|
|
|
|
আজ বিশেষ সহায়তাও চাইবেন মমতা |
যোজনা বরাদ্দে রাজ্যের দাবি মানার ইঙ্গিত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার বৈঠকের আগে রাজ্যের যোজনা বরাদ্দের দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত মিলল। একই সঙ্গে জানা গিয়েছে, রাজ্যকে ঋণের ফাঁদ থেকে বের করে আনতে আগামিকালের বৈঠকে বাড়তি বিশেষ সহায়তার দাবি জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের যোজনা আয়তন নির্ধারণের বৈঠকে যোগ দিতে আজ সন্ধ্যায় দিল্লি এসে পৌঁছন মমতা। তিনি আসার আগেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, পরিকল্পনামন্ত্রী মণীশ গুপ্ত, তাঁর দফতরের সচিব জয়া দাশগুপ্ত-সহ রাজ্যের প্রায় দু’ডজন প্রতিনিধি আজ সকাল থেকে দফায় দফায় যোজনা কমিশনের আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
গত আর্থিক বছরে রাজ্যের যোজনা আয়তন ছিল ২২,২১৪ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ সালের জন্য তা ১১.৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২৪,৮০০ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে কমিশনের রিপোর্টে। রাজ্য সরকার চায় বরাদ্দ ১৬ শতাংশ বাড়ুক। সেটি কী ভাবে সম্ভব, আজকের ম্যারাথন বৈঠকে সেই পথের সন্ধান দেওয়া হয় কমিশনকে। কমিশনের আমলাদের রাজ্য সরকারের কর্তারা বোঝান, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহ করা ও পিছিয়ে পড়া এলাকায় উন্নয়নে জোর দিয়ে সেটি সম্ভব। যোজনা কমিশন সূত্রের মতে, পিছিয়ে পড়া এলাকায় বাড়তি এক হাজার কোটি টাকার বরাদ্দে তাদের খুব বেশি আপত্তি নেই। জঙ্গলমহল, সুন্দরবন, দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের মতো অনগ্রসর এলাকাগুলিকে বেশি জোর দিতে চাইছেন মমতা।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম আজ মহাকরণে বলেন, “সিকিম বা হিমাচলপ্রদেশের মতো রাজ্যে উন্নয়নের কাজে কেন্দ্র ৯০ শতাংশ অর্থ দেয়, রাজ্য দেয় মাত্র ১০ শতাংশ। অথচ দার্জিলিং পাহাড়ি এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার উন্নয়নে কেন্দ্র দেয় মাত্র ৬৫%। আমরা এটা বাড়িয়ে ৯০% করার দাবি জানাব।” উল্লেখ্য, যোজনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অমিত মিত্র, মণীশ গুপ্ত ছাড়াও ববি এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন।
রাজ্যের দাবি সম্পর্কে কমিশনের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত যে তথ্য পেশ করা হয়েছে, তা যথেষ্টই যুক্তিগ্রাহ্য। রাজ্যের সম্পদ সংগ্রহের ক্ষমতা পর্যালোচনা করে মন্টেকের সঙ্গে মমতার বৈঠকেই যোজনা আয়তন চূড়ান্ত হবে। মমতার সঙ্গে মন্টেকের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে কাল আবার অন্য মন্ত্রী ও আমলারা কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে চলতি আর্থিক বছরে সামাজিক ক্ষেত্রেই সব থেকে বেশি জোর দিতে চাইছেন মমতা। কমিশনের নথি অনুযায়ী, এই ক্ষেত্রে ১২,২৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা সম্ভব। তার মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জল সরবরাহ, আবাসন, নগরোন্নয়ন, তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়ন সামিল রয়েছে। মোট বরাদ্দের অর্ধেকই এই সব ক্ষেত্রে চান মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি, জওহরলাল নেহরু জাতীয় নগর পুনর্গঠন প্রকল্পের বরাদ্দ আড়াইশো কোটি টাকা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্যকে ঋণের ফাঁদ থেকে বের করতে মমতা কমিশনের কাছ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ সহায়তা চাইতে পারেন।
পুরমন্ত্রী আজ জানান, ভূগর্ভের জল ব্যবহারের জন্য বহুজাতিক পানীয় সংস্থা ও পাঁচতারা হোটেলের কাছ থেকে আলাদা জলকর নেওয়া, গঙ্গা অববাহিকা প্রকল্পের মধ্যে বাগজোলা, কেষ্টপুর, টালি নালাকে নিয়ে আসার বিষয়েও যোজনা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “পানীয় বানানোর জন্য বহুজাতিক সংস্থাগুলি মাটির নীচের জল ব্যবহার করে। আগামী ২০ বছর তাদের কী পরিমাণ জল লাগতে পারে তার একটা হিসেব জমা দিতে বলা হবে। সেই মতো জলাধার তৈরি করা হবে। এর জন্য সংস্থাগুলি জলকর দেবে। একই ভাবে জলকর দেবে পাঁচতারা হোটেলগুলিও। সেই টাকা ছোট শহরে পানীয় জল সরবরাহে ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে।”
এ দিকে, বাম জমানায় যে সব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, তার অনেকগুলিই এখনও ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয়নি বলে কমিশনের রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নথি বলছে, একশো দিনের কাজের মতো বড় প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ এখনও জাতীয় গড়ের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ফি-বছর কমিশনের বৈঠকে এসে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উপরে জোর দেওয়ার কথা বললেও সে কাজে অগ্রগতি হয়নি। অন্য ক্ষেত্রগুলির অবস্থাও তথৈবচ। অপচয় রোধ হয়নি, নজরদারি ঠিকমতো হয়নি। এই অবস্থায় দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকীর প্রথম বছরে যোজনা আয়তন নির্ধারণের সময় কমিশন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে চাইছে। |
|
|
|
|
|