এসেছিলেন নিহত দলীয় কর্মীর পরিবারের খোঁজখবর নিতে, তাঁদের সান্ত্বনা দিতে। সেখান থেকে বেরিয়ে এক জনসভায় দলীয় কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনায় তৃণমূলকেই দায়ী করলেন রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভাপতি ও সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। বললেন, “শান্তির সূর্য উদয় হবে বলে আমরা যৌথ ভাবে লড়াই করেছি। কিন্তু এখন শুধু খুন, সন্ত্রাস আর রক্ত। বেছে বেছে যুব কংগ্রেস কর্মীদের খুন করা হচ্ছে। আগে সিপিএম যা করত এখন তৃণমূল সেটাই করছে। মনে রাখতে হবে কংগ্রেস সঙ্গ না দিলে কোনওদিনই তৃণমূল ক্ষমতায় আসতে পারত না।”
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে সোমবার এ ভাবেই তৃণমূলকে বিঁধলেন মৌসম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সারা ভারত যুব কংগ্রেসের সাদারণ সম্পাদিকা দীপিকা পাণ্ডে, অসিত মজুমদার, কৃষ্ণা মজুমদার, সুস্মিতা চটোটপাধ্যায়, অভীক মজুমদার প্রমুখ। এ দিন বিকেলে বসিরহাট স্টেশন সংলগ্ন রাজীব কলোনিতে নিহত কংগ্রেস কর্মী পরিমল সর্দারের বাড়িতে যান মৌসম। গত ১৭ মার্চ, শনিবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বসিরহাট স্টেশনের কাছে গল্প করার সময় বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পরিমলবাবুকে দুষ্কৃতীরা বোমা ও গুলি মেরে খুন করে। |
এ দিন পরিমলের স্ত্রী টুম্পাদেবীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আলাদা করে কথা বলেন মৌসম। মৌসমকে দেখেই দুই ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন টুম্পাদেবী। পরিমলবাবুর বাবা দুলাল সর্দার ও মা ছায়ারানি সর্দার সেদিনের ঘটনার কথা জানান মৌসমকে। এ দিন পরিমলবাবুর পরিবারের হাতে কিছু আর্থিক সাহায্য তুলে দেন ও সেইসঙ্গে টুম্পাদেবীর চাকরির ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মৌসম। তিনি বলেন, “যে ভাবে পরিমলবাবুকে খুন করা হয়েছে তা আমরা ভালচোখে দেখছি না। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত। জোটে থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে আমাদের দলীয় কর্মীরা খুন হচ্ছেন সে বিষয়ে তৃণমূলের হাইকমান্ডকে বলেছি। দিল্লিতে আমাদের হাইকমান্ডকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
তৃণমূলের পাশপাশি এ দিন পুলিশ-প্রশাসনকে একহাত নেন মৌসম। তিনি বলেন, “একটি ছেলে খুন হল। এগারো জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হল। অথচ মাত্র তিনজনকে ধরার পর পুলিশের ভূমিকা নীরব দর্শকের মতো। এ ভাবে চললে আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকেরা বসিরহাট স্তব্ধ করে দেবেন।” তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে সরকারের পরিবর্তন হলেও পুলিশের ভূমিকা একই থেকে গিয়েছে। পরিমলবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টেশন লাগোয়া দলীয় অফিসের সামনে এক সভায় তৃণমূলের উদ্দেশে মৌসম বলেন, “উন্নয়ন করে মানুষের মন জয় করুন। আপনারা যদি মনে করেন এই ভাবে আমাদের কর্মীদের খুন করে সংগঠন বাড়াবেন তাহলে ভুল ভাবছেন। এ রাজ্য থেকে তৃণমূল মুছে যাবে।” তাঁর দাবি, তৃণমূল বেছে বেছে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দলে নিচ্ছে। তারাই কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের খুন করছে। এই সব দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করে দল থেকে বের করে না দিলে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
দীপিকা পাণ্ডে বলেন, “এ রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় যুব কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে। তবুও রাহুলজী বলেছেন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে হবে। হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই।” পাশাপাশি তিনি পুলিশের সমালোচনা করে বলেন, “কিন্তু পুলিশ যে ভূমিকা নিচ্ছে তাতে আন্দোলন আর শান্তিপূর্ণ থাকবে না।”
আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁরা জোট নাকি আলাদা লড়বেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে মৌসম বলেন, “কর্মীদের আওয়াজ দিল্লিতে হাইকমান্ডকে জানাব। হাইকমান্ডই এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যে ভাবে রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস বাড়ছে তা মানুষ ভালচোখে দেখছেন না।” |