মিড ডে মিল খাওয়ার আগে পড়ুয়াদের সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। শিক্ষা কেন্দ্রে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। পরিশ্রুত পানীয় জল ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য জুড়ে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে যে ‘নির্মল বিদ্যালয় অভিযান’ শুরু হয়েছে তাতে এই দুটি বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউনিসেফের আর্থিক সহায়তায় দক্ষিণ দিনাজপুরে সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে ৭-১৩ এপ্রিল জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ওই অভিযান শুরু হয়েছে। খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষকেরা এলাকায় স্বাস্থ্য সচেতনতার মিছিল, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা-সহ নানা অনুষ্ঠান করছেন। স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না এবং কচিকাঁচাদের বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার নিশ্চিত করাই এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। বালুরঘাট ছেড়ে জেলার তপন ব্লকে ঢুকতেই ওই অভিযানের ছবিটা ম্লান হয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। কেননা সেখানে এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা যায়নি। একসময় স্কুলে গভীর নলকূপ বসানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে পুকুরের ঘোলা জল দিয়েই একাধিক স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না হচ্ছে বলে অভিযোগ। |
ছবি: তুলেছেন অমিত মোহান্ত। |
গরম পড়তেই জলের স্তর নেমে যাওয়ায় তপন ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পানীয় জলের নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। স্কুলের নলকূপ দিয়েও জল ওঠে না। ফলে সর্বশিক্ষা মিশনের ওই অভিযান এই ব্লকের বেশ কিছু স্কুলে কার্যত কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে বলে অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ। তাঁদের অভিযোগ, নোংরা জলে অ্যালুমিনিয়ামের থালা ধুয়ে পুকুরের জলে রান্না মিড ডে মিলের খাবার খেতে হচ্ছে ছেলেমেয়েদের। স্থানীয় পঞ্চায়েতে আবেদন করেও কিছু হয়নি। সাবান দিয়ে ধোওয়া হাত জীবাণুমুক্ত হলেও দূষিত পুকুরের জলে রান্না খাবার খেয়ে পড়ুয়ারা অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় তপন পূর্ব চক্রের শিক্ষকেরা মিড ডে মিলের রান্না বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। পশ্চিম নিমপুর, নিমগাছি, মদনপুর, পাহাড়পুর, সন্ধ্যাপুকুর, তারাজপুর এবং হরিবংশীপুর প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পুকুরের জল দিয়ে মিড ডে মিলের রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। গত সপ্তাহে ওই সমস্ত স্কুলের শিক্ষকেরা সংশ্লিষ্ট অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে সমস্যা তুলে ধরে দ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা না হলে মিড ডে মিলের রান্না বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান বাচ্চু হাঁসদা বলেন, “পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদ থেকে স্কুলে নলকূপ বসানো হয়। তপন ব্লকে বেশির ভাগ স্কুলে গভীর নলকূপ বসানো আছে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নিমপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুরেশ সরকার, পাহাড়পুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নমিতা দাসেরা বলেন, “গরম পড়তেই স্কুল চত্বরে থাকা নলকূপ থেকে জল উঠছে না। মিড ডে মিলের রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময় পুকুরের জলই ব্যবহার করছেন রাঁধুনিরা।” জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী জানান, গরমে তপনে পানীয় জলের সঙ্কট হয়। তিনি বলেন, “তবে পুকুরের জল দিয়ে মিড ডে মিলের রান্না হচ্ছে এমন খবর জানা নেই।” খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। |