মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে এল স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিনিধি দল। ৩ সদস্যের এই দলটিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনোজ ঘোষ, চিকিৎসক লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ ও অনুপ দাস। মেডিক্যালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স খোলার চেষ্টা চলছে। তার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এ সংক্রান্ত আবেদন জানানো হয়। এই আবেদনে সাড়া দেওয়ার আগে কলেজের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা জরুরি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেই পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতেই এ দিন মেডিক্যালে আসে ওই প্রতিনিধি দল। আজ, মঙ্গলবারও পরিদর্শন চলবে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা মেডিক্যালের পরিচালন সমিতির সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু হলে রোগীরাও উপকৃত হবেন। নিউরো-সহ এখানে বেশ কয়েকটি ইউনিট খোলা যাবে। ফলে, রোগীদের আর কলকাতায় স্থানান্তরিত করতে হবে না।” রেডিওলজি, চেস্ট, মেডিসিন -সহ ১৪টি বিষয়ে মোট ৪০ জন ছাত্রছাত্রী যাতে এখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়তে পারে, প্রাথমিক ভাবে সেই পরিকল্পনাই করেছেন মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। |
বৈঠকে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। নিজস্ব চিত্র। |
এ দিকে, সোমবারই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠক হয়। সমিতির সভাপতি ছাড়াও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র, অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যাল, হাসপাতাল সুপার রামনারায়ণ মাইতি প্রমুখ। বৈঠকে হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েই আলোচনা হয়। ওঠে বারবার প্রসূতি মৃত্যুর প্রসঙ্গ। সম্প্রতি চিকিৎসার অবহেলায় প্রসূতি-মৃত্যু নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়েছিল। একাধিক বার হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভও হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ঠিক নয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ঠিক নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগের তদন্ত করেছেন। সেখানে গাফিলতি প্রমাণ মেলেনি।” তবে, একাংশ সিনিয়র চিকিৎসক যে এখনও অনিয়মিত যাতায়াত করছেন, তা স্বীকার করে পরিচালন সমিতির সভাপতি বলেন, “একাংশ সিনিয়র চিকিৎসকের অনিয়মিত যাতায়াতের বিষয়টি অস্বীকার করছি না। কিন্তু, আগের থেকে অনেকটা কমেছে। বিষয়টি অধ্যক্ষকে দেখতে বলেছি।” পাশাপাশি, মেডিক্যালের পরিকাঠামো নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “নার্সিং কলেজে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। হাসপাতালেও কর্মীর সংখ্যা কম। এটা তো ১১ মাসের ঘটনা নয়। বিগত সরকার বিষয়টির দিকে লক্ষ্য করেনি। তাই এই পরিস্থিতি।”
রোগীর পরিবারের লোকজনদের সাহায্য করতে ইতিমধ্যে হাসপাতালে খোলা হয়েছে একটি বিশেষ কেন্দ্র। যার নাম ‘মে আই হেল্প ইউ’। একটি সংস্থাই এই কেন্দ্রের দায়িত্ব পেয়েছে। ওই সংস্থার লোকজন এখানে থেকে রোগীর পরিবারের লোকজনদের সাহায্য করবেন। কোন রোগীকে কোন ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে হবে, তা বলে দেবেন। মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রতিদিন কয়েকশো রোগী আসেন। সকাল হলেই হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় জমতে শুরু করে। কোন বিভাগের বহির্বিভাগ কোন দিকে, তা-ও অনেকে জানেন না। বিশেষ করে, যাঁরা শহর ও শহরতলির বাইরে থেকে আসেন। এই সহায়তা কেন্দ্র খোলার ফলে এঁদের সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। এই কেন্দ্রটি যাতে ভালভাবে চলে, এ দিন সেই নির্দেশও দেন মন্ত্রী।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে অকারণে রোগীর পরিবারের লোক ভিড় করেন বলে অভিযোগ ওঠে পরিচালন সমিতি বৈঠকে। এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, রোগীর সঙ্গে তাঁর পরিজন তো থাকবেনই। কিন্তু একসঙ্গে অনেকে ঢুকে পড়লে সমস্যা হয়। সামান্য বচসা থেকেই অনেক সময় গোলমাল বাধে। ওয়ার্ডের মধ্যে যাতে অনেক লোকজন ঢুকে পড়তে না পারেন, সে জন্য ‘বাড়তি’ নজরদারি চালানোরও সিদ্ধান্ত হয়। |