মাসুল বৃদ্ধির আর্জি জানাতে
রাজ্যের সায় বিদ্যুৎ সংস্থাকে
বাস-অটো-ট্যাক্সির ভাড়া না বাড়ানোর যুক্তিতে অনড় থাকলেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতিই মেনে নিচ্ছে রাজ্য সরকার। রেলের পণ্য মাসুল বাড়ায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে যেমন ফের ‘ফুয়েল সারচার্জ’ বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তেমনই বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে মাসুল বাড়ানোর জন্য আবেদন করার অনুমতিও পেয়েছে তারা। সংস্থা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই তারা কমিশনের কাছে ২০১১-’১২ থেকে ২০১৩-’১৪ এই তিন বছরের গড় মাসুলের প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
রাজ্যে সার্বিক ভাবে বিদ্যুৎ মাসুল বাড়েনি ২০১১ সাল থেকে। নির্বাচন সামনে থাকায় বামফ্রন্ট সরকার বণ্টন সংস্থাকে মাসুল বৃদ্ধির আবেদন করার অনুমতি দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও গত নয় মাসে এ বিষয়ে বণ্টন সংস্থার অনুরোধ বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির লোকসানের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত গত ডিসেম্বরে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার। তার পর থেকে গত চার মাসে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। এক বার আদালতের নির্দেশ মেনে বকেয়া মাসুল বাড়ানো হয়েছে। অন্য দু’বার ‘ফুয়েল সারচার্জ’ হিসেবে দাম বেড়েছে বিদ্যুতের। এ বার বণ্টন সংস্থাকে মাসুল বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে প্রস্তাব পেশের অনুমতিও দিয়ে দিল রাজ্য।
গত কয়েক মাসে পেট্রোল, ডিজেল-সহ এলপিজি-র মতো জ্বালানির দাম দফায় দফায় বাড়লেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি ও অটোর ভাড়া এখনও বাড়াতে দেয়নি। পুরসভাগুলিকে জল কর বসানোরও অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুরসভাগুলিকেও জলকর বসাতে দেয়নি রাজ্য সরকার। উৎপাদন খরচ বাড়লেও দুধ বা পাউরুটির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও বহু বার খারিজ হয়ে গিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বাস্তব পরিস্থিতি মাথায় রেখে ঘুরপথে দুধের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে আপত্তি করেনি রাজ্য।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের মনোভাব একই রকম ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির হাঁড়ির হালের অবস্থা বুঝতে পেরে অনেকটা নিঃশব্দেই বাস্তব পদক্ষেপ করতে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
গত ডিসেম্বর মাস থেকেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে রাজ্য। এ বার কমিশনের কাছে গড় মাসুলের প্রস্তাব জমার অনুমতি দিয়ে রাজ্য সরকার আরও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিল বলেই বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশ মনে করছেন।
এ বছর বাজেট পেশের দিন কয়েক আগেই ভারতীয় রেল ২০ শতাংশ হারে পণ্য মাসুল বাড়ায়। এর ফলে কয়লার দাম বাড়বে বলে তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিদ্যুৎ কর্তারা। আর কয়লার দাম বাড়লে স্বাভাবিক ভাবেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়বে। তার জন্য জ্বালানি খরচ বাবদ ৮ থেকে ১০ পয়সা হারে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতে পারে বলে কর্তাদের একাংশ তখনই দাবি করেছিলেন। কিন্তু এত ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম রাজ্য সরকার বাড়াতে দেবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল কর্তাদের মনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জ্বালানির ওই বর্ধিত খরচ গ্রাহকদের থেকে তোলার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য। মহাকরণ সূত্রে খবর, রেলের পণ্য মাসুল বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের দাম ইউনিট পিছু গড়ে ৯ পয়সা হারে বাড়তে পারে। আর তা কার্যকর হলে বণ্টন এলাকায় বিদ্যুতের গড় দাম ৫ টাকা ৫৩ পয়সা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ৬২ পয়সা হবে বলে দাবি বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত নীতি ছিল, বিদ্যুৎ মাসুল বাড়ানো হবে না। আর সেই নীতির কারণে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম গত আর্থিক বছরে (২০১১-’১২) বিপুল লোকসানের মুখে পড়ে। অর্থনীতির নিয়মে, আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলে কোনও সংস্থাই যে চালানো সম্ভব হয় না, এই সারবাক্যটি প্রথম দিকে বুঝতেই চায়নি রাজ্য সরকার। পরে বাস্তবতা বুঝে রাজ্য নিজেদের ঘোষিত পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় রাজ্য। ভর্তুকি দিয়েও যে লোকসান ঠেকানো যাবে না, তা-ও বুঝে যায় সরকার। শেষে এক রকম বাধ্য হয়েই প্রথমে বাম আমলে (২০১০-’১১ আর্থিক বছরের) বণ্টন সংস্থার পাওনা মাসুল বাড়ানোর অনুমতি দেয় রাজ্য। পরে দু-দফায় জ্বালানি খরচ বাড়ানোর ব্যাপারেও অনুমতি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর থেকে এ বছর মার্চ মাসের মধ্যে, অনেকটা নিঃশব্দেই বণ্টন এলাকায় মাসুল ও জ্বালানি খরচ মিলিয়ে ইউনিট পিছু বিদ্যুতের মোট দাম বেড়েছে ১ টাকা ২৬ পয়সা। যার ফলে বণ্টন এলাকায় গ্রাহকদের ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৫৩ পয়সা। সিইএসসি এলাকাতেও দাম বাড়ার পর ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বেড়ে গড়ে ৫ টাকা ৮৮ পয়সা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.