ার কারখানা তৈরির কাজে নেমেছেন প্রেম অগ্রবাল নামে এক শিল্পোদ্যোগী। তাঁর ক্ষোভ, জলপাইগুড়ি আবগারি দফতরে প্রকল্প জমা দেওয়ার পরেই দ্রুত ছাড়পত্র পেতে মহাকরণে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোনও তরফে সাড়া পাচ্ছেন না।
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি মূল রাস্তার ধারে ছোট-মাঝারি অনেক কারখানা হয়েছে। অনেকে শিল্পোদ্যোগী জমি কিনেছেন। ওই রাস্তা প্রায় দু’বছর ‘বেহাল’। অভিযোগ, বাম-সরকার তা সারানো নিয়ে ‘গয়ংগচ্ছ’ মনোভাব দেখিয়েছিল। কিন্তু নতুন সরকার আসার পরের ১০ মাসেও রাস্তার হাল ফেরেনি। এই ‘পরিস্থিতি’তে শিল্পমন্ত্রীর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের কর্তা সুরজিৎ পাল। বণিকসভা সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ শাখার সহ-সভাপতি প্রমোদকুমার শাহ শিল্পমন্ত্রীকে জানান, শিলিগুড়িতেই ৩৪ একরের শিল্পতালুকে ৩ একর খাস জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সমস্যা ঝুলে রয়েছে।
একাধিক শিল্পোদ্যোগীর গলাতেই একই সুর, “আগেও যে ভাবে ‘দেখছি-দেখব’ শুনেছি, এখনও কিছু আমলা তেমনই শোনাচ্ছেন। ‘পরিবর্তন’-এর পরেও কেন সরকারি কর্মীদের মনোভাব পাল্টাচ্ছে না?”
প্রতিটি সমস্যা-অভিযোগ ‘নোট’ করে নেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, “৩৪ বছরের একটা সরকার অপেশাদারি মনোভাব দেখানোয় নানা ক্ষেত্রে সমস্যা স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে। সব কিছুর সমাধান রাতারাতি হওয়ার নয়। তবু যথাসম্ভব দ্রুত গতিতে শিল্প গড়ার কাজ হচ্ছে।” শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে পার্থবাবুর ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও। তাঁর আশ্বাস, উত্তরবঙ্গে শিল্প স্থাপনে বাধা দূর করার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো-ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ঋণে জয়গাঁ-চ্যাংরাবান্ধা এবং পানিট্যাঙ্কি-ফুলবাড়ি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।
শিল্পোদ্যোগীদের পার্থবাবু জানান, উত্তরবঙ্গের পাঁচটি সরকারি চা বাগান যৌথ বা বেসরকারি উদ্যোগে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে রাজ্য মাঝারি মাপের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, একাধিক আইটি হাব, ভেষজ কেন্দ্র গড়তে চায়। শিলিগুড়িতে ফিল্ম সিটি, কোচবিহারে জুট-পার্ক গড়া হবে। পরে সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ শাখার সহ-সভাপতি বলেন, “মন্ত্রীর কথায় মনে হল, রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গে শিল্প স্থাপনে সদর্থক পদক্ষেপ করতে চাইছে। দেখা যাক কী হয়।”
শিল্প মহলের তরফে পার্থবাবুর কাছে একাধিক উত্তরবঙ্গভিত্তিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ‘হিমালয়ান ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষে রাজ বসু উত্তরবঙ্গে ‘ট্যুরিজম হাব ও পর্যটনকেন্দ্রিক ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ তৈরির প্রস্তাব দেন। ৮২ কোটি টাকার প্রস্তাব জমা দেন রায়গঞ্জ স্পিনিং মিল কর্তৃপক্ষ। পার্থবাবু দাবি করেন, গত দশ মাসে রাজ্যে ৯৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে বিভিন্ন শিল্পোদ্যোগীর কাছ থেকে। এ দিনও তিনি বলেন, “শিল্পের জন্য জমি নিয়ে ফেলে রাখা কিংবা অন্য কাজে ব্যবহার করা রাজ্য সরকার বরদাস্ত করবে না।” |