কথা ছিল, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চালু হবে সদ্যোজাতদের জন্য এসএনসিইউ। শিশু ও প্রসূতি-মৃত্যুর হার কমাতে গঠিত টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিদল চলতি বছরের গোড়ায় মেদিনীপুরে এসে তেমনই আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় কী! ফেব্রুয়ারি, মার্চ পেরিয়ে এখন এপ্রিল। কিন্তু এখনও চালু হল না ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)। হাসপাতাল সূত্রের খবর, পরিস্থিতি যা তাতে চলতি মাসেও এই ইউনিট চালু করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম এখনও পৌঁছয়নি। এই অবস্থার কথা মেনে রাজ্যের মন্ত্রী তথা মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র এখন বলছেন, “মে মাসের মধ্যেই এই ইউনিট চালু হবে। ইউনিটের ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। যেটুকু কাজ বাকি রয়েছে, তা চলতি মাসের মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা চলছে।” তবে, রোগীর পরিবারের লোকজনদের অভিযোগ, এখানে সব কাজই চলে ঢিমেতালে। ফলে, মে মাসেও এই ইউনিট চালু হবে কি না, সে নিয়ে সংশয় বিভিন্ন মহলেই। |
যন্ত্রপাতি এসে গেলেও চালু হয়নি এসএনসিইউ। নিজস্ব চিত্র। |
সোমবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠক ছিল। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই বৈঠকেও এসএনসিইউ নিয়ে আলোচনা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যাল, হাসপাতালের সুপার রামনারায়ণ মাইতি-সহ স্বাস্থ্য-কর্তাদের কাছে মন্ত্রী জানতে চান, ‘এখন কী অবস্থায় এসএনসিইউ? কাজ কতদূর এগিয়েছে?’ অধ্যক্ষ জানান, এ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রী নিজেও এসএনসিইউয়ের কাজ খতিয়ে দেখেন। এখানে এখন নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট রয়েছে। সব সময়েই অন্তত ৬টি শিশু ভর্তি থাকে। যাদের শারীরিক অবস্থা অন্যদের তুলনায় খারাপ। এসএনসিইউ চালু হলে আরও অন্তত ১২টি শিশুকে ‘বিশেষ’ যত্নে রাখা যায়। যাদের শারীরিক অবস্থা আরও সঙ্কটজনক। নতুন এই ইউনিটে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবার ব্যবস্থা থাকার কথা। পাশাপাশি, এখানে এমন আরও ১৩টি শয্যা থাকবে যেখানে অপেক্ষাকৃত কম ‘সঙ্কটজনক’ শিশুদেরও চিকিৎসা চলবে। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “এর ফলে সঙ্কটজনক শিশুদের অনেক ক্ষেত্রেই বাঁচানো সম্ভব হবে।” চলতি বছরের গোড়াতেই শিশু-মৃত্যু নিয়ে শোরগোল পড়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। ১০ দিনে ৩১টি শিশুর মৃত্যু হয়। এর পরেই দ্রুত এসএনসিইউ চালুতে উদ্যোগী হন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়নি। মেডিক্যালের শিশু ওয়ার্ডে ৪৫টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু শিশু ভর্তি থাকে অন্তত ৮৫ জন। ফলে একই শয্যায় দু’টি শিশুকেও রাখতে হয়। শিশু-মৃত্যু নিয়ে শোরগোল পড়ার পর অবশ্য নড়েচড়ে বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশু ওয়ার্ডের খোলামেলা পরিবেশের কথা ভেবে আরও একটি ঘরে কিছু শয্যা স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে এই ওয়ার্ডের শয্যা-সংখ্যাও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। মেডিক্যালে এসএনসিইউ চালু হলে শিশু-মৃত্যুর হার কমবে বলেই মনে করেন রোগীর পরিবারের লোকজন। তাঁদের বক্তব্য, এসএনসিইউ চালু হলে ২৪ ঘণ্টাই শিশুদের উপর ‘বিশেষ’ নজর রাখা যাবে। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটটি এখনও চালু হল না। এ জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগই বেশি করে উঠছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, এসএনসিইউয়ের বেশ কিছু সরঞ্জাম এসে গিয়েছে। কিছু সরঞ্জাম পৌঁছনো বাকি। পরিকাঠামোগত কিছু কাজও বাকি রয়েছে। চলতি মাসেই সে-সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। |