শহরের উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিগত দানের ৮ কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে বহরমপুর পুরসভার বর্তমান ও প্রাক্তন দুই প্রধানের মধ্যে কাজিয়া এখন তুঙ্গে। যুযুধান দু’ পক্ষের এক জন পুরপ্রধান কংগ্রেসের নীলরতন আঢ্য। অন্য জন প্রাক্তন উপ-প্রধান ও বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নন্দী। বিবাদের হেতু শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভাগীরথী নদী ও কাজি নজরুল ইসলাম সরণি লাগোয়া প্রায় পৌনে ৮ বিঘা একটি জমি। শহরের খাগড়া এলাকায় কপিলের মাঠ নামে পরিচিত ওই জমির বর্তমান বাজারদর প্রায় ৮ কোটি টাকা। সেই জমির ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে নীলরতনবাবু ও প্রদীপবাবুর বিরোধ এমন জায়গায় পৌঁছিয়েছে যে গত শুক্রবার ও রবিবার দু’ দু’টি পাল্টা নাগরিক সভা করেছেন দুই নেতা। তাতে অবশ্য বিবাদ কমেনি, বরং বেড়েছে। |
জমিটি আদতে বহরমপুর পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর বৈদ্যনাথ ঘোষালের। তাঁর মৃত্যুর পর ওই জমির মালিকানা বর্তেছে তাঁর ব্যবসায়ী পুত্র কাঞ্চন ঘোষালের। ওই মাঠের ৭৯ শতক অর্থাৎ প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে রয়েছে খেলার মাঠ। এক সময়ে নিয়মিত যেখানে ‘কপিল-নির্মল-সুখদেব স্মৃতি শিল্ড’ প্রতিযোগিতা হত। স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আর স্থানীয় ছেলেমেয়েদেররে খেলার মাঠ হিসেবেই যা পড়ে রয়েছে এখন। জমির বাকি অংশে ডি এন সেন কলোনি। ওই বস্তির বাসিন্দা ৯০টি পরিবার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ওই জমি সম্প্রতি বহরমপুর পুরসভাকে দান করেন কাঞ্চনবাবু। তিনি বলেন, “জমিটা জনস্বার্থে দান করার কথা ভেবেছিলাম। সেই মতো বহরমপুর পুরসভার উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যবহারের জন্য দান করেছি। উন্নয়ন মূলক কাজে ওরা ব্যবহার করবে।” দান পর্বের পরেই ওই মাঠে রাজনৈতিক রং লেগেছে। নীলরতনবাবু বলেন, “খেলার মাঠ আগের মতোই থাকবে। বাকি অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বস্তি উচ্ছেদ করে বহুতল আবাসন তৈরি করা হবে। আবাসনে বস্তিবাসীদের পুনবার্সন দেওয়া হবে। বাড়তি জায়গায় পুরসভা পরিচালিত মাতৃমঙ্গল ও শিশুমঙ্গল হাসপাতাল গড়ার কথা ভাবা হয়েছে। ঘোষাল পরিবারের নামেই হবে সেই হাসপাতাল।” বস্তি উচ্ছেদের কথা শুনেই বেঁকে বসেছেন প্রদীপবাবু। তিনি বলেন, “খেলার মাঠ ইতিমধ্যেই ‘অনুমতি দখল’ হিসাবে সরকারি খাতায় রয়েছে একটি ক্লাবের নামে নথিভূক্ত রয়েছে। ফলে ওই জমি হস্তান্তর হতে পারেন না। ওই জমির মলিকানা বহরমপুর পুরসভাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। না দিলে জনস্বার্থের মামলা করা হবে।” যা শুনে নীলরতনবাবুর জবাব, “আইনি পরামর্শ মেনেই ওই জমি দান হিসাবে নেওয়া হয়েছে। মামলা করতে চাইলে করুক।”
অন্য দিকে ওই বস্তিতে প্রায় চার দশক ধরে বসবাস করছেন ৯০টি পরিবার। তাঁদের ‘জেহাদ’, “ফ্ল্যাট বাড়ির নম করে আমাদের উচ্ছেদ করা চলবে না। ওই জমি আমাদের লিজ অথবা পাট্টা দেওয়া হোক।” |