বাম-জমানায় এই নিয়ে দফায়-দফায় জনজীবন স্তব্ধ হয়েছে। নতুন সরকারের আমলেও সেই ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এ (জিটিএ) তরাই-ডুয়ার্সের এলাকা অন্তর্ভুক্তির দাবির বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে আজ, মঙ্গলবার ফের বন্ধের মুখে পড়তে চলেছে তরাই ও ডুয়ার্স।
এই বন্ধ ডেকেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা শিবিরের বিরোধী ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। আইএনটিইউসি-এর তরাই-ডুয়ার্সের শীর্ষ নেতারাও চা শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে ওই বন্ধ ‘সফল’ করতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। পক্ষান্তরে, বন্ধ ব্যর্থ করার হুমকি দিয়েছে মোর্চা নেতৃত্বাধীন যৌথ মঞ্চ। দু’পক্ষের সংঘাতে ঘটছে অশান্তিও। আইএনটিইউসি তরাই-ডুয়ার্সের নানা এলাকায় সোমবার বন্ধের সমর্থনে ‘মহামিছিল’ করে। যৌথ মঞ্চও পাল্টা প্রচারে নামলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ দিন বিকেলে বীরপাড়ায় বন্ধের সমর্থনে বার হওয়া প্রচারের গাড়ি যৌথ মঞ্চের লোকজন আটকে দিলে দু’পক্ষে হাতাহাতি শুরু হয়। আলিপুরদুয়ারের এসডিপিও বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনেন। |
এই পরিস্থিতিতে গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম ও চা বাগানের উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে ক্রমেই ছন্দে ফিরতে থাকা পাহাড়-সমতলের অর্থনীতি ফের বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এরই মধ্যে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন পাহাড়-সমতলের সাধারণ মানুষ। অনেকেই বলছেন, অতীতে (বাম আমলে) এ ধরনের বন্ধ-পাল্টা বন্ধ হলেও সরকারি তরফে তেমন ‘সক্রিয়তা’ দেখা যায়নি। কিন্তু, এ বার রাজ্যের তরফে নানাভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বস্তুত, সোমবার পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব শিলিগুড়িতে বসে যুযুধান দু’তরফকেই বোঝানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানসূত্র খোঁজার জন্য আবেদনও করেছেন। তাতে সাড়া দিয়ে মোর্চা বিরোধী শিবির দু’দিনের জায়গায় এক দিন (মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল) বন্ধ পালনে রাজি হয়েছে। কিন্তু, মোর্চা শিবির নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে কমিটির ডাকা বন্ধের বিরোধিতা করার হুমকি দিয়েছেন। ১৮ ও ১৯ এপ্রিল তরাই-ডুয়ার্সে বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছে মোর্চা নেতৃত্বাধীন যৌথ মঞ্চ। স্বাভাবিক ভাবেই অতীতের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে কি না, সে প্রশ্নে আমজনতার মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। শিল্পমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, “আন্দোলনের নামে উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটুক তা আমরা চাই না। দু’পক্ষকেই তা বলেছি। আমরা আশা করব কেউ অশান্তির রাস্তায় যাবেন না।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও জানিয়ে দিয়েছেন, জবরদস্তি জনজীবন বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করলে পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। গৌতমবাবু বলেন, “আমরা দু’পক্ষকেই বুঝিয়েছি। ওঁরা বুঝেছেন। আশা করব, আন্দোলনের নামে কেউ অশান্তি করবেন না।” পরিস্থিতি সামাল দিতে তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করেছে রাজ্য প্রশাসন।
বাস্তব বলছে, তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মোর্চা আন্দোলনে নামার পর থেকেই তেতে রয়েছে তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা। বছর দেড়েক আগে নাগরাকাটার শিপ চু এলাকায় মোর্চা-পুলিশ সংঘর্ষে জখম হন ২০ জন। পুলিশের গুলিতে ৩ জনের মৃত্যু হয়।
ওই অন্তর্ভুক্তির দাবি খতিয়ে দেখতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়া হয়েছে। কিন্তু, আদিবাসী বিকাশ পরিষদ-সহ ১১টি সংগঠনের ‘তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ ওই দাবির বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছে। সমর্থন করছে জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস এবং তরাই-ডুয়ার্সের আইএনটিইউসি নেতৃত্ব। ওই চা বলয়ে সিটুর সংগঠন দুর্বল হওয়ার পরে অন্যতম শক্তিশালী হল পরিষদের চা শ্রমিক ইউনিয়ন। তার পরেই রয়েছে আইএনটিইউসি-র সংগঠন।
আইএনটিইউসি বন্ধে সামিল হওয়ায় ক্ষুব্ধ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগ, “কংগ্রেস জিটিএ বিল সমর্থন করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পিনটেল ভিলেজে চুক্তি সই হয়েছে। অথচ আইএনটিইউসি বিশৃঙ্খলা তৈরিতে সামিল হয়েছে। সে জন্য কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট হওয়া দরকার। এর পিছনে সিপিএমের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে।”
আইএনটিইউসি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি অলক চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, তরাই-ডুয়ার্সের মৌজা হস্তান্তরের দাবি খতিয়ে দেখার সূচনা হতেই উত্তরবঙ্গে ফের অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সে জন্য ‘শান্তি বজায় রাখতেই তাঁরা বন্ধে সামিল হয়েছেন। |