ভাগাড় নিয়ে আন্দোলনের সময়ে শিশু-সহ ছাত্রছাত্রীদের গ্রেফতার করার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ি পুরসভার কনফারেন্স হলে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী। সেখানে পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত ছাড়াও জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। রবিবার ভাগাড়ের সামনে থেকে শিশু ও মহিলা সহ ৭০ জনকে পুরসভার জঞ্জাল ফেলার গাড়ি আটকানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “এই ধরণের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। কোনও কোনও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা হয়। এই ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করিনি। মানবিকতার সঙ্গে ভাগাড় সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।” মন্ত্রীর কথার উপর ভরসা রেখে আপাতত জঞ্জাল ফেলার গাড়ি আটকানোর রাস্তায় তাঁরা যাবেন না বলে ঘোষণা করেন সচেতনা জাগরণ কমিটির নেতৃত্ব। কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সমর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে কোনও সময় মারণ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের জীবন বিপন্ন। জল খাওয়া যাচ্ছে না। গোটা এলাকায় দূর্গন্ধ। মশা, মাছির উপদ্রব ক্রমশই বাড়ছে। মন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তার উপর ভরসা করেই জঞ্জাল ফেলার গাড়ি আটকানোর আন্দোলন স্থগিত রাখা হয়েছে। আশ্বাস পূরণ না হলে ফের আন্দোলনে যাব।”
গত শুক্রবার থেকে ভাগাড়ে জঞ্জাল ফেলতে বাধা দিতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রবিবার পুলিশ নামিয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জঞ্জাল ফেলার কাজ শুরু করে পুরসভা। তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। এদিন স্থানীয় বাসিন্দারা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েকটি দাবি রাখেন। ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া এলাকা দূষণমুক্ত করার কাজ করতে হবে। পুরসভার পানীয় জলের সুবিধে যাতে ওই এলাকার মানুষ পান সেই ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানান তাঁরা। এ ছাড়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চর্ম রোগ ও পেটের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এলাকায় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাগাড় চত্বরে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে বাসিন্দারা জানান। সচেতনতা জাগরণ কমিটির বক্তব্য, “এই মুহূর্তে ভাগাড় নিয়ে স্থায়ী সমাধানের আশা আমরা করছি না। পুরসভা উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত যাতে সে ব্যবস্থা করে সে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের চরম সমস্যার দিকে লক্ষ্য রেখে কিছু কাজ পুরসভা করতে পারে। আমরা সে দাবিই রেখেছি।” মন্ত্রী ও মেয়র জানান, ভাগাড় থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্পের জন্য পুরসভা উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “কিছুটা সময় আমাদের দিতে হবে। ভাগাড় নিয়ে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা হয়েছে। পাশাপাশি ওই এলাকার বাসিন্দাদের দিকে লক্ষ্য রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জল ও আলোর ব্যবস্থা করা হবে।” আন্দোলনকারীদের কমিটি তৈরি করে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ভাগাড়ের স্থায়ী সমাধানের জন্য গত বোর্ড পুঁটিমারিতে জমি কিনে রেখেছে। আমরা চাই সেখানে ভাগাড় হোক।” মেয়র বলেন, “পুঁটিমারিতে ওই জায়গায় ঢোকার জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেখানেও নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবছি।” |